মনে পড়ে মোর বাল্যবেলায় অভাবী সংসারে
মামাবাড়িতে গেল মোরে লয়ে কষ্ট সংহারে।
মামাবাড়িতে রাখিয়া আমায় তাইতো বাপে ফেরে
দুজনের চোখে অশ্রু ঝরে মায়া আর প্রেমডোরে।
খেলাধুলা আর স্কুল মিলে সময় বহে যে বাটে
সন্ধ্যা হলেই বুকের কোণে কি এক পোকায় কাটে।
পোকাটা বুঝি ভালোবাসায় বেদনায় ভরে মন
ঘরের কোণে চেয়ারে বসি খুঁজি তাই কোন জন।
কিচিরমিচির রবরব রবে পাখিরা ফেরে ঘরে
শুধু আমি থাকি দূরেতে পড়িয়া আনচান মন করে।
হঠাৎ একদিন আসিলে বাবা খুশিতে মনটা নাচে
তোলপাড় করি সারাবাড়ি আর গোলাভরা মাচে মাচে।
বেশি খুটবুট করিয়া শেষে ধানভরা এক মড়াই
আমারে লইয়া আছড়ে পড়ে মাটিতে গড়াই গড়াই।
খালি গায়ে মোর কাটিয়া কুটিয়া হইল একাকার
নানা, মামা, বাবা সবাই আসিয়া করিল হাহাকার।
স্যাভলন আর তুলা লাগিয়ে আমায় রাখিল শুয়ে
ক্ষণপরে বাপ যেতে চাহে বাড়ি আমায় একলা থুয়ে।
কথাটা শুনিয়া কিযে ব্যথা বাড়ে ভাবিতে চাহি না আর
ক্ষতগুলোর ব্যথা দমিয়ে তাহা জাগে যে বারে বারে।
যাইবার কালে বাপটা আবার আমায় কহিল ডেকে
"বাড়ির গাছের আম দিব তোরে সামনের হাঁট দেখে।"
প্রহরের দিন গুনিয়া শেষে আসিল হাঁটবার
যাব আমি হাঁটে কাঁদিয়া কাঁদিয়া কহিলাম বারবার।
অবশেষে বেজাড় মামাটা আমার আনিল মোরে হাঁটে
খুঁজে ফিরি আমি বাপের মুখটা হাজার লোকের পাটে।
হঠাৎ দেখিলাম আমার বাপে মরিচ বেচিছে যেন
ঐতো কোঁকড়া চুল দেখি আর সাইকেল পেছনে হেন।
দৌড়াইয়া তাই জাপটে ধরি যে বাপের কোমরখানি
ক্ষণবেলা বাপ আমায় দেখিয়া হাসিল মুচকি জানি।
সারা হাঁটবেলা সদাই মিষ্টি খাইয়ে আমায় পর
ব্যাগ ভরা আম হাতে দিয়ে বলে ফিরে যাও নানা ঘর।
এবার আমি গোঁ ধরিলাম বাড়ি যাব তোমা সাথে
আমারে রাখিয়া যাইলে কিন্তু কাঁদিব রাতে রাতে।
ক্লেশকর মুখ, জলভরা আঁখি দেখিয়া আমার জনক
ব্যাগ ভরা আম মামা হাতে দিল নড়িল যেন টনক।
"কত আর তারে এভাবে আমি কষ্ট দিব রে বল
আজকে আমার সাথেই চলুক আমার আপন ছল।"
সাইকেলেতে বসাইল মোরে মরিচ ভরা ঝাইলে
গামছাটা তার বিছিয়ে দিল কষ্ট লাগিবে বলে।
একখানা রুটি খেতে খেতে আমি বসেছিলাম গদি পর
সাইকেল চালায় চলেছিল বাপ, বীরবেশে মম ঘর।