আপন গাঁয়ের আলো হাওয়া আপন বাটির ঘ্রাণ
চক্ষু জুড়ায়, শরীর জুড়ায় সরস করে প্রাণ।
সারা বেলা তাইরে নাইরে খাওয়ার সময় নাই
মায়ের শাসন, বাবার আদর সদাই সয়ে যাই।
ঝড়ো হাওয়া বইলে পরে আম কুড়াতাম খুব
সকাল বিকাল পুকুর মাঝে মাছের মতই ডুব।
বন্ধুবান্ধব মিলেমিশে মজা হইত কত
চিরিক-ভদন, গোল্লাছুট আরো খেলা শত।
শীত বর্ষা গ্রীষ্ম কালের হরেক স্মৃতি ভাই
আজো আমায় ছোট্ট বেলায় হেঁকে ডেকে যায়।
মনে পড়ে স্মৃতির পাতায় ছোট্ট বোনের কথা
ধবল গায়ের বোনটি তখন চোখে কইত কথা।
কোলে নিলেই মিষ্টি হেসে থাকত সদা চেয়ে
দেখতে ছিল পরীর মতন ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে।
ছোট্ট আমি তাইতো তারে কোলে নেওয়া ভার
দোলনাতে তাই শুইয়ে রেখে দেখতাম মুখ তার।
দেখতে দেখতে বোনটি আমার থাপুর থুপুর পায়
হাঁটে, দৌড়ায় দু'হাত মেলে ভাইয়া ভাইয়া গায়।
নানার বাড়ি ভুলে পরে বাপের বাড়ি এসে
বাবা-মা বোনটি পেয়ে কাটছিল হেসে হেসে।
হঠাৎ একদিন মেজো মামা আসল মোদের বাটে
স্কুল খোলা পরীক্ষা হবে যেতেই হবে সাথে।
ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া আমি এত্ত ছোট্ট বেলা
আপন ঘর, গাঁ ছাড়ি কেমনে ভাসাই ভেলা।
কান্না জুড়ি যাব না তো আবার নানা বাড়ি
এই গাঁয়েতে অন্য স্কুলে দাওনা ভর্তি করি।
মাও তখন বলল মোরে যা না এবার ওরে
ফি বছরে এই গাঁয়েতে আসবি আবার ডোরে।
এই গাঁয়েরি নতুন স্কুলে ভর্তি হবি তুই
বাড়ি থেকেই যাবি আবি ক্লাস হবে দুই।
মায়ের কথা শুনে তখন মনটা হল ভার
এই বেলাটা থেকেই যাই আসব কবে আর।
ছুটনু আমি বাড়ি থেকে সরু আইল ধরি
দুই ধারে দুই সবুজ শ্যামল ফসল ভরি ভরি।
দু'হাত তুলে পাখির মত চক্ষু দুটি মুদি
ভাবতে থাকি পাখি হয়ে উড়ে যেতাম যদি।
হঠাৎ শুনি ভাইয়া ভাইয়া আওয়াজ আসে হেঁকে
ছোট্ট বোনটা লাল ফ্রকে ছুটছে ডেকে ডেকে।
বোনটা আমার পাশে এসে বলল ধীরে ভাই
আমায় ছেড়ে কোথায় যাও ভাইয়া তো আর নাই।
চোখের কোণে অশ্রু নিয়ে বলনু- তোরে ছেড়ে
যাচ্ছি আমি নানার বাড়ি যা না ঘরে ফিরে।
এই কথা পর দৌড়ে আমি অনেক দূরের বাঁকে
লুকিয়ে র'লাম চুপটি মেরে ধানগাছেরি ফাঁকে।
বোনটা তখন ডাকে হাঁকে ভাইয়া ভাইয়া রবে
কিন্তু সে ডাক বিলীন যেন সবুজ শ্যামল ভবে।
কোন সাড়া না পেয়ে সে ফিরতি পথ ধরি
গুটি গুটি পায়ে চলে মলিন বদন ভরি।
ছুটনু আমি পেছন থেকে পাখির মত উড়ে
দু'হাত মেলে জাপটে ধরি বোনকে আদর করে।
কেঁদে কেঁদে বোনটা বলে কেনবা হারায় যাও
ভয় যে লাগে আমার খুবই আমায় কোলে নাও।
ছোট্ট আমি সেও ছোট কোলে নিতে না পারি
ছোট্ট হাত তার, হাতে পুরে হেঁটেই দেই পাড়ি।
এমনি করে সকাল গড়ে বিকেল এলে ভাই
যাবার জন্য ত্বরা অনেক মামার সময় নাই।
অবশেষে মামার সাথে আমার ফেরার পালা
ভালোবাসারর কষ্ট তখন টিপেই ধরে গলা।
চোখের পানি ফেলি ফেলি বারেক ফিরে চাই
বাবা মা আর ছোট্ট লালে বোনকে দেখতে পাই।
বোনটা আমার কাঁদল অনেক ভাইয়া ভাইয়া বলে
শুনে শুনে পরান আমার যাচ্ছিল যেন গলে।
চলতি পথে অনেক দূরে পথের বাঁকে খাড়ায়
তাকায় দেখি একটি ছায়া তখনো আছে দাঁড়ায়।
টুকটুকে লাল ছায়ামূর্তি হয়ত ভাবছে ত্বরায়
ভাইয়া আমার আসবে আবার ধরবে আমায় জড়ায়।