গ্রামদেশেতে পুরুষ বিনে মেয়েদের চলা দায়
একা মেয়ে কোন পথ চলে নাতো বিপদ আসিবে তায়।
যুবতী মেয়েরা বখাদের ভয়ে সঙ্গে কাউকে নেয়
ছোট হোক সে যত না ছোট, তবুও সাহস পায়।
মুখ চোখ ঢেকে নেকাব পড়িয়া যদি পথে চলে নারী
বখারা তাদের ঘাটায় নাকো চেহারা বুঝতে নারি।
কিন্তু উঠতি মেয়েরা বড় বদন দেখাতে প্রিয়
নেকাব তো দূর শরীরও ঠিক ঢাকতে চায় না কেহ।
যা হোক সেসব ঐ কালেতে আমার বড় কাজিন
ছোট্ট আমায় সঙ্গে নিয়েই চলত প্রতিটা দিন।
লোকে সব তাই হেসে হেসে কহে আরে রহিম রুব্বান
লাজে আমি মরি তবু পথ চলি শুনিয়াও করি ভান।
ব্রাক স্কুলের পাঠাগার ছিল বিষ্যুদবারের বিকেল
পুরাতন সব ছাত্রী সেথায় জমাত তাদের খেল।
কেরাম লুডু আরো কত খেলা খেলত তারা বসে
কেউবা শুধুই বই পড়িত মনের দুয়ার খসে।
শুধু এক ছেলে এইতো আমি সংগ দিতে তারে
লাজ-টাজ ভুলি বই পেতে সাথে- যেতাম প্রতিবারে।
শর্ত মেনেই প্রথম দু'দিন বই পড়িতাম বেশ
বাকি ক'দিন ধরে কাজিন আমার পড়িয়া করিত শেষ।
এমনি করিয়া যাচ্ছিল ভালোই মোদের দিন গড়ি
আপুটা আমার এইটে আর আমি টুতেই পড়ি।
প্রতিবেশি এক মামা ছিল মোর নামটা ছিল রফিক
মাঝে মাঝেই তারে দেখতাম আমি চাচার বাড়ির দিক।
নতুন ক্লাসে নতুন বইয়ে মলাট লাগাইবার তরে
আনত ডাকিয়া রফিক বেটারে ডাকিয়া চাচার ঘরে।
কহিতাম আমি লায়লা আপু কেন তুমি তারে ডাক?
আমি আর তুমি দুজনই পারি মলাট লাগাতে দেখ।
মলাট লাগাতে শিখিয়েছে মোরে ব্রাক স্কুলের আপা
ডেকনা আর রফিক মামারে হইব কিন্তু খ্যাঁপা।
হঠাৎ পড়িল মলাট পরে 'আর' প্লাস 'এল' লেখা
ছ্যাত করে ওঠে বুকের পাজরে একি সত্যিই দেখা।
কহিলাম আমি বইয়ের পরে কিসব লিখেছ হেন
চাচীরে এসব কহিব আর চাচারেও ক'ব জেনো।
আপুটা আমায় আদর করিয়া বলিল কাছে ডাকি
রোজিনা আমার আরেক নাম তাইতো এমন লেখি।
কি বুঝ বা দিল এই আমারে মন তবু না মানে
দাদা কহেছিল নাজায়েজ এসব যেজন ধর্মপ্রাণে।
আপুর সাথে সাথে প্রায় বিকেলে যেতাম পুকুর পাড়ে
বিশাল সে পুকুর 'কানার পুকুর' কড়ই সারে সারে।
বুঝিলাম আমি যখন হেরিলাম আমায় একলা রেখে
রফিক্যার লগে কথা কহে সে আমারে দেখে দেখে।
কত মানা করি ওরে ও আপু এসব নাহি করো
চাচাচাচী জানিলে বিপদ হইব হইব গুরুতর।
কিন্তু সে তো মানতে না চায়, এসব কিছু না!
দেখা হল তাই কথা কহিলাম আর তো কিছু না।
কহিলাম আমি গাছ পাণে চেয়ে এসব কি তব বলো?
বইয়ের মলাটে গাছের ললাটে 'আর' প্লাস 'এল' কেনো।
প্রতিটা গাছে খোদাই করিয়া এই কথাটি যে লেখা
বুঝাও আমায়? ছোট্ট যদিও এসব টিভিতে দেখা।
কহিল মোরে আপুটা আমায় কাউকে ক'বি না ভাই
আজ থেকে আমি ভুলিলাম সব এসব মাথায় নাই।
কহিলাম আমি মুচকি হাসিয়া এবার চলো ফিরি
সন্ধ্যা হলেই আসিলাম ফের দা হাতে ঘুরি ঘুরি।
কুপিয়ে কুপিয়ে প্রতিটা গাছের খোদাই লেখাগুলো
ধ্বংস করিলাম নষ্ট করিলাম এসব চোখের ধুলো।
হেরিল যখন রফিক মিয়া পুকুর পাড়ের গাছ
বাবা সোনা কয়ে কহিল আমায় কে করিছে এমন কাজ?
কহিনু আমি নিজেই করেছি কেনবা ফালতু লেখেন
ভুলে যান এসব যত আছে মনে অন্য পথ দেখেন।
রাগে সেতো হল অগ্নিশর্মা বকিল আমায় শত
কানার বেটাদেরে নালিশ করিল মিথ্যা মিলিয়ে কত।
ফটিক বেল্লাল কানার বেটারা তারাও বকিল মোরে
বাপ মার কাছে ফের নালিশ এল আমার নামটা ধরে।
মারিল তখন মা যে কষে কষে বেদম পিটুনি আমায়
করেছি এমন কাজ কেন আমি, যাইনি কেন জানায়?
আপুর প্রতি দরদের টানে মুখ বুঝে সহ্য করি
এমনিই কেটেছি গাছগুলো মা! মাফ করো পায়ে পরি।
সেদিন থেকে রফিক্যার লগে মোর কথা সব শেষ
দেখা হলে শুধু গোমরা মুখে থাকিত বেজার রেশ।
তাদের এ প্রেম মানতে পারিনি ঈমানের কথা ভেবে
মানসম্মান সামাজিক স্থান না যায় যেন দেবে।
মাস কয়েক পর আপুটার বিয়ে মামাটা বড় বেজার
খুশিতে আমি নাচি আর ঘুরি মেলিয়া হৃদয় দ্বার।
শুনিয়া এসব রফিক মিয়া আসিল ক্ষণ পরে
কথা কহিল আমার সাথেতে দরদ ভরা স্বরে।
ভাঁজ করা চিঠি দারুণ সে ভাঁজ দিয়া কহিল বাবা
দয়া করে এই শেষ চিঠি নিয়ে লায়লারে একটু দিবা।
কষ্ট ভরা মলিন সে মুখ দেখিয়া কহিনু খুঁজে
সুযোগ বুঝিয়া চিঠিটা দিব আপুর হাতে গুঁজে।
চিঠিটা পেয়ে ক্ষণপর আমি পুকুর পাড়ে গিয়ে
এক নিঃশ্বাসে পড়িলাম সব গাছের আড়াল নিয়ে।
কষ্টভরা অনেক কথাই লেখা ছিল ঐ খতে
কষ্ট নিংড়ানো প্রেমের কাব্য হইল বুঝি ফতে।
বিয়ের মজলিসে বোনকে নিয়ে বান্ধবীরা তার কত
সাজিয়ে তারে টুকটুকে বউ বানাতে রইছে রত।
এক ফাঁকে আমি তার কাছে গিয়ে ফিসফিস কানে কহি
রফিক মামা শেষ চিঠি দিল মুখটা বেজার রহি।
চিঠিটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়িল আমার আপু
নয়নাশ্রু ঝরে বার বার ঝরে বাজাল দুখের ভেপু।
বলিল মোরে চিঠিটা তুই পড়েছিস খুলে ভাই
যেমন ভাঁজ থাকার কথা তেমন তো আর নাই।
কহিলাম আমি পড়েছিতো বেশ ভালই করেছি তাতে
উল্টাপাল্টা লিখলে কিন্তু চিঠিটা হইত ফতে।
কান্নাভরা কণ্ঠে আপুনি বলিল এবার নে
চিঠিটা ছিড়ে টুকরো করে পুকুরে ভাসায় দে।
ছিড়ে কুটি কুটি চিঠিটা ফেলি কানার পুকুর মাঝ
ভাবি মনে মনে এভাবেই বুঝি প্রেমের সমাধি আজ।