মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল
বাসর হবার আগেই স্বামীটা মারা গেলো
মেয়েটা তখনও স্বামীর মুখ দেখেনি
কথাও হয়নি কখনো
কিন্তু সবাই তাকে অপয়া বানালো
তার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে অন্ধগলির পথ দেখাতে চাইলো
মেয়েটা এখনও নষ্ট হয়নি
তবে মাথাটা নষ্ট হয়ে এখন সে পাগলা গারদে
কিন্তু যে সমাজ তাকে নষ্ট বানাতে চেয়েছে
সে সমাজে পচন ধরেছে
আর নষ্ট হয়েছে সে সমাজের মানুষ |



স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে
একদিন দেখলাম আমার স্বপ্নটাই মরে গেছে
মৃত স্বপ্নটা একটা দামি কাঠের কফিনে বহন
করে চলেছে একদল স্বার্থপর মানুষ
যাদের একদিন আমি স্বপ্নবাজ বানিয়েছিলাম
এখন ওরা বলছে লোকটা মরেছে
খুব ভালো হয়েছে
আমরা এখন স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা করতে পারবো
স্বপ্নকে বাণিজ্যিক পণ্য বানিয়ে ছাড়বো
একদিন স্বপ্ন বিক্রি হয়ে গেলো
এখন আর মানুষ স্বপ্ন দেখেনা |



হঠাত করেই আগুনে পুড়ে গেলো
একটা শহর
কেউ আর বেঁচে নেই
বেঁচে আছে কিছু স্মৃতি, দুঃসহ ইতিহাস
আর আগুনে পোড়া গণকবর
এটা দিয়াশলায়ের আগুন ছিলোনা
এটা ছিল মানুষের মনের জিঘাংসার আগুন
তবে যারা হিংসে করেছিল আগুন তাদেরও
মৃত্যু থেকে নিস্তার দেয়নি
এখন সেখানে ভুত প্রেতাত্মাদের বসবাস
তবে কোথাই যেন শুনেছি সেখানে
আমার নতুন করে জন্ম নিচ্ছে
জীবন
যেটা অনেকদিন ঘুমন্ত ছিল নিঃশব্দে |



একটা লোক সারাজীবন
কষ্ট পেয়েছে
জন্মের সময় বাবা মা দুজনেই মরেছে
এরপর বিয়ের রাতে বউ
এখন লোকটা নিজের মৃত্যুর দিন ক্যালেন্ডারে পাগলের
মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে
কিন্তু বাস্তবতা হলো লোকটাও বেঁচে নেই
অনেক আগেই মরে গেছে
এখনও তার অতৃপ্ত আত্মাটা সময়ের সাথে ঘুরছে
কিন্তু তার মৃত্যুর খবর পায়নি |



একজন নারীর কথা বলছি
দুঃখিনী পাহাড় ভাঙা নদীর মতো নারী
বিয়ে হয়েছিল জমিদারের একমাত্র ছেলের সাথে
কিন্তু কখনো গর্ভধারণ করতে পারেনি
একদিন লাথি মেরে স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দিলো
তার অক্ষমতার দোহায় দিয়ে
রাস্তায় মেয়েটা দুর্বৃত্তদের গণধর্ষণের শিকার হলো
গর্ভে পাপের সন্তান এলো
মেয়েটা অনেক কাঁদলো
তারপর সন্তান নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিলো
আর জমিদারের একমাত্র সন্তান এভাবে একটার পর একটা
নারীকে নষ্ট করে চলেছে
দোষ সব নারীদের, পুরুষের অক্ষমতা এখন
পেশিশক্তির দখলে |



আমি জানিনা আমি ভুল দেখছি কিনা
যে মানুষকেই দেখি
তার বাহিরটা দেখিনা
ভিতরের অন্তঃসারশূন্য কংকালটাই দেখি
সেটা দেখা যে কত ভয়ংকর কেউ যদি না দেখে
তবে তা বোঝার ক্ষমতা তার নেই
তবে এতটুকু বলবো সেটা না দেখলেই ভালো
এখন আমার দিকে তাকালেও আমার
নিজের দুর্বল কংকালটাই দেখি
চশমা কিনবো ভাবছিলাম
কিন্তু যে চশমাটা পেলাম তা নাকি
হাজার বছর আগের একজন দুর্ধষ
ডাকাতের চশমা
যে একটা নয় শত শত খুন করেছে
আমি চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেলতে চেয়েছিলাম
কিন্তু এখনো পারিনি
আর এখন মানুষ নয় কংকাল দেখি |



একটা পরিবার
ইংরেজ সাহেবরা তখন নীল চাষ করাবে বলে
ওদের প্রচন্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপ দিলো
খুব গরিব ছিল ওরা
নীল চাষ করতে চায়নি
ফলে ওদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল
অনেকদিন ওদের পোড়া মুখগুলো মাটিতে পড়েছিল
বোবা ছিল কিন্তু কি যেন বলতে চেয়েছিলো
যদি সেখানে যেতে পারো তাদের বোবা মুখগুলো
এখনও দেখবে
তবে এখন নাকি সে মুখেও কথা ফুটেছে
আর মুখগুলো টেমস নদীর তীরে কাদের
অন্য ভুবনে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করছে
খুব রহস্য, হয়তো অনুদঘাটিত
কিন্তু ঘটনাটা মিথ্যে নয়
অসমাপ্তও নয় |