আজ অনেকটা বছর পর বুঝতে পারছি গবেষণা একটা বিরাট শক্তি। যেটার জন্ম হয় উদ্ভাবন থেকে। উদ্ভাবন মানে আমি একটা নতুন, ফালতুও বলা যায়, এমন আইডিয়া চিন্তা করছি। সেটা কাল্পনিক হতে পারে আবার বাস্তব ধারণা থেকেও হতে পারে। সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলো ছোটবেলায় খুব বেশি পড়তাম। তখন মনে হতো এটা কি কখনও সম্ভব। লেখক নিশ্চিতভাবে অসম্ভব কিছু ভাবছে। এখন বুঝি, লেখক বিজ্ঞান জানত না, গবেষণা বুঝত না; কিন্তু তার মধ্যে এমন সব অদ্ভুত ধারণা ছিল, যেটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভেবেছে। ভাবতে হয়েছে। তার মানে লেখক বিজ্ঞানকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের ব্যস্ত রেখেছে। একটু একটু করে লেখকের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করেছে। কী বিস্ময়কর ব্যাপার, লেখকের উদ্ভাবনকে বিজ্ঞানের জাদু লাগিয়ে গবেষকরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এটা এখন আমি মেনে নিই, লেখকরা বিজ্ঞানী না হলেও বিজ্ঞানের নতুন ধারণা দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে তারা যেমন অতীতকে দেখে, তেমনি বর্তমান আর ভবিষ্যৎকেও দেখতে পায়। আরেকটা অদ্ভুত বিষয়, কবিরা আকাশের চাঁদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে। কাগজের পর কাগজ ছিঁড়ে চাঁদের অপূর্ব রূপকে বর্ণনা করেছে। চাঁদকে ধরতে চেয়েছে, চাঁদে গিয়ে ঘর বাঁধতে চেয়েছে। কী বিস্ময়কর ব্যাপার, আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট কেনেডি ১৯৬২ সালে কবির ভাবনার কথা বলে ফেললেন। আমেরিকা চাঁদে যাবে। সবাই ভাবছে নিছক কল্পকাহিনি। কিন্তু ১৯৬৯ সালে আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা রাখলেন। এত সহজ বিষয় এটা ছিল না। কবি ভেবেছেন, কেনেডি ভেবেছেন, বিজ্ঞানীরাও ভেবেছেন আর স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। ভাবা যায়, এটাও সম্ভব। এরপর রাশিয়াসহ পাল্লা দিয়ে অনেক দেশের মহাশূন্য অভিযান। এখন তো মহাকাশে তারকা যুদ্ধসহ কত ধরনের গবেষণা আর তার বাস্তবায়ন ঘটছে। হয়তো বলে শেষ করা সম্ভব নয়। একটু অবাক মনে হলেও কল্পনার রূপকথা এখন সত্য। ভাবা যায়, প্রকৃতি মানুষকে বিজ্ঞানের ধারণা দেয়। যদিও অনেকে বলেন এগুলো গল্প ছাড়া কিছু নয়। তারপরও তো সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে বসিনি, যা শুনেছি তাই বলছি। আপেল পড়া দেখে নিউটন আর চৌবাচ্চায় গোসল করতে গিয়ে আর্কিমিডিস এরা দুজন এমন কিছু আবিষ্কার করলেন, যা মানুষ আগে কখনও ভাবেনি। অনেক কিছু আমরা দেখি। সেখান থেকে সৌন্দর্য নিলেই চলবে না, বরং সেখান থেকে ধারণা তৈরি করা যায় কি না, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। কারণ আনন্দের মধ্যেই সৃষ্টি লুকিয়ে থাকে। অনেক সময় আমরা গালগল্প, এটা-ওটা করে, সময় গুনতে গিয়ে দেখি আরে জীবনটা তো শেষ হয়ে এলো। টগবগে সকালের সূর্যটা পড়ন্ত বিকেলে যেমন হেলে পড়ে, মানুষের বয়সের ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটে যায়। কী দরকার এত কিছুর। নিজে সৃষ্টি করি, সৃজনশীল হই, তেমনি অন্যকেও সৃষ্টি করতে আর সৃজনশীল হতে অনুপ্রাণিত করি। হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা বস্তাবন্দি করি। অন্যের অনিষ্ট করা, দুর্নাম করা বন্ধ করি।
মানুষের ছোট একটি ভাবনাকেও বড় করে দেখি, তাকে স্বপ্ন দেখাই। আলোড়িত শিহরিত করি। কারণ ছোট ভাবনা থেকেই একদিন বড় বড় ভাবনা মাথা থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীকে চমকে দেয়। সময় সৃষ্টির রাস্তা দিয়ে মাথা উঁচু করে হেঁটে হেঁটে নতুন সভ্যতা গড়ার দিকে অগ্রসর হয়। জীবনের ভাবনা আর সৃষ্টিগুলো ছড়িয়ে দিই সময় থেকে সময়ে, সভ্যতা থেকে সভ্যতায়। তবেই না আমরা মানুষ। তবেই না বিশ্ব জয়ের আনন্দ। শুভদিন, সম্ভাবনা আর অমিত মাহেন্দ্রক্ষণ। কারণ মানুষকে কখনও হারতে নেই। কঠিন একটা দিনের পরই আসে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার দিন। সেটা যারা পারে তাদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। সবার ইতিবাচক ভি-চিহ্নের প্রতীক্ষায় বসে থাকে সময়, নদী, পাহাড় আর আকাশের অজানা নক্ষত্র।