একদিন সবার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম
ওখান থেকে নাকি সামনের হাড় মাংসের জীবন্ত কংকালগুলোকে দেখা যায়
খুব কাছ থেকে আয়নার মতো দেখলাম এক বিবর্ণ, বিক্ষিপ্ত, অরক্ষিত সময়
এর সাথে ছিল দুঃসহ যন্ত্রনা, দুর্গম আতংক আর তীব্র দ্রোহ
মনে হলো এ নিষ্পেষিত জীবন যেন কাপুরুষের হাতে বলী হওয়া
সদ্য পরিত্যক্তা নারীর মতো নির্দয়, নির্মম, স্বার্থপর পৃথিবীর উন্মাদনার মোহ
অনেক কেঁদেছি
কাঁদতে কাঁদতে নদী হয়েছে সমুদ্র
বৃষ্টি হয়েছে টর্নেডো
তখনকার একেকটা রাত ছিল একেকটা যুগের মতো অবরুদ্ধ
সেখানের শামুকের খোলস ভেঙে জীবন্ত লাশ থেকে বেরিয়ে এলো
একটা পবিত্র আত্মা, যৌবনের সাদা কাগজে রংমাখা স্বপ্নের মতো বিশুদ্ধ
তারপর মহাজীবন মহাকালে ইতিহাসের রাজ্ সাক্ষী হয়ে বুঝে গেছে
জীবন মানে পাথর চাপা বুকে গলিত ধাতুর সাথে বেঁচে থাকার যুদ্ধ
জীবন কঁচি পাতার মতো দুর্বল নয়, এ জীবন কঠিন তপস্যার পেরেকে আটকানো
রুদ্ধশ্বাস কাঁধে ঝুলানো বেদনার মতো বিকীর্ণ রোদে পোড়া কাঠ কয়লায় গোড়া কালভদ্র |
আমি তখনও দেখি
বিশাল পৃথিবী
অগণিত আদম সন্তান
কারো চোখ খোলা নেই, সানগ্লাসের লালনীল বাতির বেনারসি শাড়ির মতো অদৃশ্য মুখোশ
আমাকে চেপে মেরে ফেলতে পারলেই যেন চোর বাটপার
রাতারাতি হয়ে যাবে রাজা মহারাজা
তারপর নিরীহ চাতক পাখির মতো যারা তাকিয়ে ছিল একটা বিশুদ্ধ জীবনের আকাঙ্খায়
তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে টাকার গদিতে বসে জল্লাদের মতো দেবে সাজা
দেখে মনে হয় তাদের খণ্ডিত সত্তার ভিতর সত্তা
যারা দরবেশের ভান ধরে খেলার ভিতরে খেলতে গিয়ে খেতে চায় মানুষের মাংসের আলু ভর্তা |
তারপরও সময় কেমন করে যেন চলে আসে আমার হাতে
দিন বদলায়
মানুষ বদলায়
এখনো বসে থাকি, প্রতীক্ষায় থাকতে চাই কিংবদন্তি বিশুদ্ধ প্রাণের মিলন মেলায় |
আমি কবি হতে পারিনি
তারপরও কবিতা লিখি শব্দকে টুকরো পাথরের মতো ভেঙেচুরে
সারা পৃথিবীর মহাকাব্যের জাদুকরী কালো অক্ষরের সীমান্ত জুড়ে
তীব্র বরফের উদোম শরীর আগুনে পুড়ে এখন দেখি
যারা ভেবেছিলো ছড়িটা তাদের হাতে থাকবে
বজ্জাত শয়তানের মতো ঘুরাবে দুর্নীতির ছড়িটা
এখন তাদের ছড়িটা হাতছাড়া হয়ে আমার বিছানায় গড়াগড়ি খায়
আর তীব্র চিৎকার করে বলে এ পবিত্র ভূমিতে মোশতাক আর মীরজাফরদের জায়গা নাই
সবাই মিলে তাদের ছুঁড়ে ফেলতে চাই নরকের যন্ত্রনায়
দিন গুনে দিন নির্বাক বসে থাকে সেই মাহেদ্রক্ষনের অপেক্ষায় |