আজিকার দিনে শোকের আসরে কিসের শোকের ছলে?
একটি যুগ পার হয়ে গেল শোকের মাল্য গলে।
বিদ্যালয়টির সূচনা লগ্নে আগমন হয়েছিল যার,
আজিকে কেবল মনের কোনে স্মৃতিকে স্বরি তার।
বাবার হাতটি ধরে যখন গিয়েছিলাম সেইখানে,
অবাক হইলাম দুই নয়নে দেখিয়া তাহার পানে।
দেখিলাম তাহার প্রাণোচ্ছল হাসি ভরা সেই মুখ,
সকল বাধা পার হতে হবে বলে জাগিয়া উঠিল বুক।
হাসি খুশি মাখা মুখখানি তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ চোখে,
ডাষ্টার হাতে ক্লাশে ছুটিতেন সকল বাধা রুখে।
তাহার মনের গোপন কোনে ছিল কিনা কোন ব্যথা,
বুঝিতে দেয় নাই কাউকেই সে জানি না সেই কথা।
মোদের সাথে বন্ধুর মত সদাই আচরণ,
আপন মনে তাহারে মোরা জীবনে করেছিলাম বরন।
আদর যেমন করিত মোদের শাসনেও ছিল শ্রেষ্ঠ,
বেয়াদবির দায়ে বেত্রাঘাতে ঝাঁঝিয়ে দিত পৃষ্ঠ।
ভালবাসা আর স্নেহের মায়ায় কাটিয়েছি কত কাল,
অদৃশ্য সে মায়ার বাঁধন সৃষ্ট মায়ার জাল।
মোদের মায়াজাল ছিন্ন করে চলে গেল সে চিরতরে,
প্রকৃতির নিয়ম ভাঙ্গিয়া তারে রাখিতে পারি নাই ধরে।


তাহারে যাহারা দেখিতে পাও নাই নয়ন দুটি ভরে,
বড়ই আফসোস রহিল আমার শুধুই তাদের তরে।
সময় পেরিয়েছে অনেক আগে হবে না আর দেখা,
জীবন সাথীরে ফেলে গেছে সে করে নিঃস্ব একা।
তাহারে নিয়া শোক সংলাপ কি বলিব এখন,
রুপকথার ন্যায় রাজকুমারটি হারিয়ে গেছে যখন।
তবুও বলি তাহার তরে সেইদিনের সেই কথা,
যেদিন সে হারিয়ে গেল প্রাণে দিয়ে ব্যথা।


সেদিনের সেই সকাল বেলা পুবাকাশে সূর্য,
হঠাৎ মাইকে চিৎকার শুনে মনটা হল তুর্য।
কথা হয়েছিল একদিন আগে যেই মানুষটির সাথে,
মোদের ছেড়ে চলে গেছে সে গত আঁধার কাল রাতে।
যাইবার কালে বধুটি তাহার পাশ থেকে কহিল ডেকে,
আমাকে তুমি একা করিয়া কার কাছে যাও রেখে?
এই কথাটির উত্তর আর হইল তার দেওয়া,
ইচ্ছাৎসুক চোখে তাহার শুধু বড় বড় করে চাওয়া।
সেই চাওয়াতেই বিদায় লইল সাংগ ভব লীলা,
বধুটি তাহার কাঁদিয়া বলে আমারে তুমি কি দিলা?
স্যারের যত জামা কাপড় দু'হাতে জাপটে ধরে,
বধুটি কাঁদে বিলাপ করে আমিও যাব মরে।
বিলাপ তাহার শোক সংলাপ মায়ার স্মৃতি চারণ,
কাফন পরায়ে আঁধার কবরে রাখতে করিছে বারণ।
অবুঝ তাহার ছোট্ট মেয়ে প্রশ্নাকুল দু'টি চোখে,
চেয়ে থাকে সে নিরব বদনে কি করছে এত লোকে?
পাশেই বসা মা কেঁদে কয়, ঘুমিয়ে আছে আমার আজহার,
জাগিয়া উঠিবে এখনি সে যে মুখটি ঢাকিও না তার!
মা মনিটার মিথ্যে স্বপন ভাংতে নাহি চায়,
সবার কান্না রুদ্ধ করে তারে কাফনে ঢাকিল হায়!
মন মানে না চোখ জলে ভিজে দিতে কবরে মাটি,
সঙ্গে তাহার কেউ গেল না, শুধু বাঁশ আর পাটি।
কবর শেষে মোনাজাত করি তুলিয়া দুটি হাত,
শান্তি মিলুক কবরে তাহার এই তো আর্তনাদ।


-কবিতাটি আমার পরম প্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গুরু মরহুম আজাহারুল ইসলাম বি এস সি কে উদ্দেশ্য করে লেখা। তিনি টাঙ্গাইলের, সখিপুর উপজেলার কালিয়া পাড়া ডাকাতিয়া মাজেদা মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বি এস সি শিক্ষক ছিলেন। আর আমি ঐ প্রতিষ্ঠান থেকেই মাধ্যমিক শেষ করেছি।