এখন পূর্ণিমার মধ্যরাতে গাঁয়ের কোন মাঝ মাঠে রাখালের বাঁশীতে বাজে না,ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া বা পল্লী গানের সুর,
পল্লী বালারা কাজের ক্লান্তিতে গুন গুনিয়ে গায় না কোন স্বরচিত পল্লী সুর।
গরুর গাড়ী বা মহিষের গাড়ীর কাঠের চাকার ক্যাকর ক্যাকর শব্দে গাড়িয়াল তার দরাজ গলায় ধরে না কোন অপরিচিত সুর,
কালের আবর্তে রঙ্গীন বিদ্যুৎ আলোয় ধোঁয়ার মেশিন ছেড়ে বিদেশী বাদ্যযন্ত্রে তোলা হয় ব্যান্ডের অচেনা সুর।
আর আমার গ্রামে বাউল ফকির, চারন কবির সাথে কাঁদে দেশী বাদ্য যন্ত্র,
একতারা, দো তারা, ঢোল, বাঁশী, খঞ্জক, খমক চিনবে কি এ যুগের সন্তানেরা!
কী বোর্ড, ড্রাম, গিটার ভায়োলিনের ভীড়ে আমার দেশী বাদ্য যন্ত্র আজ বিলীন!


সাহিত্যে নেই পল্লী মায়ের কোলের কথা,
নগর জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতার কথা স্বাচ্ছন্দে বিস্তর ভাবে তোলা হয় লেখক কবিদের খাতায়!
তার একটাই কারন গ্রামীন ঐতিহ্য সৌন্দর্য্য আজ বিলীনপ্রায়।
তা আর জানার অবকাশ নেই যেন কারো,
কেউ কেউ হয়ত থাকলেও তা কতটা আন্তরিক তার প্রশ্ন থেকেই যায়!


নেই রুপকথার আসর,
সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় মাঝে বয়োজৈষ্ঠকে ঘিরে জমে উঠত রুপকথার আসর।
তাতে সবাই এমন ভাবে মাথা ঝাঁকাত আর সম্মতি জানাত এ যেন সত্যিই!
বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা বা তাদের জীবনেরি হারানো কথা।
যাত্রা আর থিয়েটারের নামে যা হয় এখন গ্রামে তা বলাই বাহুল্য!
নারীর অর্ধনগ্ন খেমটা নাচ আর ঘৃন্যতম রগরগে যৌনতার গ্রামীন ভার্সন।


এ যুগে কোন স্ত্রী তার স্বামীর পথ পানে চেয়ে থাকে কি না জানা নেই,
না খেয়ে ভাতের থালা সাজিয়ে নিয়ে বসে থাকে কিনা সন্দেহ।
ক্লান্ত স্বামীর ঘাম মুছিয়ে দেয় কি আঁচলে?
মায়ের আঁচল বলে প্রচলিত একটি কথা আছে, তা কি আদৌ পাবে কি এ যুগের হতভাগা সন্তানেরা!


হাজারো গ্রাম্য খেলা।
দল বেঁধে গোল্লা ছুটু, হা ডু ডু, ছি কুত কুত, ডাংগুলি, কটি আর কত!
সাপের খেলা অথবা বাঁদর নাঁচে ভিড় জমে না।
হরেক পসরার দোকানীর ডাক!
কালের গহবরে আমার স্বর্নালী অতীত ঐতিহ্য আর মধুর জীবন প্রবাহ।