প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত হয় ‘বাবা দিবস’। এবছর ১৫ জুন তাই এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।


‘বাবা দিবস’ পালন শুরু হয় গত শতাব্দীর প্রথমদিকে। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসের পালনের শুরু। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৮ এর ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান এক গির্জায় পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে ‘বাবা দিবস’ পালন করা শুরু করেন। আজ যেমন বাবা দিবস নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন হচ্ছে প্রথমদিকে কিন্তু এতোটা ছিলো না। ‘বাবা দিবস’ বেশ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই পালিত হতো! আসলে ‘মা দিবস’ নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, বাবা দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না, বরং ‘বাবা দিবস’ এর বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল । ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালিত।


জার্মান ভাষায় বাবা শব্দটি হচ্ছে 'ফ্যাট্যা' আর ড্যানিশ ভাষায় 'ফার"। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন বাবা! চীনে ভাষায় চীনারা আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় বাবা হচ্ছেন ‘পাপা’ তেমনি ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’ ভাগ্যিশ! ক্রোয়েশিয়ায় জন্মাই নি! কারণ ওরা বাবাকে ‘ওটেক’ ওটেক বলে! দাঁড়ান আরো আছে, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় বাবা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে বাবা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা বাবাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় বাবা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। আমরা কিন্তু বাবাকে আদর করে হিব্রু ভাষাতেও ডাকি! হিব্রু ভাষায় বাবা হচ্ছে ’আব্বাহ্‌’ তার মানে আমরা যে ‘আব্বা’ বলে ডাকি তাইই কিন্তু! হিন্দি ভাষার বাবা ডাকটি অবশ্য কমবেশী সকলেই জানি, ঠিক ঠিকই! হ্যাঁ, সেটা পিতাজী! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ সেই ‘বাহাসা ইন্দোনেশিয়া’য় যদি বাবা ডাকি তাহলে সেটা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় বাবাকে ডাকেন- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকা হয়! মজার, তাই না! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও বাবা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। তো এমন আরো অসংখ্য ভাষাই রয়েছে পৃথিবীতে যার শব্দগুলো আরো অনেক মজার!


আমাদের দেশে একটি ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে বড় হবার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে । আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও তা খুব সহজে প্রকাশ করি না । মায়ের সাথে যদিওবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে কিন্তু বাবার সাথে বন্ধুত্ব খুব কম সন্তানেরই হয়ে উঠে । কেন এই দূরত্ব থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষটির সাথে, আসুন সব জড়তা কাটিয়ে আজ বাবার আনন্দের জন্য কিছু করি । কিছু না হোক নিজে হাতে একটি কার্ড তৈরি করে বাবাকে দিয়ে বলি – বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসি । দেখুন বাবার মুখের প্রাঞ্জল হাসি, যে হাসি সত্যি অমূল্য এবং তুলনাহীন । বাবা দিবসে এটাই আশা করছি পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের কাছে যে ‘বাবা’ শুধু একটা শব্দ নয় বরং হয়ে উঠুক সহজ- সাবলীল বন্ধুত্বপূর্ণ একটি নিরাপদ আশ্রয়। মা বাবাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। মা বাবার জন্য ভালোবাসা প্রতিদিনের। তারপরও দিবস বলে কথা!


বাবা দিবসে কিন্তু বাবাকে চমকে দেয়া চাই। শুভ হোক বাবা দিবস।


*তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
আজকের কবিতার আসরে, আমার বাবা দিবসের কবিতার লিংক-http://www.bangla-kobita.com/ashiq/post20140615123311/