( বিঃ দ্রঃ কবিতাটির নিচে টীকা দেয়া আছে)


ইসলামী সমাজ কায়েমের তরে অদম্য তরুণ মোরা,
সত্যের আলো ছড়ায়ে গড়িব চির-সাম্যের ধরা,
সপ্ত-গগন ভেদে এ তৃষিত ধরণীর আহাজারি,
তপ্ত, তৃষিত ধরার বক্ষে আনিব অমৃত-বারি।
উৎপীড়িত ও মজলুমে বুকে 'ভাই' বলে নেব তুলে,
সত্য-নিশান উড়ান আমরা ঊর্ধে গগন-তলে।
লক্ষ হাসান-হোসেন জন্মে করিবে ত্রাসের সৃজন-
অত্যাচারীর বক্ষে,- কাঁপায়ে ভীষণ সিংহাসন।
সত্য-তরীতে সওয়ার মোরা মুসলিম ভাই ভাই,
অভেদ ধনী ও দরিদ্র, হেথা কুফুরীর ঠাঁই নাই।
অরুণ-তরুণ দিয়াছি বুকের খুন, আরও দেব তবু-
কায়েম করিব আল্লার দ্বীন, আদেশ দিয়াছে প্রভু।
জেল-জুলুম আজি 'ফেল' মেরে লুটিবে মোদেরি চরণ-তলে,
অত্যাচারীর খড়্গ নিত্য দলে যাব অবহেলে।
বাজিতেছে ভেরী, হাঁকিতেছে সেথা জেহাদের শের-নর
কন্ঠে ধ্বনিছে - "নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার!"
আসবি কি ভয়? আসলেরে আয়! ভয়কে করিব জয়!
সত্যের পথে প্রাণ দেয় যারা, তারা চির-অক্ষয়!


গোঁড়াদেরে আজ বলি-
পোশাক-আশাকে যায় নাক চেনা কেবা আল্লার ওলি।
দাঁড়ি, টুপি কিবা পাঞ্জাবিতে কভু ইসলাম নাহি ঝোলে,
খোদার দ্বীনের রৌশনি জ্বলে সদা মুমিনের দিলে!


ওহে অন্ধ মুসলমান!
রক্ত-স্নাত পথ বেয়ে তবে এসেছে ও ইসলাম!
হামজা, ইয়াসির, খুবাইব - শত শহিদের খুনে রেঙে-
কায়েম হল এ দ্বীন, সেদিন সে অর্ধেক ধরাধামে।
আনন্দ-রথে আরোহণে কভু আসেনি খোদার দ্বীন,
এ দ্বীন এসেছে বহু মুমিনের জান, মাল করে বিলীন!


দ্বীন কায়েমের তরে কভু খোদা আসেনি ক' ধরাতলে,
গর্জে উঠেছে মুমিনের অস্ত্র খোদার শক্তিবলে!


(টীকাঃ


১) হামজা – ইনি ছিলেন রাসূল সা. এর চাচা। ইহুদের যুদ্ধে ওয়াহশী ইবনে হারব নামে একজন আবিসিনীয় দাসের হাতে শহীদ হন। এবং উতবার মেয়ে ও আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা তাঁর কলিজা চিবিয়ে খান।
পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের পরে হিন্দা ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূল সা. তাকে বলেছিলেন –“তুমি আমার সামনে খুব একটা এসো না। কেননা তোমাকে দেখলে আমার চাচার কথা মনে পড়ে।

২) ইয়াসির – হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির। ইনি রাসূল (স) এর নবুয়্যাতের প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে মক্কার কাফেররা তাঁর দুই পা দুইদিকে দিয়ে প্রত্যেক পায়ের সাথে ঘোড়া বেঁধে দুইদিকে ছুটিয়ে দেয়। এর ফলে ইয়াসিরের শরীর নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত চিরে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। শাহাদাত বরণ করেন রাসূলের এ মহান সাহাবী।

৩) খুবাইব – হযরত খুবাইব বিন আদী (রা)। ইনি ছিলেন রাসূল স এর সাহাবী।
একবার মক্কা ও ইস্ফানের মধ্যবর্তী এলাকার বনী লিহইয়ান গোত্রের নেতা সুফিয়ান বিন খালিদ পার্শ্ববর্তী গোত্র বনী হাজিলের সাথে মিলে রাসূল স. এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তারা সাতজনের একটি দল গঠন করে রাসূলের কাছে পাঠায়। এবং বলে তাদেরকে দ্বীন শেখানোর জন্য কিছু সাহাবীকে যেন তাদের সাথে তাদের গোত্রের কাছে পাঠায়। রাসূল সা তাদেরকে বিশ্বাস করে খুবাইব সহ দশজনের একটি দল তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন।
খুবাইব ও তার সাথীগণ 'রজী নামক স্থানে পৌঁলে দুই শত কাফের যুবকদের এক বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হন। হঠাৎ এই হামলায় আট জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন এবং খুবাইবসহ আরেকজন সাহাবী বন্দী হন। পরবর্তীতে উকবা ইবনে হারেস নামে এক ব্যক্তি তার পিতা (যাকে খুবাইব (রাঃ) বদর যুদ্ধে হত্যা করেছিল) হারেস ইবনে আমেরের হত্যার বদলা নেয়ার জন্য আক্রমনকারী যুবকদের কাছ থেকে খুবাইব (রাঃ)কে ক্রয় করে তার গোত্রে মাঝে নিয়ে গেলেন এবং খুবাইব (রাঃ)-কে বললেন, ইসলাম ত্যাগ না করলে তোমাকে নিঃশেষ করে ফেলা হবে।এরপর শুরু হলো অত্যাচার ও নির্যাতন।কাফিররা বললোঃ (তুমি কি চাও) তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)কে হত্যা করি? খুবাইব (রাঃ) বললেনঃ আমার পরিবার-পরিজন নিরাপদে থাকবে আর মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গাঁয়ে একটি কাঁটার আচঁড় লাগবে এটা হতে পারে না। পরিশেষে কাফেররা তাকে ফাঁসি দেয়ার আয়োজন করে। উকবার সহযোগী কাফের যুবকেরা যখন খুবাইবকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাছিলো তখন তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ্ִ! আমরা তোমার রাসূলের পয়গাম পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। অতঃপর আমাদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তার সংবাদ তুমি তোমার রাসূলের কাছে পৌঁছে দাও। ফাঁসির মঞ্চে তিনি আরহণ করার সময় শেষ আকাঙ্খা করে বলেন__ আমাকে দু'রাকাত নামায পড়তে দিন। নামায শেষে খুবাইর (রাঃ) বললেন, তোমরা এই মনে কর না যে আমি ফাঁসির জন্য নামায দীর্ঘায়িত করছি, তাহলে আমি নামায আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর ফাঁসির মঞ্চে ঝুলন্ত খুবাই (রাঃ)-এর উপর তারা ছুড়ে মারে তীর বর্ষা ও খঞ্জর। ফলে হযরত খুবাইর (রাঃ) কালেমা শাহাদাত পড়তে পড়তে শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা পান করলেন।)