তারে বন্দনা করি –
গর্বোদ্ধত যে যৌবন আজ হাতে হাতিয়ার ধরি –
অসম্ভবের অভিযানে বের হল ওরা দিকে দিকে,
সহস্র ধ্বংসস্তূপে গেল  ভাঙার ইতিহাস লিখে।
যারা পদতলে দ’লে চলে ঐ জীর্ণ সংস্কারে,
আদিম পুঁথির পাতা উড়ে গেল যাহাদের ফুঁৎকারে।
যারা ভেঙে চলে ভণ্ড পীরের দরবার আস্তানা,
বকধার্মিক মাওলানাদের মা’ফিল-আড্ডাখানা।
প্রাণের জোয়ারে ভেসে গেল কুসংস্কার-জঞ্জাল –
যুগের সংস্কার আর ঐ কিতাবের কঙ্কাল!
বিধি-নিষেধের পাহাড় ভাঙিয়া ছুটিয়া চলেছে যারা –
নীতির জগদ্দল শিলা ঠেলে – যৌবন মাতোয়ারা!
মিথ্যা মোহের মাজারে আসিয়া যাহারা অকুতোভয়ে –
ধ্বংসযজ্ঞ চালালো দু’হাতে হাতুড়ি-শাবল লয়ে!
নীতি-বৃদ্ধের কঙ্কাল সব তামাম ধরণী চষে –
ছুঁড়ে ফেলে ওরা শূণ্যে – জলোচ্ছ্বাসের গতিতে এসে!
জরাজীর্ণ এ বিশ্বে আনিল নতুন প্রাণের মেলা,
যাহাদের গীতে মুখরিত নব জীবনের উদয়বেলা!
আমার প্রাণের বীণায় তাদের তরে সুর বেজে ওঠে,
বিশ্বের সাথে, প্রগতির পথে যারা সদা চলে ছুটে!


                                  সেদিন নিশীথ রাতে –
উথাল পাথারে পাড়ি জমাল যে, ফিরিল না আর প্রাতে!
তারি কথা স্মরে আঁখি ভরে ওঠে জলে – ঘনঘন মুছি,
বিনিদ্র চোখে নিশি জেগে বসে তারি নামে গান রচি।
আজো গান গাহি নিশি জেগে অপলক চেয়ে তার পথে,
মহকাশযানে উড়ে মহাকাশে  ফিরিল না পৃথিবীতে,
মৃত্যুর দ্বারে যাহাদের ভয়ে যমদূত রয় জেগে,
আজরাঈলের টুঁটি টিপে ধরে যারা মরিবার আগে।
অতল সাগর-তলে, পৃথিবীর দিগদিগন্ত জুড়ে –
অনন্ত মহাকাশজুড়ে যমদূতে তাড়া করে ফেরে।
নব জগতের সন্ধানে যারা ছোটে অসীমের পথে,
নিঃসীম নভে নতুন পৃথিবী খুঁজে ফেরে প্রাণ হাতে।
নির্ভীক যারা, নির্ভয়ে হেসে মরণের দ্বারে দ্বারে –
জীবনের সব সম্বল বয়ে নিতি ফেরি করে ফেরে!
নব অভিযানে দিগদিগন্তে ঝঞ্ঝার বেগে ছোটে,
আসমান কাঁপে শিরোপরি, পদতলে ধরা টলে ওঠে।
বিষের পেয়ালা অমৃত জ্ঞানে অধরে তুলিয়া ধরে,
প্রাণের আবেগে আঘাত হানে যারা এসে দোযখের দ্বারে।
তাহাদেরে স্মরে বেজে ওঠে গীতি তপ্ত কণ্ঠ-তটে,
রাতজাগা পাখি, গেয়ে চলি গাঙ – প্রাণে হাহাকার ওঠে।
তারি বন্দনা-গীতি রচে’ যাই ভেসে আজও আঁখিজলে –
ফাঁসির মঞ্চে পাটাতন কাঁপে যাহাদের পদতলে!
গর্বোদ্ধত যৌবনে শাসিয়াছে ধরা যুগে যুগে,
বৃদ্ধেরা চাপা পড়েছে কালের গোরস্তানের বুকে।
নীতি-বৃদ্ধের শাসন মানেনি, আজও মানিবে না তারা,
চির-বিপ্লবী, দুর্বার, দুর্দম, বন্ধন-হারা!
উল্কার গতি বন্ধনহারা যুবার পথের সাথী,
সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা জ্বালে উহাদের পথে বাতি।
তরুণের তেজে সংস্কারের বাধা জ্বলে ছাই হয়,
নতুন জগৎ সৃজে চলে – কভু মানে না ক’ বাধা-ভয়।
ছোটে দুর্বার - উল্কা-বজ্র-পাত ওরা শিরে ধরি',
অগ্নি-লাভার তাপ সয়ে ওরা নাড়ায় অগ্নিগিরি!
বিক্ষুব্ধ সাগর-ঊর্মির সম ছোটে সব বাধা ভেঙে,
বর্বর বলি যাহাদেরে গালি পাড়িল কুয়োর ব্যাঙে –
অর্বাচীন ও উচ্ছৃঙ্খল আখ্যা দিয়াছে যারে,
তারি তরে সদা গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে।