পতিতাদের নিয়ে কবিতাটা লিখলাম। বোঝার সুবিধার্থে কিছু শব্দার্থ নিচে দেয়া হল।-
বারবনিতা, গণিকা, বারাঙ্গনা - শব্দগুলোর অর্থ হচ্ছে পতিতা।
গণিকালয় - পতিতালয়
জনক-পিতা
স্টিভ জবস- অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা
পতিব্রতা -স্বামী-ভক্তা বউ
আলয়-ঘর


পতিতা


মোদের সমাজে বারবনিতারা কেন রে অবহেলিত?
বাঁচিবার সব অধিকার দিতে হবে মানুষের মত!
ভোগের পণ্য নহে ক উহারা – মাতা ভগ্নিরই জাতি,
মানুষ হইয়া জন্মিয়া কেন খাবে মানুষের লাথি?
এরা আসে না এ আঁধার জগতে আপনার তাগিদে,
কামুক সমাজ! অন্ধ সমাজ! – ঠেলিয়াছে এই পথে!


প্রতারকে ভরা সমাজে উহারা হারাইয়া বিশ্বাসে –
পিতা, ভ্রাতা কিংবা প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষিতা হয়ে আসে!
কারো কারো নিকটাত্মীয় – চাচা কিংবা আপন মামায় –
জানোয়ার সব! – অবুঝ শিশুর শরীর হাতড়ে বেড়ায়!
বড় হয় নারী বড় অবহেলায় - ঘরে নেই নিরাপদে,
ধর্ষিত হয় মানুষ গড়ার কারিগরদের হাতে!
এলো সয়ে স্বামী, শাশুড়ির শত যৌন নির্যাতন,
শাশুড়ি?- ওতো মাতা নহে কভু! ওতো সাক্ষাৎ যম।
কেউ পালায়েছে কাল ঘর হতে প্রেমিকের হাত ধরে,
প্রতারক প্রেমী পতিতালয়েতে আজ বেঁচে দিল তারে।
কেউ হেথা আসে নিরূপায় হয়ে অভাবের তাড়নায়, -
অকর্মণ্য, অলস স্বামীর মুখেতে অন্ন জোগায়।
ইহাদের ‘পরে নির্ভর করে সংসার চাকা ঘোরে,
স্বামী-সন্তান খেলো পা তুলে দিয়ে ইহাদের ঘাড়ে।
তবু এরা নিত্য কিল, চড় সয় স্বামী হারামীর হাতে,
সর্বংসহা ধরিত্রী-মাতা সয় মুখ বুঁজে পদাঘাতে।
কর্মক্ষেত্রে নিত্য নারীরা হইয়া ধর্ষিত –
আসিয়াছে এরা গণিকালয়ে – এদের হারাল সতীত্ব?
সতীত্ব? – ওতো মনের, দেহের – কভু নয়! কভু নয়!
ধর্ষণ করে যে পুরুষ তার পৌরুষ নিভে যায়!


ধর্ষিতা নারী দেখিলে তোমরা চেঁচাও কন্ঠ তুলে,
ধর্ষক সব পুড়ে জ্বলে যায় তোমাদেরি রোষানলে,
আসিয়া পুলিশ পাঠাল বলাৎকারীরে আইন-বলে–
কারাগারে – আর ইহাদের পিছে ডান্ডার গুঁতো চলে!
পতিতা নিত্য ধর্ষিত হয় তাদেরি পতিতালয়ে,
অন্ধ-সমাজ! ইহাদের পানে দেখে না ক আজো চেয়ে।
নরপশু এসে মধু গেল শুষে দানবোল্লাসে মাতি,
ধর্ষিতা হল নারী! – এ সমাজ পতিতায় মারে জুতি!
কামনার বাতি জ্বালায়ে যদি নারী গণিকা গণ্য হয়,
বাতি  হতে  আলো লয়ে নর কেন পুরুষ-পতিতা নয়?
বিবাহ বহির্ভূত  শয্যায়  যদি সতীত্ব যায়-
বেগানা নারীতে গমনে নরের সততা কিভাবে রয়?
নটীগিরি করে যদি এরা নষ্টা, অসতী খেতাব পায়,
নষ্টামি করে যে নর, সে কেন নষ্ট, অসৎ নয়?
কোথা গেল আজ মানববাদীরা? – অন্ধরে! আজ শুধাই-
ধর্ষিতা হয় বারাঙ্গনায়, তাহার বিচার নাই?


শ্মশ্রু নাড়িয়া, কোরান ঝাড়িয়া হুজুরে চেঁচায়ে মরে –
“পতিতার ছেলে! ছি! ছি! ওরে তোরা দে সবে জাত মেরে!”
পতিতা মরিবে জ্বলে পুড়ে ঐ নরকাগ্নিতে নাকি?
পতিতার পানে নাকি ও খোদায় তাকাবে না তুলে আঁখি!
আঁধার নামিলে ঘোরে সে মোল্লা পতিতার পল্লীতে,
বিস্ময়ে দেখি ভয় নেই তার নরকের চুল্লীতে!
মাফলারে মুখ ঢাকিয়া মোল্লা ঘুরিছে পতিতালয়ে –
ভন্ড হুজুর! পতিব্রতা বউ রাখিয়া তার আলয়ে।
সব মধু শুষে লয়ে গেল ভন্ড, ধর্ষক হুজুরে,
পতিতা বানাল দ্বিতীয় পত্নী বিয়ের কলমা পড়ে!


শুধাই সুধী সমাজ-
পতিতা-পুত্র মানব-গণ্য হইবে না কেন আজ?


হয়ত পতিতালয়ে –
জন্ম লয়েছে জারজ পুত্র – বিশ্ব রয়েছে চেয়ে!
অন্ধ সমাজ খোঁজে হাতড়িয়ে জনকের পরিচয়,
জনকবিহীন স্টিভ জবস বিশ্বের বিস্ময়!
কাঁদিছে মাতৃক্রোড়ে পিতৃপরিচয়হীন শিশু,
হয়ত এদেরই মাঝে কেউ হবে মানবদরদী যিশু!


গোঁড়াদেরে যাই বলে –
পতিতা, পতিতা-পুত্র ঘৃণ্য নহে ক মানবকূলে!
পতিতালয়েতে জন্ম লয়েছে, ও শিশু তো পাপী নয়!
পাপ করে সমাজ – কেন নিষ্পাপ শিশু পাপ-বোঝা বয়?