অধঃপতিত মুসলিম


(বি.দ্রঃ বোঝার সুবিধার্থে কবিতার শেষে টীকা দেয়া হল)


জ্ঞান-গরিমায় মুসলিম জাতি আদর্শ দুনিয়ায়!
মুহাম্মদের সম বিজ্ঞানী পৃথিবীতে কেবা হয়?
হেরা হতে হীরা-খন্ড কোরান লয়ে এল নবী হাতে,
কহে সে কোরান – “সূর্য ঘুরিছে আপন কক্ষপথে!”
বিজ্ঞানী? – ওর জ্ঞান আর কত? – এই তো সেদিন বলে –
“সূর্য হইতে আলো পেয়ে চাঁদ পৃথিবীতে আলো ফেলে!”
“সূর্য, উহা তো স্থির নয়!” – সেদিনের জ্ঞানী কয়,
“সূর্য ঘুরিছে কক্ষপথে তার” – কয়ে দেছে আল্লায়!
কয়ে দিল খোদা চন্দ্রের কথা – “উহা তো সূর্য হতে –
আলো পেয়ে করে প্রতিফলিত সে রাত্রের ধরণীতে!”
বিজ্ঞানী বাবা অজ্ঞের মত হেসে মাথা নেড়ে কয় –
“পিপীলিকা কহে কথা!” – উহা নাকি কভু সম্ভব নয়!”
ওহে বিজ্ঞানী! রেখেছ খবর? – সেদিনের আবিষ্কার –
“পিঁপড়ের আছে জবান!” – কোরান ইঙ্গিত দেছে তার
চৌদ্দশ বছর পূর্বে ; কয়েছে পানিচক্রের কথা,
জ্ঞানীগুণী দিল এ তথ্য সেদিন খাটাইয়া টাকমাথা!
বিজ্ঞানময় কোরান, জ্ঞানের দিল কতশত প্রমাণ,
এ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল, কয়ে দিল কোরান!
পড়েছ তোমরা স্টিফেনের বিগ ব্যাং থিওরি,
কোরান দিল এ তত্ত্ব প্রথম, দেখো কোরআন পড়ি!
কোরানের জ্ঞান, ওরা কাছে হার মানিয়াছে বিজ্ঞান,
প্রকৃতির গূঢ় তত্ত্ব বহু আগে কয়ে দেছে কোরআন!


কোরানের জ্ঞানে এ জাতি রাজত্ব করিত বিশ্বময়,
জাবিরের সম রসায়নবিদ পৃথিবীতে কেহ নয়!
ইউনুস আঁকিল অক্ষ, দ্রাঘিমা, - পশ্চিমা বিশ্বে –
মাথা পেতে লয়; আহমদ আবিষ্কার করে কম্পাসে!
সিন্ধুর অতল গভীরতা মাপে জ্ঞানী মুসলিম মজিদ,
ভূতত্ত্বের শত তথ্য দিল ইয়াকুব ভূগোলবিদ!
শত সহস্র বই লিখিতেছ কলমের কালি দিয়ে,
কালি তৈরীতে জাবির রহিল বিশ্বে অমর হয়ে!
রাজীর সঙ্গে বাজি ধরে কভু তোমরা পারিবে কি? –
ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড হতে কাঁচ তৈরি কর দেখি?
গণিত কষিয়া কত কিছু কর, কিন্তু জান কি তা? –
মুসা আল খোয়ারেজমীরে কহে বীজগণিতের পিতা।
তুলা হতে প্রথম তুলট কাগজ বানাইল ইউসুফে,
আরবে আবিষ্কার হয়ে চিনি গিয়াছে সে ইউরোপে!
বিশ্বে প্রথম মানমন্দির তৈরি করেছে কে? –
দুই বিজ্ঞানী – হাজ্জাজ, হুনাইন ইবনে ইসহাকে।
ভূ-মানচিত্র প্রথম এঁকে মোরা ইতিহাসে অক্ষয়,
'সুরাতুল আরদ' – বিশ্ববাসীর কাছে আজো বিস্ময়!
ইবনে বতুতা, আলী বিন হামিদ, উতবী, আলবিরুনী,
আমীর খসরু, শামস-ই-সিরাজ, আব্বাস শিরওয়ানী,
আবুল ফজল, বায়হাকী, কাফী, হুসাইন সালেমী,
সাইদ আলী, মোহাম্মদ ঘোরী, জিয়াউদ্দীন বারণী,
জওহর, মিনহাজুদ্দীন সিরাজ, ইয়াহইয়া কিবা বাবর –
বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ! – রাখিয়াছ তার খবর?
ইহাদের রচা পুস্তকে পায় পশ্চিমা বিশ্বে-
জ্ঞানের ভাণ্ড; - সমৃদ্ধ হল বিদ্যার নির্যাসে!


আজ চেয়ে দেখি হতভাগা জাতি বহু দূরে জ্ঞান হতে,
ফূর্তি করে এরা নারী লয়ে, নাচে মদের বোতল হাতে!
নেশার সাগরে ডুবে গেছে, পতনের অতল গহ্বরে –
পড়ে গেছে কবে! – বেহুঁশ হয়েছে, হুঁশ আজো নাহি ফেরে!
জ্ঞান-সুধা লয়ে এসেছিনু মোরা জীর্ণ ধরণী-বুকে,
জ্ঞানের দীপ্তি পাইত গো শোভা এ জাতির চোখে-মুখে।
আঁধার পৃথিবী আলোকিত করি জ্বালিয়ে জ্ঞানের বাতি,
খোদা প্রদত্ত জ্ঞানবলে ছিনু বিশ্বের অধিপতি!
বিশ্বে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় আমরাই গড়ি,
'কারাওইন' দিল জ্ঞানের আলোক নিখিল বিশ্ব জুড়ি'।
বিশ্বে প্রথম কোরানের বাণী – কহিল সে 'ইকরা'!
বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়িয়াছি মোরা।
গড়িয়া তুলেছি জ্ঞানাগার মোরা সেভিলে, গ্রানাডায়,
বাগদাদ কিবা সালেনা, কায়রো, টলেডো, মর্সিয়ায়।
গড়েছি বিদ্যাপীঠ – কর্ডোভা কিংবা ভ্যালেন্সিয়ায়,
এসব বিদ্যাপীঠ হতে আজো ইউরোপ জ্যোতি পায়!
বিশ্বে আমরা আলো জ্বালাইয়া আমরাই জ্যোতি-হারা,
বিদ্যের ঝুলি শূণ্য মোদের খুলি জঞ্জালে ভরা।
মৃতবৎ জাতি পড়িয়া রয়েছে, আঁকড়ে ধরেছে জরা,
বেহেশত হতে বয়ে আন আজি কেহ অমৃত-ধারা!
কান ধরে আজ টান দে রা কেউ, মাথা ধরে ঝাঁকি মার!
ঘুমন্ত জাতির কর্ণে পারে না দিতে কেহ চিৎকার?
অর্থের পিছে ছুটিছে এ জাতি, অভাগারা জানে না –
পাহাড় সমান সম্পদ হতে দামী জ্ঞান এককণা!


বিশ্বের নবী আদেশ দিয়াছে এই পৃথিবীতে এসে –
“জ্ঞান অর্জনে প্রয়োজনে যেও সুদূর চীনদেশে!”
জ্ঞানের সে রবি আমাদেরি নবী দিল এ জাতিরে সবক –
“জ্ঞানের সাধনা করিও দোলনা হইতে মরণ তক!”
দিনের কয়েক প্রহর করেছে যে বা জ্ঞান অর্জন,
হাজার রাত্রি বন্দেগি হতে তার কাজ উত্তম।


(বি.দ্র.  
টীকাঃ


*) “মুহাম্মদের সম বিজ্ঞানী পৃথিবীতে কেহ নয়” – নবী করিম (স) যে কোরান শরীফ নিয়ে আসেন তা বহু বৈজ্ঞানিক আয়াত সম্বলিত যা এখনকার যুগের গবেষকরা কোরান রিসার্চ করে বের করেছেন। এছাড়া আল্লার রাসূলের সুন্নাতী কাজসমূহ বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে পারে, তা গবেষকেরা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।


*) জাবির – জাবির ইবনে হাইয়ান। ইনি রসায়ন শাস্ত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। রসায়নের বহু পরিক্ষা নিরীক্ষার পদ্ধতি ইনি আবিষ্কার করেন। যেমনঃ হাইড্রোক্লোরিক ও নাইট্রিক এসিডের সংশ্লেষণ, পাতন, কেলাসীকরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইনি ইস্পাত তৈরি, ধাতুর শোধন পদ্ধতি,  চুলের কলপ ও লেখার পাকা কালিও আবিষ্কার করেন। রসায়নশাস্ত্রে তাঁর প্রভূত অবদানের কারণে তাকে রসায়নের জনক বলা হয়।


*) বিজ্ঞানী ইউনুস – ইনি পৃথিবীর অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা নিয়ে গবেষণা করেন, যে গবেষণালব্ধ ফলকে ইউরোপ সাদরে বরণ করেছিল।


*) বিজ্ঞানী আবদুল মজিদ – ইনি সাগরের গভীরতা মাপার ও স্রোতবেগ নির্ণয়ের যন্ত্র আবিষ্কার করেন।


*) বিজ্ঞানী ইয়াকুব – ইনি বিখ্যাত মুসলিম ভূগোলবিদ। ভূতত্ত্ব সম্পর্কে বিখ্যাত বই 'মুজাম আল উবাদা' লিখে গেছেন ইনি।


*) বিজ্ঞানী আল রাজী – ইনি ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড থেকে কাচ তৈরি করে সারা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও আলকেমি বিষয়ে ১৮৪টিরও বেশি বইয়ের রচয়িতা তিনি। এছাড়া ইথানল উৎপাদন, বিশোধন ও চিকিৎসায় ব্যবহারের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।


*) মুসা আল খোয়ারেজমি- পৃথিবীর প্রথম বীজগণিতের জন্মদাতা ইনি। মুসা আল খোয়ারেজমিই প্রথম শূণ্য(০) সংখ্যা আবিষ্কার করেছিলেন বলে অনেকের ধারণা। বীজগণিতের উপর তাঁর বিখ্যাত বই 'হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবিলা'।


*) তুলা হতে প্রথম তুলট……..ইউসুফে – বিজ্ঞানী ইউসুফ বিন উমার৷ ইনি তুলা হতে প্রথম তুলট কাগজ তৈরি করেন। আর তাঁর এই আবিষ্কারের দু'বছরের মাথায় বাগদাদে কাগজ তৈরির কারখানা নির্মিত হয়।


*) আরবে আবিষ্কার হয়ে চিনি গিয়েছে সে ইউরোপে – চিনি, আরবরা প্রথম  আবিষ্কার করে। আরবে একে বলা হত সুক্কার যা ইউরোপে গিয়ে “সুগারে” রূপান্তরিত হয়।


*) বিশ্বে প্রথম মানমন্দির………ইসহাকে – হাজ্জাজ ইবনে মাসার ও হুনাইন ইবনে ইসহাক – এই দু'জন বিশ্বে প্রথম মানমন্দিরের নির্মাতা।


*) সুরাতুল আরদ- বিশ্বের প্রথম ভূ-মানচিত্র যা এঁকেছিলেন ১০৯ জন মুসলিম বিজ্ঞানী। এই মানচিত্র আজও বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময় হয়ে আছে৷ কেননা ঐতিহাসিকদের মতে যে সময়ে এই মানচিত্র আঁকা হয়েছিল, সে সময়ে আসলে এত নিখুঁতভাবে আঁকা সম্ভব ছিল না। সুরাতুল আরদ কথার অর্থ হচ্ছে বিশ্ব আকৃতি!


*) কারাওইন – মরক্কোর কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতেমা নাম্নী একজন মুসলিম মহিলা ৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।


*) গড়িয়া তুলেছি জ্ঞানাগার মোরা………… কায়রো ,টলেডো, মর্সিয়ায়ঃ  
অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে মুসলমানরা  জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে আরোহণ করে। সে সময়ে তারা ইউরোপের সেভিল, গ্রানাডা, বাগদাদ, সালেনা, কায়রো প্রভৃতি এলাকায় বহু পাঠাগার গড়ে তোলে।


*) গড়েছি বিদ্যাপীঠ কর্ডোভা কিংবা ভ্যালেন্সিয়ায়…………ইউরোপ জ্যোতি পায়ঃ  
অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইউরোপের কর্ডোভা, ভ্যালেন্সিয়া, গ্রানাডা প্রভৃতি এলাকায় বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। আর এই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আজকের ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদাতা!)