নারী


অন্ধকারের যুগ-
এসেছে কি পুনঃ ধরণীর বুকে লয়ে একরাশ দুখ?
গিয়াছে কি জাতি ফিরিয়া কালো সে করাল অতীত কালে?
মানবাধিকার লুটায়ে কাঁদ‌িত দুখিনী পৃথ্বীতলে।
পণ্য তুল্য গণ্য হইত ইয়াতীম অবলায়,
মনুষ্যত্ব কুরবানি দিয়ে  এসেছি সে কালে প্রায়?
হেন বর্বর ছিল না মানব সুদূর আদিমকালে,
ধর্ষণ করে নরপশু-দলে মডার্ন হইতে চলে!
না! না! ওরা নরপশু নহে, পশু নহে এত হীন!
নিমকহারাম! কর দেখি শোধ মায়ের জাতির ঋণ!
স্নিগ্ধ স্পর্শে যাহার হয়েছ উজ্জীবিত,
ক্ষুধা মেটায়েছে শুধা দিয়া তব নিশীথের ক্ষুধিত!
যাহার হাতের যতন লভেছ, তাহার দেহের 'পর-
ফুটন্ত জল ঢালিতে শরম করে না পাষাণ নর?
ঝলসে দিয়াছ কার চোখ মুখ এসিড নিক্ষেপে?
ওই নারী তব জন্মদাত্রী, এসেছ কৃপায় ভবে।
যুগে যুগে যত মহৎ মানব জন্মেছে ধরণীতে,
জন্ম লয়েছে ত্যাগ স্বীকারিনী নারীর গর্ভ হতে!


পয়গম্বর আদমও তোমার হয়নি ক কভু সুখী-
'হাওয়া' বিনে তার বুকে যেত সদা হতাশার বান ডাকি।
হঠাৎ সৃজিল খোদা হাওয়ায় অপরূপ মনহরা!
হস্ত বাড়ায় ত্রস্ত আদম হইয়া পাগলপারা!


নর কেন অহংকারী?
নর জন্মেছে নারী হতে, নর তো জন্ম দেয়নি নারী!
রণরঙ্গিণী ওহাবের মাতা সম বীরত্ব কার?
তাপসী রাবেয়া কিংবা রোকেয়া জ্ঞান‌ে ইতিহাসে অমর।
ধর্ষিতা  হয়ে মুখ নিচু নহে, শির  উঁচু করি নারী-
লাথি কষা সবে বলাৎকারের উদ্ধত শিরোপরি!
শিকারি কুকুর শিকারের পিছে হন্য হইয়া ধায়,
শিকার যদি বা আঘাত হানে তো লাঙ্গুল তুলে পালায়!
"চরিত্রহীনা" - অপবাদ দেয় কেবা ও ধর্ষিতায়?
বলি-"তার সম সাধ্বী নারী এ ধরাধামে কেবা হয়?"
ধর্ষিতায় ও ধর্ষণকারী কি বড় চরিত্রবান?
কালসাপ কবে মানুষে দংশে হইয়াছে মহীয়ান?
কলঙ্কহীন চন্দ্র উহারা সীতা সম ওরা সতী,
করজোড়ে তব সম্মুখে এসে জানাই গো প্রণতি।
জাগো "ইয়াসমিন", "ভারতকন্যা" সইয়ো না বঞ্চনা,
ধর! টুটি ধর চেপে মর্দের আর কভু ছাড়ব না-
অধিকার আদায় না হওয়া অবধি।  জ্বলে ওঠ রুদ্রতেজে!
লুকাবে পুরুষ, বসিয়াছে যারা ভাগ্য-বিধাতা সেজে!


(বি.দ্র:


*) ওহাবের মাতা : বিষাদ-সিন্ধু পুরাণ অনুযায়ী কুফাগামী মদিনাবাসীকে যখন
ইয়াজিদ সৈন্যরা কারবালা প্রান্তরে অবরোধ করে তখন সেখানে এজিদ সৈন্য ও হোসেন (রা)
এর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে হোসেন পক্ষীয় সেনা আবদুল ওহাব ইয়াজিদ সৈন্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করলে, ওহাব-মাতা নিজেই রণক্ষেত্রে এসে দাঁড়ান। কারবালার
রণক্ষেত্রে দেহ-বিচ্ছিন্ন আবদুল ওহাবের মাথা দেখতে পেয়ে ওহাব-মাতা তা তুলে ওহাব-হন্তার
প্রতি নিক্ষেপ করেন। এতে ওহাব-হন্তার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে যায় এবং সেখানেই সে
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এরপর ওহাব-মাতা বহু সংখ্যক ইয়াজিদ সৈন্যকে জাহান্নামে পাঠিয়ে শাহাদত বরণ করেন।


*) ইয়াসমিন- ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিতা কিশোরী, যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।


*) ভারতকন্যা-২০১৬ সালে দিল্লীর চলন্ত বাসে ধর্ষিতা কিশোরী নির্ভয়া, যাকে পরবর্তীতে ভারতকন্যা উপাধি দেয়া হয়।)