জাতির ভাগ্যের আকাশে আজিকে বসে দানবের দলে –
শোষণ করিছে আবদ্ধ রেখে গোটা জাতি শৃঙখলে!
ক্ষমতার পালা বদলায় আজ দানবের হাতে শুধু,
'দানো গিয়ে, আসে দানো' – জাতি দেখে সমুখে নিরাশা ধূ ধূ!
ভাগ্যের আকাশ এ জাতির কবে কালো মেঘে গেছে ঢেকে,
সুবে সাদিকের সূর্য কি উদিবে না বাংলার বুকে?
বাংলা মায়ের বুক জুড়ে আজ ধ্বনি' ওঠে আহাজারি,
বেহাল জাতির হাল ধরে ত্রাণ দেবে – কে সে কাণ্ডারী?


ডঙ্কা বাজিল পথে,
শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ কাঁপে, চামচারা নাচে-কুঁদে!
হর্ষধ্বনি ওঠে, নেতা আসে চড়ে জমকালো গাড়ি,
গরীবের হক মেরে কেটে খেয়ে ঢোলসম তার ভুঁড়ি!
লুটপাট করে চোর-বাটপার মন্ত্রীরা আজ সব,
জাতির আকাশে শুনিতেছি নিতি শকুনের কলরব।
এদের বিবেক গিলে খাইয়াছে ইহাদের ষড়রিপু,
লোভ-লালসায় মত্ত থাকিয়া হাতি-সম হল বপু!
নির্বাচনের আগে আগে দেখি চারিদিকে ভিক্ষুকে –
কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে কলঙ্ক মাখায় জাতির মুখে!
ভোট-ভিক্ষুক, ভোট চেয়ে চেয়ে ঘোরে মানুষের দ্বারে,
গদিতে যদিবা চড়িতে পারে তো, মানুষের হক মারে!
নির্বাচনের আগে আগে ওরা সাজে গরীবের মিতা,
মসনদে যদি উঠে বসে তবে মিঠে মুখে ঝরে তিতা!
মানুষের ভোটে জাতির মাথায় ইলাহের রূপে বসে,
স্বার্থের তরে আইন জারি করে জনতারে খায় চুষে!
গরীবের দুখ ভুলে যায় পেয়ে ক্ষমতার আস্বাদ,
রক্ত শুষিয়া মানুষের, করে জনগণে বরবাদ!
গরীবের লোহু চুষিয়া ফুলিয়া কলাগাছ রাতারাতি,
পৃথিবীর বুকে লোভী আর ভোগীদের যত যশ-খ্যাতি!
যারা যত বড় চোর-বাটপার, দস্যু ও দাগাবাজ,
বিশ্ব জুড়িয়া তাহাদের তত খ্যাতি-সম্মান আজ।
সোজা পথে যদি ক্ষমতা না পায়, তবে সে বিশেষ পথে –
হাঁটা ধরে, আর জাদুবলে দেখি বসে আছে মসনদে!
রাতের আঁধারে ভোট-কেন্দ্রতে কারা জানি ঘোরে ফিরে,
ব্যালট পেপারে অচিন দেশের জ্বীন-ভূতে সিল মারে।
মাফলারে মুখ ঢাকিয়া সেথায় ঘোরাফেরা করে কারা?
কাছে গিয়ে দেখ, ভূত-প্রেত নহে, 'সুশীলের চামচারা!'
ভোট-চোর! ওরা ভোট চুরি করে মসনদে উঠে বসে,
প্রতিবাদ যদি করে জুলুমের কেউ, - টুঁটি ধরে ঠেসে!
'বাকস্বাধীনতাকামী' নাম লয়ে মেরেছে বাক্য-বীর,
ধূলিলুণ্ঠিত হয়েছে এদেরি হস্তে সত্য-শির!
কফিনে পুরেছে গণতন্ত্ররে, কাঁদার অধিকারও নাই,
মরণ-জ্বালায় চিৎকারে যদি, জোটে কবরেতে ঠাঁই!


নেতার দলের চামচিকা যত করে টেন্ডারবাজি,
তালে তালে চলে খুন, ধর্ষণ, মাস্তানি, চাঁদাবাজি।
হতদরিদ্র কৃষকের 'শেষ সম্বল জমি' কাড়ে,
এদের হস্তে জিম্মি দেশের জনগণ, কেঁদে মরে।
কাঙালের শেষ কপর্দকও ওরা খায় লুটেপুটে,
ভোগী-রাক্ষস! ওদের পেটের খিদে তবু নাহি মেটে।
স্বার্থের তরে দেশ জুড়ে ওরা বয়ে আনে হানাহানি,
লুটেপুটে খেয়ে সোনার বাংলা করিছে শ্মশানভূমি!
এদেরে ধরিয়া আইন যদি বা মামলায় ভরে জেলে,
পায় বেকসুর খালাস, নেতার 'সোনার পুত্র' বলে।
আইনের জাল গলিয়া 'বোয়াল' বের হয় রাতারাতি,
জাতি জানে – আর কিছু নয়! পীর নেতাদের কেরামতি!
যেই দেশে জনগণ দুই বেলা দানাপানি নাহি পায়,
হাড় জল করা গরীবের অর্থ মন্ত্রীর পেটে যায়।
অন্নবস্ত্র নাই, জনগণ পথের পার্শ্বে পড়ে,
উদরের জ্বালা মেটাতে উহারা ডাস্টবিন ঘেঁটে মরে!
কষ্টার্জিত জনতার অর্থে নেতারা প্রাসাদ রচে',
মদ ও জুয়ার আখড়ায় নেতা ভূত-প্রেত সম নাচে!
ওরা জনতার টাকা মেরে, ওরা ভরসা দেখায় মিছে,
স্বার্থের তরে দেশ বিকিয়েছে ভিনদেশীদের কাছে!
বিকিয়ে দিয়েছে বাঙালির প্রাণ এ জাতির গাদ্দার –
ভিনদেশী দানবের পায়ে, ওরা ভিনদেশী তাঁবেদার।
ফায়দা লুটিছে পতনের মুখে ঠেলে দিয়ে গোটা জাতি,
কে আছিস? – পাঠা সপ্ত-গগন-পারে গদি, মেরে লাথি!
দিকে দিকে এরা বিছায়ে রেখেছে প্রবঞ্চনার জাল,
উন্নয়নের নামে লুটে খায় গরীবের জানমাল।
যারা যত বড় ডাকাত, দস্যু, গুণ্ডা ও দাগাবাজ,
অভাগা জাতির কাণ্ডারী তারা - তত বড় নেতা আজ!
গরীবের হক মারে, ওই হক - আল্লার অধিকার,
আল্লার সনে প্রতারণা করে – শয়তান তাঁবেদার।
ওরা মাথামোটা বেঈমান, ওরা জানে কি ধরার বুকে –
আল্লার মারে উৎপীড়কেরা দূর হয় যুগে যুগে!
ভোগোন্মত্ত জীব, সে মত্ত লোভ আর লালসায়,
বিশ্ব জুড়িয়া দাপিয়া নিঃস্ব মানুষের খুন খায়!
প্রবৃত্তির গোলাম উহারা, শয়তান তার প্রভু,
জালিমেরে খোদা ছাড় দেয়, তবে ছেড়ে দেন না ক' কভু!
সর্বহারার সর্বস্ব লুটে উহারা তখতে চড়ে,
রাজতখতের অপমান করে গরীবের হক মেরে।
উহারা কি জানে রাষ্ট্রক্ষমতা আল্লার আমানত?
খোদার হুকুমে গর্দান যায়, যে বা করে খেয়ানত!


জাতির ভবিষ্যৎ আশা যত তরুণেরা দলে দলে –
জ্ঞানের মানিক লুটিত উহারা দেশে দেশে ছুটে চলে।
জ্ঞানের সাধক, সাধনা করিত জ্ঞান, জাগি দিবারাতি,
উহারা জাতির ভাবী কাণ্ডারী! – চেয়ে র'ত সারা জাতি!
নেতার ইঙ্গিতে তারা আজ লয় জনগণ ধন লুটি,
সে তরুণ আজ নেতার পুতুল, রাজনৈতিক লাঠি!
জ্বলিয়া উঠিত অবিচার বিরুদ্ধে বারুদের সম যারা,
প্রভুর ভক্ত শান্তশিষ্ট 'সারমেয়' আজ তারা!
জ্ঞানহীন পশু, নেতার পিছনে ছুটিছে ধ্বংস-নেশায়,
সুতা হাতে নেতা তরুণ সমাজে পুতুলের সম নাচায়!
বিকিয়ে দিয়েছে বোধ-জ্ঞান এরা অর্থের বিনিময়ে,
পচন ধরেছে জাতির গোড়ায়, - দিনেদিনে গেল ক্ষয়ে!
ধর্মহীনতা বরণ করিছে আধুনিকতার নামে,
পাশ্চাত্যের আবর্জনায় গ্রাস করে জনগণে!
পাশ্চাত্যের মাকাল ফলেরে পুষ্পের মধু ভাবে,
কোরান-অমৃত বঞ্চিত যেবা, কোথা মধু খুঁজে পাবে?


নির্বাচনের মৌসুম আসে কালের চরকা ঘুরে –
গরীবের দেশে, ভণ্ডেরা ঘোরে ধর্ম-লেবাস পরে।
মসনদে বসে যারা নাহি মানে আল্লার ফরমান –
গরীবের হক মারে, তারা ঘোরে হাতে লয়ে কোরআন!
মাথায় ঘোমটা, মুখে ফেনা তোলে কেউবা তসবি জপে,
ঘোমটার আড়ালে খেমটার নাচ দেখিয়া ফেলেছে সবে!
ক্ষমতার মসনদে যেই বসে, চেহারা পালটে যায়,
মানুষের মুখোশের পিছে শয়তানী হাসি চমকায়!
এরা দাগাবাজ, দাঙ্গা লাগায় হিন্দু-মুসলমানে,
সম্প্রীতি ভেঙে স্বার্থ হাসিল করে ধর্মের নামে!
মুখে জপে এরা আল্লার নাম, মনে 'শয়তান' জপে,
স্বয়ং সে ইবলিস পথে যেন ঘোরে মানুষের রূপে!
মানুষে ঠকাও? - প্রতারক! তুমি দেখিবে সময় এলে –
প্রবঞ্চনার মেডেল তোমার কয়টা গলায় ঝোলে?
সফল হইবে মানুষে দেখানো নফল নামাজ পড়ে?
সালাম ফিরায়ে দেখো, কে তোমার পেছনে কবর খোঁড়ে!
প্রতারক সব একজোট হয়ে করিতেছ প্রতারণা,
সুযোগ পাইলে প্রাণের বন্ধু তোমারেও ছাড়িবে না!
চোরের উপর বিশ্বাস রাখো? - ওরা স্বার্থের তরে –
চুরি নয়! শুরু করিবে ডাকাতি দলেদলে তব ঘরে!
মানুষের আবেগ ব্যবহার করে দখল করিছে গদি,
অপব্যবহার করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি।
মসনদে যদি উঠে বসে, পায় “দৈত্য-দানব” খ্যাতি,
কোন মন্ত্রের জাদুতে চেহারা পালটায় রাতারাতি?


প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি কত নেতার হাসিমুখে ঝরে,
ক্ষমতার স্বাদ পেলে গরীবের শেষ সম্বল কাড়ে।
মঞ্চ কাঁপায়ে হুঙ্কার ছেড়ে দেখায় আশার বাতি,
ক্ষমতার স্বাদ পেলে এরা মারে গরীবের পেটে লাথি!
দেশোন্নতির মুলা ঝুলায় এরা জনতার সম্মুখে,
এক বুক আশা লয়ে জনগণ দিল ভোট, মূলা দেখে।
জনগণ ভোট মেরে কেটে যদি এরা ক্ষমতায় আসে,
দেখে নেতা-বাবা একা সেই মূলা খায় মসনদে বসে।
মসনদে যদি ঠাঁই নাহি পায়, নাচে রে মঞ্চে চড়ে,
মঞ্চে উঠিতে না পারিলে উঠে বসে জনতার ঘাড়ে।
নেতা নহে, যেন অভিনেতা সব, ঝাড়ে মুখস্ত বুলি,
বক্তৃতা করে বাসি-পঁচা মুখে, জনগণ ভাবে 'গুলি'!
তোতাপাখি সম শ্লোক আওড়েছে মানুষের সম্মুখে,
বমি করে, আর জনগণ ভাবে – “আগুন ঝরিছে মুখে।“
এরা প্রতারক, ধূর্ত শেয়াল! – ঠকায় এরা জনগণে,
সুড়সুড়ি দিয়ে নাচিয়ে নেতারে, পিছে হাসে শয়তানে!


ভণ্ডামি করে অভিনেতা হয়, নাহি হওয়া যায় নেতা,
নেতা দাবি করে ওরা, - খুঁজে ফিরি কোথায় উদারচেতা?
আবুবকরের মতন কোমল হৃদয়ের নেতা কই?
ওমরের মত সাম্য-ন্যায়ের তলোয়ার আজ কই?
পৃথিবীর বুকে ওসমান সম কই দানবীর নেতা?
আলীর মতন নির্ভীক নেতা বিশ্বের বুকে কোথা?
কোথা সেই নেতা, অর্ধপৃথিবী কাঁপে যার পদতলে,
জগতের ধন পায়ে লুটে, তবু ফকিরের বেশে চলে!
অন্ন না পেলে প্রজারা যাহার দিন কাটে উপবাসে,
“কোন ঘরে রয় উপবাসী?” – ভেবে রাতে ঘুম নাহি আসে।
যার হাতে ভাত ক্ষুধাতুর কথা মনে পড়ে, পড়ে যায়,
“পরপারে দেবে কি জবাব?” – ভেবে কেঁপে ওঠে শঙ্কায়!
খেতে বসে রাজ্যের ভুখা, নাঙা গরীবের কথা স্মরে –
যাহার পাতের ভাত ভিজে ওঠে চক্ষের জল পড়ে!
বিনয়-নম্র নেতা কই? কা'রে করে না সে অপমান,
মানুষের লাঞ্ছনা যেন তাঁর নিজের অসম্মান।
চাকরের মত দেশসেবা করে, চাহে না ক' যশ-খ্যাতি,
নির্লোভ, নিরহংকার, শুধু সম্বল খোদাভীতি!
পথে পথে নিশিরাতে খুঁজে ফেরে যার ঘুম-হারা আঁখি –
খাদ্যের অভাবে কোন ঘরে হায়! কাঁদিছে গরীব-দুখী?
পরপারে হিসাবের ভয়ে বুক ভাসায় নামাজে কেঁদে,
রাজ্যের মাঝে নিরন্ন খোঁজে, উদরে পাথর বেঁধে!
খোঁজে কোন গৃহে হাহাকার ওঠে অভাবের তাড়নায়,
চুলায় হাড়িতে পানি চড়িয়ে মা ক্ষুধাতুর ছেলে ভুলায়!
কোথা সেই নেতা,  নেই ক' যাহার বডিগার্ড, প্রহরী?
জনগণ লয় ভালবেসে যার প্রাণের জিম্মাদারি!
কোথা সেই নেতা, জনগণ প্রাণ দিয়ে ভালবাসে যাকে?
শিরোপরি নয়! পরম বন্ধু বলে রাখে তারে বুকে!
যার অন্তরে জনগণ তরে প্রেম-সাগরের ঢেউ,
তাঁর পানে সবে নদীসম ছোটে, রুধিতে পারে না কেউ!
তাঁর কথা, কাজ বিশ্ব-হৃদয়ে আলোড়ন তুলে যায়,
সংগ্রামী নেতা, যার ত্যাগ যুগে যুগে অম্লান রয়।
সেই বিপ্লবী, সেই মহাবীর, অগণন জনগণে –
তাঁর ইঙ্গিতে বুক পেতে দেয় জেহাদের ময়দানে!
তাঁর আদর্শ আলোক ছড়ায় বিশ্বভুবন জুড়ি',
যুগে যুগে লভে মুক্তি মানুষ  হয়ে তাঁর অনুসারী।