ঘুমন্ত জাতির কানে আমার এ আর্তনাদ পৌঁছবে কি? আদৌ কি তারা জেগে উঠবে?
(বি.দ্রঃ বোঝার সুবিধার্থে কবিতার শেষে টীকা দেয়া হল)


ওহে হতভাগা জাতি!
ঘুম ভঙিল না তোর আজো হায়! পোহাল না তোর রাতি?
তমসাবৃতা ধরণীর মাঝে আর কতকাল ধরে –
মুখ গুঁজে র'বি ঘুমিয়ে ; তবে কি উঠিবে ও দিবাকরে?
রুদ্ধ দুয়ারে কড়া নাড়ে অগ্রপথিক প্রদীপ জ্বেলে,
কোলাহল শুনে ঘুম ভাঙে নাকো? সাড়া জাগে নাকো দীলে?
নির্যাতিতের হাহাকার ওঠে – শান্তি মরিছে খুঁজি,
বধির! ওদের ক্রন্দন আজো কর্ণে পশে না বুঝি?


মুসলিম ছিনু এককালে মোরা বিশ্বের বিস্ময়!
শৌর্যে-বীর্যে অতুল্য, - ছিনু ভাস্বর মহিমায়!
এক ধাক্কায় ‘আসাদুল্লায়' ভাঙে দুর্গের দ্বার,
অশ্ব ছুটায়ে সাদের বাহিনী হইত ‘দজলা' পার!
ঝলসে উঠিয়া ঊর্ধ্ব গগনে ঈশা খাঁ'র তরবার-
স্বৈরাচারীর ঢাল তরবার করে দিত চুরমার!
'সাইফুল্লা'য় সাইফ হানিত যেইদিকে রণভূমে,
কচুকাটা হয়ে শত্রুর ব্যূহ পড়িত ভূতলে ভেঙে!
অশ্ব ছুটায়ে রাজপ্রাসাদের রুদ্ধ দুয়ার ভেঙে-
আসিল বখতিয়ার ; লেজ তুলে পালায় লক্ষণে!
মামুলি সৈন্য লইয়া আসিয়া জিব্রাল্টারে তারিক-
জ্বালাইয়া দিল কিশতি, - দেখিয়া কেঁপে ওঠে রডারিক!
আজ মুসলিম পানে চেয়ে দ্যাখ শক্তি নাহি ক তার,
পাঞ্জাবি তলে মুজাহিদ আজ মৃত-কঙ্কাল-হাড়!
এদের অশ্ব থমকে দাঁড়ায় দেখে সাগরের জল,
হাতে ওঠে না'ক হাতিয়ার – হাত লতাসম দুর্বল!
অস্ত্র ধরিতে পারে না, জালিমের পা ধরে থাকে বসে,
কুকুরের মত এরা পরিণত আজ্ঞাবাহী দাসে!
মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দিয়েছে কবে পাইকারি হাটে,
বেশরম ওরা! – মার খেয়ে বসে জালিমের পা চাটে!
বক্ষ কাঁপিয়া ওঠে শঙ্কায় – শুনে রণডঙ্কায়
পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে ইহারা পশ্চাতে ছুটে পালায়!
শৌর্য-সূর্য ডুবে গেছে, গ্রাসে গ্লানিময় পরাজয়,
একি সেই বীর মুসলিম? কভু মাথা নোয়াবার নয়?


তখত, ক্ষমতা, প্রাসাদ কিংবা দুর্ভেদ্য গড়ে-
এদের ঝঞ্ঝা ঈমান সমুখে তৃণ-সম যেত উড়ে!
বিক্ষুব্ধ সাগর-ঊর্মির ন্যায় এরা চঞ্চল সদা,
ইহারা এনেছে জুলুম উপাড়ি চির-সাম্যের প্রথা!
অশ্ব এদের একদা ছুটিত বাতাসের আগে আগে,
হ্রেষা-রব শুনে জালিমের বুকে উঠিত কাঁপন জেগে।
উঠে ধূলিঝড় ক্ষুরের দাপটে ঊর্ধ্বে গগন-তটে –
কাঁপন লাগাত, ঝরিত তারকারাজি আতংকে ফেটে!
অশ্ব ক্ষুরের আঘাতে ঘূর্ণি জাগিত সাগর-জলে,
“আল্লাহু আকবার” – তকবিরে কাঁপিত এ ধরাতলে!
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ কাঁপিত সে ভীম রণ তকবীরে,
ত্রিভুবন টলমল করিত সে বিপ্লবী হুঙ্কারে!


আজ মুসলিম, - ইহাদের হায় ভেঙে গেছে বাহুবল,
নির্জীব এরা, আঁকড়ে পড়িয়া রয়েছে মর্ত্যতল!
স্বর্গ হইতে অমৃত ঝরিছে – এরা দেখে না'ক কিছু,
ধ্বংস হবার নেশায় ছুটিছে দুনিয়ার পিছু পিছু।
উহারা ভুলেছে - পরপারে মুমিনের চির-কল্যাণ,
লোভ ও ভোগের গর্তে ঢুকেছে অভাগা মুসলমান!
এরা তাগুতের গোলাম – করিছে আত্ম-প্রতারণা,
আপন হস্তে লিখিতেছে নিজ ধ্বংসের পরোয়ানা!
মোহান্ধ এরা! কি দান দিল রে তোরে এই দুনিয়ায়?
ভেস্তের তরে তোর জান মাল কিনিয়া লয়েছে খোদায়! –
ইহারা জানেনা ; দুনিয়াবি ভোগ বিলাসেতে মত্ত,
পদাঘাত হেনে গর্বে কাঁপাতে চাহে এরা মর্ত্য।
নাই কোরানের তাজ শিরে, তবু দম্ভ করিয়া মরো!
ব্যাঘ্র হয়েও শৃগালের রবে পালাবার পথ ধরো!
খোদার জমিন ‘পরে চলিতেছ মানব দম্ভপদে,
পর্বত সম হতে কি পার? ভূমি লাথিতে বিদারিতে?
মুখে 'আল্লাহ' ইলাহ এদের, মানে না ক' তাঁরে কভু,
শয়তানে আর অর্থবিত্তে পূজা করে ভেবে প্রভু!
অর্থবিত্ত, প্রবৃত্তির পড়িয়াছে সেজদায়,
ওরা গোলামীর জিন্দেগী চাহে, শাহাদাত নাহি চায়!
উচ্ছিষ্টের বিনিময়ে এরা জালিমে সিজদা করে,
মুসলিম নাই! – চারিদিকে আজ গিয়াছে কাফেরে ভরে!


আজ মুসলিম মাঝে চেয়ে দ্যাখ ক্ষমতার কাড়াকাড়ি,
বংশ দখলে গদি – খেলাফত দেছে পরপারে পাড়ি!
তখত দখল করে বসে রাজতন্ত্রের শয়তানে,
সাদা চামড়ার চামচা! – ব্যস্ত ওদের পদলেহনে!
গোলাম ইহারা, জাবর কাটিছে বসিয়া গোলামখানায়,
জিঞ্জির পরা সিংহ – নিত্য ইঁদুরের লাথি খায়!
বীরের এ জাতি! – অর্ধ পৃথিবী দাস ছিল ইহাদের,
বাদশা'র তাজ ছিল শিরে! – আজ চাকর শয়তানের!
এরা দেখে না'ক বিশ্বে মুসলমান মার খেয়ে মরে,
দেখে এরা শুধু আপন স্বার্থ, এরা স্বার্থের তরে –
বলি দেয় এরা মুসলিম জাতি সাদা দৈত্যের পায়ে,
জালিম অস্ত্রে শান দেয় এরা মারিতে আপন ভায়ে!
এরা নাকি হয় ক্বাবার রক্ষী? খাদেম ইসলামের?
বাহিরে এদের ইসলাম, মনে আবাস শয়তানের!
ইসলামে এরা বলি দেয় লোভ ক্ষমতার তরবারে,
রক্তপিপাসু! – দাড়ি, টুপি আজ টেনে ফেল সবে ছিঁড়ে!


জালিমের পদে চুম্বন করি' যারা যত বড় গোলাম,
তারা তত বড় মুসলিম নেতা, অভাগা জাতির ইমাম!


নির্যাতিতের ক্রন্দনে হায়! আকাশ বাতাস ফাটে,
মসজিদে বসে হুজুর বাবাজি খোরমা, খেজুর চাটে!
“শান্তি! শান্তি!” – দোয়া মেঙে কভু মায়াকান্নায় ফোঁপে,
ওরে বুড়ো ব্যাটা! শান্তি কি আসে তসবি, কলেমা জপে?
শান্তি-মন্ত্র জপ শেষে এরা ঘোর তন্দ্রায় ঢুলে,
স্বপ্নে দেখেছে – “শান্তি এসেছে এই তো, দৈববলে!”
“শান্তি! শান্তি!” করিয়া চেঁচায়, শান্তি তো নাহি আসে,
শান্তির তরে প্রাণ দিল কত মহৎ মানবে এসে! –
ইহারা তাহার রেখেছে খবর? গাঁটরি, বোঁচকা লয়ে
ছুটিছে সভায়, ইজতেমায়; ভাবে কেবলি জিকির গেয়ে
আনিবে শান্তি জিকিরে ভরিয়ে জমিন, আসমানে।–
মূর্খের দল! শান্তি এসেছে কবে বিপ্লব বিনে?
বিপ্লব বিনে ইসলামী রাজ্যের হল কবে উদ্ভব?
বিপ্লব বিনে আসেনি ক' ভবে মুক্তির উৎসব!
পৃথিবীর বুকে যত বড় বড় বিপ্লবী মতবাদ –
কায়েম হয়েছে খুনে রেঙে, হল কত জান বরবাদ!
কত জনপদ মিসমার, কত বিপ্লবী হল শহিদ,
প্রাণ দিয়ে অকাতরে নিয়ে এল মানবজাতির হিত!
পৃথিবীর বুকে কায়েম করিতে আল্লার কোরআন –
সাগর সমান রক্ত ঝরিল, এল তবে ইসলাম!
হল্লা করিয়া আল্লা জিকির – ওতো বিপ্লব নয়,
বিপ্লব সদা বিপ্লবীদের বক্ষের খুন চায়!


কুসুমাস্তীর্ণ পথে নহে, - এ দ্বীন এল কন্টক-পথে,
অগ্নি-পাথার সন্তরি এল বিপ্লবী মুজাহিদে!


স্রষ্টার সনে সৃষ্টি মানব করিতেছে চালাকি!
অতন্দ্র প্রহরীরে কভু চোর দিতে পারে নাকি ফাঁকি?
বিশ্ব ভুবনে তামাম সৃষ্টি খোদার আইন মানে,
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা ঘোরে নির্দেশে আসমানে।
ইঙ্গিতে তাঁর সাগরে জোয়ার-ভাটার চলিছে খেলা,
ইশারায় যায় অস্ত সূর্য - উদিছে প্রভাতবেলা।
মৃদু সমীরণ বয়, কভু ঝড় হয়ে ছোটে বাতাসে,
পাখপাখালিতে ওঠে কলরব নিতি তাঁর আদেশে।
ফুল করিতেছে আকুল মানুষে ছড়ায়ে সুরভি তার,
নিত্য চলিছে এ মহাবিশ্বে মানিয়া আদেশ খোদার!
রাত্রি দিবসে গ্রাসিতে পারে না, কিংবা ও দিবসে –
বিধির বিধান লঙ্ঘি' রাতের আগে কভু নাহি আসে!
ত্রিভুবনে কিছু নড়িতে জানে না খোদার হুকুম বিনে,
তুমি হতভাগা মান না খোদায়ী আইন কোন সে জ্ঞানে?
আল্লার আইন চলিবে বিশ্বে, আর কারো নীতি নয়,
বিজ্ঞ শাসক! – আল্লার সম বিচারক কেবা হয়?
আজও ছুটিতেছে নিত্য মুসলমান মসজিদ পানে –
নামাযের তরে – মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শুনে!
নামাজ পড়িছে, নামায বোঝে না, ভূতলে ঠুকিছে শির!
কাক যেন ঠোকে চঞ্চু, কেমনে খুলিবে এ তকদির?
পড়িতে পড়িতে নামায এদের গেল ভালে দাগ পড়ে,
নামাজ কায়েম করিতে হইবে, জানে না'ক বেখবরে!
সিজদা করিছে আল্লায়, তবু এরা চরিত্রহীন,
শয়তান এসে বাজায় শিরায় কুমন্ত্রণার বীণ!
কলমা পড়েছে,- কলমা যে কি, তাহা কি ইহারা জানে?
“আল্লা ব্যতীত প্রভু নাই” – বলে মানুষেরে প্রভু মানে!
কণ্ঠ চিরিয়া আজান হাঁকিছে, 'আজান' কি তাহা বোঝে?
আল্লারে প্রভু সাক্ষ্য দিয়া, সে মানুষেরে এসে পূজে!
মানুষ হইয়া মাথা নত কর মানুষের সম্মুখে,
পশুও তো কভু পশুর সামনে দেয় না'ক মাথা ঝুঁকে!
রমজান এলে মুসলিম হয় ইহারা এক মাসের,
নামায, কালাম,  দান-খয়রাত উপচে পড়ে এদের।
পঙ্গপালের মত ছুটে এসে মসজিদে ভিড় করে,
গোয়ালঘরের গরু যেন এরা ঠেলাঠেলি করে মরে!
যায় রমজান যবে, হায়! দেখি সব বক ধার্মিক-
গরীবের হক মেরে খায় ; মারে মজুর পারিশ্রমিক!
ছাড়িল কোরান, ছাড়িল নামাজ, ভাবে – “একমাস ধরে
এবাদত বহু করেছি খোদার – ঋণ দিনু শোধ করে!”
রমজান এলে এক মাস খাঁটি মুসলিম বনে যায় ,
শয়তানও বুঝি ভন্ডামি দেখে লাজে মুখ ঢেকে পালায়!
যাকাত দিয়েছে? – যাকাত তো নহে গরিবেরে কৃপা করে,
ইসলাম কহে যাকাত পৌঁছে দিতে গরীবের ঘরে।
যাকাত, - উহা তো দয়া নহে কভু,  গরীবের অধিকার,
যাকাত অস্বীকারে কেবা? – আজি ঘর লুট কর তার!
ধনিকের দল ঘরে ঘরে তোলে ধনের পাহাড় গড়ি',
পোলাও, কোর্মা গিলিয়া নিত্য বানাতেছে মোটা ভুঁড়ি।
এদিকে অন্ন না পেয়ে অভাবী হল কঙ্কালসার,
জোঁক সম শোষে দারিদ্র্য – হাড্ডি দেহ ফুঁড়ে হল বা'র!
দু'মুঠো অন্ন না পেয়ে মরেছে শিশু দু:খিনী মা'র,
খালিদের অসি বানায়েছি লয়ে শিশু পাঁজরের হাঁড়!
অন্ধের মত মার সব লোভী দৈত্য, দানব, অসুর,
সমাজ হইতে এসব শোষকে লাথি মেরে কর দূর!


বকরীদি চাঁদ দেখিয়া মোল্লা ছুটিছে হাটের পানে,
বেছে বেছে সবে মোট তাজা গরু, খাসি ধরে কিনে এনে-
দেয় কুরবানি পশু ধরে; - এরা কুরবান নাহি হয় –
আল্লার পথে! – আল্লা তোদের ত্যাগ তিতিক্ষা চায়!
ত্যাগ তিতিক্ষা!  শাহাদত! – এসব নাম শুনে দ্যাখ সবে
পিছু হটে ছুটে; রক্ত-গোশত কভু নাহি চায় রবে!
পশু মেরে মেরে বিপুল গর্বে মাটিতে পা ঠোকায়,
প্রতারণা করে রক্ত-গোশত ভিখ্ দিয়ে আল্লায়!
আল্লায় খোঁজে তাকওয়া এদের, এরা খোঁজে মোটা পশু,
মনের পশুরে জবাই না দিয়ে এরা হয় নরপশু!
এবার হুজুর গেল হজে, ভাবে – ক্বাবা সাতপাক ঘুরে –
জিন্দেগী ভরে করিয়াছে যত পাপ, সব গেছে ঝরে।
টেকো হাজী নাহি জানে ‘এক ভাই' বিশ্বের মুসলিম,
ভাই মার খায়! – চিৎকারে শোনে সুখ নিদ্রার বীণ!
এরা মুনাফিক! বেঈমান! গেছে পাপের পাল্লা ঝুঁকে,
উলটা করিয়া ধরে নিক্ষেপ কর নরকের বুকে!


হজ্জ্ব শেখায়েছে বিশ্বের সব মুসলিম ভাই ভাই,
বিশ্ব নিখিলে মুসলিম মাঝে কোনো ভেদাভেদ নাই!


ওহে হতভাগা জাতি!
ভেদাভেদ এনে জাতিতে উঠিছ খুন খারাবিতে মাতি?
ফায়দা লুটিছে ইহুদী, নাসারা উৎপীড়কের দল –
বিবাদ লাগিয়ে মুসলিম মাঝে সৃজে বিশৃঙ্খল!
কূটকৌশলে দাঙ্গা লাগায় মুসলিম জাতি মাঝে,
নির্বোধ জাতি বোঝে না'ক হায়! এদের কথায় নাচে!
ভাইয়ে ভাইয়ে দাঙ্গা বাঁধিয়ে ইহারা আত্মঘাতী,
এক সে বীরের জাতি ভেঙে করে শত কাপুরুষ জাতি!
জ্ঞান গরিমায় যে আলেম ছিল আদর্শ দুনিয়ায়,
সে আলেম জাতি মাতিয়াছে আজি জাতি ধ্বংসের খেলায়!
একদল ছোঁড়ে ফতোয়ার বল, আর দল ব্যাট হাতে –
ফতোয়া ক্রিকেটে মেরেছে ছক্কা, জনতা হর্ষে মাতে!
এমন সময়ে কামানের গোলা ছোটে ব্যাটসম্যান পানে,
ব্যাটসম্যান আলেম ব্যাট হেঁকে দেখে ব্যাট গেছে তার ভেঙে!
তৃতীয় আরেক দল দেখি সহসা মাথা তোলে ভূমি ফুঁড়ে,
অজ্ঞ মুসলমান দর্শক মজা লুটে তালি মেরে!
দোযখে পাঠায় একে অপরেরে 'কাফের' ফতোয়া দিয়ে,
ইসলাম গেছে ইহাদের পৈতৃক সম্পদ হয়ে!
মাজহাব লয়ে ব্যবসা ফেঁদেছে মাথামোটা, অজ্ঞান,
এক ইসলাম ভাঙিয়া উহারা করেছে একশখান!
ঐক্যে ফাটল লাগিল – এদিকে পাগল আলেম ভাবে –
“রাতারাতি হব বিখ্যাত, হেন হয়েছে ভবে কে কবে?”
কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে এরা আনে জাতি মাঝে বিদ্বেষ,
ভন্ড আলেম! জাতির শত্রু! – মেরে কর সব শেষ!


গোল নাহি মেটে,  - যুগযুগান্ত গেল কত পার হয়ে,
কাক-শকুনের বিবাদ চলিছে ভাগাড়ের পশু লয়ে!


মুসলিম সব এক হয়ে যা – আল্লার ফরমান!
ভেদাভেদ আনা নিষেধ জাতিতে – পড়ে দেখো কোরআন!


লম্বা দাড়ির হুজুর বাবাজি কোরআন গেলে দুলে,
বোঝে না কোরান, শুধু চেঁচাইয়া মুখে এরা ফেনা তুলে –
“অমুক দলের আলেম অজ্ঞ! – পড়েনি মাদরাসায়,
কোর্ট-টাই পরে অমুক আলেম, দেয় না জুব্বা গায়!
আরে! ও ব্যাটার দাড়ি কই? – ব্যাটা কি বুঝিবে ইসলাম?”
জানেনা খোদায় যারে ভালবাসে তারে দেয় দ্বীনি জ্ঞান!
আল্লার প্রতি ভালবাসা কি হে দাড়ি, জুব্বাতে থাকে?
আল্লার প্রতি প্রেম-শিখা জ্বলে তার প্রেমিকের বুকে!
লম্বা চুলেতে মুমিনের কভু ইসলাম নাহি যায়,
ইসলাম, – ও তো আত্মত্যাগের মধ্যে প্রকাশ পায়!
আল্লায় কারা ভক্তি-শ্রদ্ধা করে আল্লায় জানে,-
কাহার হৃদয় নিত্য মগ্ন রহে প্রভুর ধ্যানে।
বিপ্লবী-স্রোত কার খুনে বয় জানে অন্তর্যামী –
ময়দানে কারা নামিল কায়েম করিতে তাঁহার বাণী!
এরা নির্ভয়, এরা দুর্জয়, প্রকৃত মুসলিম,
প্রভু মনোনীত বিপ্লবী! – বুকে বাজে কোরানের বীণ!
জালিমের মনগড়া নীতি ভেঙে মানবমুক্তি চায়,
মানুষের তরে হাসিতে হাসিতে অকাতরে প্রাণ দেয়!
দুস্তর পারাবার পার হয়, লঙ্ঘে পাহাড়-বাধা,
রক্তে লিখিয়া যায় এরা ইতিহাসের নতুন পাতা!
ইহাদের ‘পরে ঝরিছে খোদার রহমের বারিধারা,
হুজুর বাবাজি কোরান পড়েও হইয়াছে পথহারা!
কল্লা দুলায়ে কোরান পড়িছে, কোরআন নাহি বোঝে,
“কোরানের রাজ!” – যদি শোনে – জুব্বা গুটিয়ে পালিয়ে বাঁচে!
আধেক কোরান মেনেছে ইহারা, অর্ধেক নাহি মানে,
স্বার্থ হাসিল করিছে ইহারা কিতাবে ঈমান এনে!
ইসলাম মানে বোঝে ওরা শুধু মণ্ডা-মিঠাই খাওয়া,
মা'ফিলের নামে চাঁদাবাজি করে অর্থ হাদিয়া পাওয়া!
ইসলাম মানে বোঝে দাওয়াতে খেয়ে মোটা খাসি হওয়া,
জানে না ক' ইসলাম মানে হল বাতিলের আঘাত খাওয়া!
বিপ্লবী ইসলাম নাই ওয়াজে, শেয়ালের হাঁক হাঁকে,
রাজপথে যদি নামিতে কহে, তো বেড়ালের মত ডাকে।
কোরান বুঝিতে গেলে কহে ও নাকি আমাদের কাজ নয়,
কোরআন নাকি বুঝিবে আলেম, পন্ডিত মহাশয়!
ব্যাটা! কোরআন নাযিল হয়নি আলেম ওলামা তরে,
তামাম মানবজাতির জন্য এল বিশ্বের দ্বারে –
বয়ে নিয়ে অমৃত-সুধা কোরআন মানুষের ঘরে ঘরে,
ভন্ডামো ছাড়ো! রেখো না মানুষে কোরআন হতে দূরে!
আলোকরশ্মি সূর্যের নহে তোমাদের শুধু একার,
কোরানের আলো তোমাদের নাহি কাড়িবার অধিকার!
খোদার কোরান হতে দূরে রেখে বুঝিতে দেয় না খোদায়,
খোদার আদেশ বোঝে না মানুষ, জানেনা খোদা কি চায়!
আল্লাহ আর বান্দার মাঝে মোল্লা দাঁড়িয়ে রয়,
সেই মোল্লারে লাথি মেরে দূর করার এসেছে সময়!


**********************************


আজ মরিতেছে মুজাহিদ ধুঁকে জালিমের কারাগারে,
গুলি খেয়ে রাজপথে আজো শত সত্য সেনানী মরে।
মৃত্যু কি কভু দ্বীনের অগ্রযাত্রা  রুখিতে পারে?
মৃত্যু কি পারে সত্য-কণ্ঠ দিতে স্তব্ধ করে?
এক মুজাহিদ মরে আর শত মুজাহিদ ভূমি ফুঁড়ে –
বের হয়, - এরা জালিম-তখত কাঁপাবে রে হুঙ্কারে!
ইসলামী আন্দোলনে কি কভুও স্তব্ধ করা যায়?
জেল-জুলুম আর ফাঁসি, গুলিতে তো আরো বেগবান হয়!
নহে! নহে!  আর নতশির নহে! – মরিস নে হতাশে,
মুসলিম দ্যাখ মাথা তুলে দ্বারে অগ্রপথিক হাসে!
সত্য-প্রদীপ লইয়া এসেছে, গায়ে খুনরাঙা বাস,
মুখের সে হাসি মুছিতে পারেনি শত মরণের ত্রাস!
ঘুমন্ত জাতির বক্ষে পথিক! আঘাত হানো! আঘাত হানো!
ঘুণে ধরা এই জাতির ভিত্তি ভাঙো লাথি মেরে ভাঙো!
আগুন লাগিয়ে ঘরে ঘরে আজ নিদ্রাতুরে জাগাও!
হায়দরি হাঁকে মড়ার জাতির মরণ-ঘুম ভাঙাও!
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে ওঠ্ সবে নব জীবনের গান,
শহিদি পেয়ালা পিয়ে মুজাহিদ করে নব উত্থান!


সত্য মশাল জ্বলিয়া উঠিবে পৃথিবীর দেশে দেশে!
মুক্তি-বার্তা লয়ে ইসলাম রবি উদিবে আকাশে!


(টীকাঃ


*)”এক ধাক্কায় আসাদুল্লায় ভাঙে দূর্গের দ্বার” –
খায়বরের যুদ্ধে ইহুদীদের কামূস দূর্গ জয় করার জন্য রাসূল (স) ওমর (রা) ও পরে আবুবকর (রা) কে পাঠান। কিন্তু এরা সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তখন রাসূল (সা) বললেন – “কাল আমি এমন একজনকে পতাকা দেব যাকে আল্লাহ ও তার রাসূল ভালবাসেন। আল্লাহ তাঁর হাতেই দূর্গ জয় করাবেন। তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাবার নন।“
পরদিন মুহাম্মদ (স) হযরত আলী(রা) কে ডেকে তার হাতে ঝান্ডা তুলে দেন এবং বলেন –“যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর বিজয় না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়ে যাও।“
এরপর হযরত আলী বীরবিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে কেল্লার দ্বারদেশে গিয়ে পৌঁছুলেন। এমন সময়ে এক ইহুদীর ধাক্কায় তার ঢাল হাত থেকে পড়ে হারিয়ে যায়। তখন নিজেকে রক্ষার্থে এক ধাক্কায় কামূস দূর্গের দ্বার ভেঙে ফেলে তা হাতে তুলে নিয়ে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ করা শুরু করলেন। তাঁর এ বিক্রম দেখে ইহুদিরা সন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়!


*)”অশ্বপৃষ্ঠে সাদের বাহিনী হইত দজলা পার” –
আবু উবাইদা ও মুসান্নার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী পারস্যের কিসরা বাহিনীকে পরাজিত করে পারস্য দখল করলে কিসরা বাহিনী মহাবীর রুস্তমের নেতৃত্বে পুনরায় একত্রিত হয়ে মুসলমানদের উপরে আঘাত হানার প্রস্তুতি নেয়। হযরত উমর (রা) এ সংবাদ পেয়ে নিজেই মুসান্নাকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। কিন্তু মজলিশে শুরা খলিফার সিদ্ধান্ত অনুমোদন না করায় সর্বসম্মতিক্রমে হযরত সা'দকে সেনাপতি করে পাঠানো হত। সা'দের রণনৈপূন্যের কাছে পারস্য বাহিনী নাকানিচুবানি খায়।
মুসলিম বাহিনী যখন পারস্য বাহিনীকে এক এক করে পরাস্ত করছিল তখন সাদের নিকট খবর আসল শাহানশাহ ইয়াজদগির্দ রাজধানী  থেকে সব সম্পদ সরিয়ে নিচ্ছেন। এ সংবাদে দেরি না করে সাদ মাদায়েনের দিকে রওয়ানা দিলেন। কিন্তু ইরানীরা পূর্বেই দজলা পুলটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। এখানে এসে মুসলিম বাহিনী থমকে দাঁড়ায়। এ সময়ে সাদ সৈন্যদের উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। ভাষণ শেষ করেই তিনি নিজের ঘোড়াসহ উত্তাল দজলায় নেমে পড়েন। দেখাদেখি মুসলিম বাহিনীও তার অনুসরণ করে। তারা নদী পার হয়ে ওপারে উঠলে ইরানী বাহিনী এ দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করতে লাগল – “দৈত্য আসছে, দানব আসছে! পালাও! পালাও!”
সাদের এ আকস্মিক হামলায় হতভম্ব হয়ে বাদশাহ ইয়াজদগির্দ সমস্ত ধনসম্পদ ফেলে পালিয়ে যায়।


*)”ঝলসে উঠিয়া ঊর্ধ্ব-গগনে ঈশা খাঁ'র তরবার……..করে দিত চুরমার” -
সম্রাট ঈশা খাঁ'র দাপট তখন চারদিকে। কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির দূর্গকে রাজধানী করে গড়ে তোলেন বিশাল রাজ্য। রাজধানীকে সুরক্ষিত করার জন্য চারিদিকে চক্রব্যূহের মত তৈরী করেন কেল্লা। কেল্লাগুলো স্থাপিত হয় দেওয়ানবাগ, হাজীগঞ্জ, এগারোসিন্ধু, শেরপুর, রাঙামাটি প্রভৃতি স্থানে। শত্রুপক্ষ যাতে বিনা বাধায় রাজধানী আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য সর্বদিক থেকে সুরক্ষিত করে গড়ে তোলেন রাজ্য। ক্রমান্বয়ে ঈশা খাঁ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠেন যে পার্শ্ববর্তী রাজারাও তাকে যমের মত ভয় পেতে শুরু করে।
ঈশা খাঁ’র বীরত্ব ও শৌর্য সংবাদ চলে যায় তৎকালীন দিল্লীর সম্রাটের কাছে। সম্রাট শঙ্কিত হয়ে পড়েন। বাংলার সুবাদার করে পাঠানো হল শাহবাজ খাঁকে। শাহবাজকে ঈশা খাঁ শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।
এরপর ১৫৯৭ সালে মুঘল সেনাপতি মানসিংহ বিশাল বাহিনী নিয়ে ধেয়ে আসেন ঈশা খাঁ’র প্রতি। মানসিংহের আগমন সংবাদে বঙ্গবীর ঈশা খাঁ এতটুকু ভীত হলেন না।
মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আস্তানা গাঁড়লেন এগারোসিন্ধু দূর্গে। রাজা মানসিংহ নদীর তীর বেয়ে হাজির হন এগারো সিন্ধু দূর্গের নিকটে।
তুমুল যুদ্ধ হল। মানসিংহের জামাতা দুর্জয় সিং নিহত হল। অমনি প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া হয়ে উঠলেন মানসিংহ। দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহ্বান জানালেন ঈশা খাঁকে।
ঈশা খাঁও আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানসিংহকে আঘাত করতে বললেন প্রথমে। বললেন –“মুসলমান কখনো আগে আঘাত করে না। তুমি আগে আঘাত করো।“
মানসিংহ আঘাত করলে ঈশা খাঁ তা প্রতিহত করলেন। অতঃপর বললেন –“এবার আমার আঘাত সহ্য কর!”
এরপর ঈশা খাঁ তরবারি ঊর্ধ্বে তুলে এক আঘাত হানলেন। মানসিংহ ঢাল দিয়ে তা প্রতিহতের চেষ্টা করল। কিন্তু বীর ঈশা খাঁ’র এক আঘাতে তার ঢাল, তরবার সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। নিরস্ত্র মানসিংহ হতবাক। এই বুঝি তার প্রাণ যায়। কিন্তু মানসিংহকে অবাক করে দিয়ে ঈশা খাঁ তরবারি নামিয়ে জীবনশত্রুর কাছে গিয়ে বললেন –“নিরস্ত্রকে হত্যা করা ইসলাম ধর্মের রীতি নয়। এই নিন আমার তরবারি। শক্তি পরিক্ষা করুন শেষ পর্যন্ত। যুদ্ধের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে জয় পরাজয়। বেকায়দায় ফেলে শত্রু হত্যা করা ইসলামের রীতিবিরুদ্ধ।
ঈশা খাঁ’র বক্তব্যে মানসিংহ হতবাক। সারাজীবন যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়েছেন অথচ এরকম বক্তব্য শোনেননি কোনোদিন। ভাবলেন – “এমন বীরের সাথে আর যুদ্ধ নয়।
“আমি আপনার শৌর্যে মুগ্ধ, অভিভূত। আমি পরাজয় স্বীকার করলাম। সত্যিই আপনি অদ্বিতীয় বীর।“- বললেন মানসিংহ।
এরপর মানসিংহ কৌশলে ঈশা খাঁ'কে রাজি করালেন দিল্লী-সম্রাট আকবরের কাছে যেতে। সম্রাট আকবর তাঁকে যথাযোগ্য সম্মানে ভূষিত করলেন।  আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। সে অনুষ্ঠানে ঈশা খাঁকে মসনদে আলা খেতাবে ভূষিত করলেন।
এখানে এ ঘটনা উল্লেখের মাধ্যমে মুসলমানদের অতীত শৌর্যবীর্যের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।


*)”সাইফুল্লায় সাইফ হানিত যেইদিকে...................ভেঙে” –
ইসলামের ইতিহাসে অদ্বিতীয় বীর হযরত খালিদ (রা)। খালিদের রণকৌশল ছিল অসাধারণ। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন যুদ্ধ করতেন তখন দূর থেকে দেখে মনে হত খালিদ যেইদিকে অশ্বপৃষ্ঠে ছুটছে, সেইদিকে যেন শত্রুর ব্যূহ ভেঙে পড়ছে তাঁর তরবারির আঘাতে।
ইসলামের বড়বড় জয়গুলো তাঁর হাত ধরেই আসে।
৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মুতার যুদ্ধে বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে তিনি সাইফুল্লাহ (আল্লার তরবারি) উপাধি লাভ করেন।


*)”অশ্ব ছুটায়ে রাজপ্রাসাদের রুদ্ধ দুয়ার ভেঙে……….লক্ষ্মণে” –
ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয়ের মাধ্যমে এদেশে স্থায়ী ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয় ইতিহাসের একটি বিস্ময়কর ঘটনা।
বাংলার রাজধানী তখন ছিল নদীয়া। শাসন করতেন সেন বংশীয় রাজা বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষ্মণ সেন। এ অঞ্চলটি তখন বলা হত লক্ষণাবর্তী।
রাজ জ্যোতিষীর মাধ্যমে রাজা লক্ষ্মণসেন জানতে পারেন অদূর ভবিষ্যতে তুর্কি মুসলমানদের হাতে তার রাজ্যের পতন হবে। লক্ষ্মণসেন রাজ জ্যোতিষীকে বললেন – “কি করে সেই তুর্কি সেনানায়ককে চিনব? তখন রাজ-জ্যোতিষী বললেন – “তুর্কি সেনানায়ক দন্ডায়মান হলে তার হাত দুখানা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা হবে। আর দেখতে কুৎসিত হবে।
এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে রাজা লক্ষ্মণ সেন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিন কাটাতে লাগলেন। একদিন দুপুরে খাওয়ার সময়ে প্রাসাদ রক্ষী এসে খবর দেয় একদল তুর্কি অশ্বারোহী সৈন্য রাজধানী আক্রমণ করেছে। সংবাদ শোনামাত্রই কোনোরূপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে লক্ষ্মণসেন সেন পেছনের দরজা দিয়ে পলায়ন করে নদীপথে বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
১২০৩ সালে লক্ষ্মণাবর্তী বিজিত হলে বখতিয়ার খিলজী লক্ষ্মণসেনের পিছে ধাওয়া না করে নদীয়া দখল করেন। এরপর একে একে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ পুরো পশ্চিম ও উত্তরবঙ্গ তার শাসনাধীন নিয়ে আসেন।
এ বিজয়ে ঐতিহাসিক বিস্ময়কর ব্যাপার হক বখতিয়ার খিলজী অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে লক্ষ্মণাবর্তীর দিকে অগ্রসর হলেও তিনি এত দ্রুতবেগে অশ্ব পরিচালনা করেন যে মাত্র সতের জন অশ্বারোহী সৈন্য তাঁর সাথে আসতে পেরেছিল। এই সতেরজনকে নিয়েই লক্ষ্মণসেনের প্রাসাদ আক্রমণ করে দ্বারীকে পরাজিত করে তা দখল করে নেন।


*)”মামুলি সৈন্য লইয়া আসিয়া জিব্রালটারে…………কেঁপে ওঠে রডারিক”-
৭১১ সনের কথা। মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মাটিতে পা রাখলেন। উদ্দেশ্য একটাই – স্পেনের মাটিতে আল্লার কালেমাকে বুলন্দ করা। ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেয়া। মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করা। কিন্তু বাধ সাধল তৎকালীন স্পেনরাজ রডারিক।
কুফরের ধ্বজাধারী রডারিক সেনাপতি থিওডমিরের নেতৃত্বে প্রায় এক লাখের মত সৈন্য প্রেরণ করলেন তারিকেএ অগ্রযাত্রাকে রুখে দেবার জন্য। এদিকে তারিক এক অভাবনীয় কাণ্ড করে বসলেন। যেসব জাহাজে করে মুসলিম বাহিনী স্পেনে এসেছিল জিব্রালটারে নেমেই সেসব জাহাজে তারিক আগুন ধরিয়ে দিলেন। বললেন – “গভীর সমুদ্র আমাদের পিছে গর্জন করছে। আর সামনে অন্যায় অবিচারের প্রতীক বিশাল রডারিক বাহিনী। আমরা যদি পালিয়ে যেতে চাই, সমুদ্র আমাদের গ্রাস করবে। আর যদি সামনে অগ্রসর হই, তাহলে ন্যায় ও বিশ্ব-কল্যাণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা শহিদ হব, নয়তো বিজয়মাল্য লাভ করে গাজী হব। এই জীবনমরণ সংগ্রামে কে আমার কাছে অনুগামী হবে? মুসলিম বাহিনীর প্রত্যেক সৈন্যই বজ্র-নির্ঘোষে তাকবির দিয়ে সেনাপতি তারিকের সাথে ঐক্যমত পোষণ করল।
অতঃপর তুমুল লড়াই হল। একদিকে তারিকের মুষ্টিমেয় সত্যের সৈন্যগণ। আরেকদিকে সাগরের জলরাশির ন্যায় রডারিকের বিশাল সৈন্য।  কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল তারিকের এই ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান মুষ্টিমেয় ১২০০০ সৈন্যের কাছে রডারিকের বিশাল সৈন্যবাহিনী নিমিষে মাটিতে মিশে যায়। স্পেন করতলগত হয় মুসলিম বাহিনীর!)