তোকে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে
শুধু সামনে তাকাবি!
উপরে উঠতে গেলে শুধু সামনে তাকাতে হয়!
শুধু সামনে।
তোর মা সামান্য পয়সা বাঁচাতে
রোজ ভোর হতে রাত্রি অবধি খেটে যায়।
সেদিকে তাকাবি না।
আমি দিনের পর দিন
একই ড্রেস পরে ভাঙা সাইকেলে রোজ অফিসে যায়
সেদিকে তাকাবি না।
এমনকি কোন মেয়ে ইশারায় কিছু বলতে এলে এড়িয়ে যাবি
তোকে অনেক দূরে যেতে হবে।
শুধু সৎপথে থাকবি আর মন দিয়ে পড়ে যাবি
খাড়া পাহাড় বয়ে উপরে উঠতে অনেক দম লাগে। বুঝলি!!


বাবা আমি পেরেছি! ছোট এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে পড়েছি
ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি।
আমাদের ভাঙা বাড়ির বদলে ডুপ্লেক্স উঠবে
তোমার সাইকেলের বদলে ফ্যাশনেবল গাড়ি থাকবে
মায়ের জন্য চার-পাঁচটা চাকরানী !!
আমি এখন আর পিছনের দিকে তাকাই না
শুধু দেখি সামনে। আমাকে অনেক দুরে যেতে হবে! অনেক দুরে.....!!


বিবেক বন্ধ করে অকারণে স্যারের পিছনে ঘুর ঘুর করতে পারিনি
তাই পরীক্ষায় সামনের সারি অন্যদের দখলে !!
সময় চলে যায় বয়ে আনে আরও দুঃসংবাদ
বাবা,তোমার দেওয়া শিক্ষা ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি !
সেদিন বিয়ের কার্ড নিয়ে এসেছিল নিপা
জলে ভরা চোখ নিয়ে বিদায় নিলো
দেখে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।
ওর শরীরের পারফিউমের গন্ধ এখনও নাকে লেগে আছে
না না! ওর সাথে সেরকম কিছুই হয়নি
শুধু নোট দিয়েছি আর নিয়েছি; ওদিকে সেভাবে দেখিনি।
তবুও মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়,সেইসব দিনগুলির কথা মনে আসে।


ফুটবল,ক্রিকেট খেলিনি,বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমায়নি
বইয়ের পাতায় মুখ গুজে শুধু পড়ে থেকেছি।
এ সমাজের নির্মম ব্যবস্থার অক্টোপাস
আমার বিবেককে হত্যা করেছে।
তাই বলে বিবেকের অসাড় শবের পাশে বসে
ক্রন্দনের ধ্বনিতে আকাশ বিদীর্ণ করিনি
ক্রুদ্ধ চোখে ক্ষোভের বারুদের গায়ে আগুন লাগিয়েছি
আমাকে অনেক দূরে যেতে হবে। অনেক দূরে...!!
এখন আদর্শ বিবেক স্রোতের মুখে ছুঁড়ে ফেলে
তোমাদের নগ্ন সভ্যতার মোহনায় এসে সুযোগের অপেক্ষায় আছি।
বিশাল একটা ঢেউয়ে চড়ে সহজেই পৌঁছে যাব দূরে! অনেক দূরে।


হ্যাঁ বাবা আমি পেরেছি!
জীবনের খাড়া পাহাড়ের বিশাল উচ্চতায় এসে দাঁড়িয়েছি
আমার এক সাইনে পাশ হয়ে যায় কোটি কোটি টাকা
ফ্যাশনেবল গাড়ি,লাক্সারী ফ্লাট, সুটকেস ভর্তি টাকা গিফট আসে
না না ঘুষ নয়! আমাকে ভালবেসে লোকজন দিয়ে যায় ।
আমাকে ওদের ভালবাসতেই হবে! ওদের সব ফাইল যে আমার হাতে!!


ওরা আমার সঙ্গ পেতে দাওয়াতের কার্ড নিয়ে ঘুর ঘুর করে
বাড়ির বদলে পাঁচতারা হোটেলের নিয়ন আলোয়।
সেখানে মেকআপের সুন্দর কারুকার্য রমণীদের গালে
ডালিম ফুলের রক্তিম আভা শোভা পায়।
হাসির ঝড়ের আঘাতে মদের পিয়ালায় টুনটুন শব্দ ওঠে
সে আওয়াজ হৃদয়ের দেয়ালে প্রতিধ্বনির ঝংকার তোলে।
নর্তকীর পায়ে ঘুঙ্গুর বাজে।
ব্যান্ডের তালে ফর্সা সুন্দর দেহের ঝাঁকুনিতে স্টেজ কাঁপে
চোখে বিস্ময় জাগে,ওঠে কামনার ঝড়।
তবু ছেলেবেলার সেইসব চেনা মুখ,
আমাদের সেই ছোট্ট বাড়ী, বাবার ভাঙা সাইকেল, নিপার জলে ভরা চোখ
সব একাকার হয়ে যায়।
না,না। না! এখনও আমাকে অনেক দূরে যেতে হবে।
হতে হবে আরও অনেক বড় মানুষ। অনেক বড়.......!!