পয়সাওয়ালা কতিপয় শকুনের শ্যান দৃষ্টি জায়গাটার উপর
এখানে আগুন লাগবে,জলের কল বন্ধ হবে,হবে আরও কিছু
কে দেয় আগুন সেখানে? কে পুড়িয়ে মারে মানবতা?
গোটা বস্তিতে দাউ দাউ জ্বলছে আগুন
ধূয়ার কুণ্ডলী আকাশে পাকিয়ে ওঠে
একটা ছেলে তার কান্না থামিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে দেখছে
প্রতিশোধের আগুনের কুণ্ডলী তার বুকের মধ্যে পাকিয়ে ওঠে।


তার মা বাবা আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে
পোড়া বীভৎস গন্ধ তার নাকে এসে লাগে
তার ছোট বোনটা কি পুড়ে গেল? কার সন্তান পুড়ে যায়?
সে কিছুই দেখে না,কিছুই শোনে না
অসহ্যতায় সে সরিয়ে নেয় চোখ।


একদিন একরাত যেন তাদের চোখ মেঘলা আকাশ
সারাদিন চোখ ফেটে শুধু জল ঝরে
গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে-‘কি দারুণ শিল্প এক!’
চোখের জল মুছে তারা উঠে দাঁড়ায়
এতটুকু এক আশ্রয়ের জন্য জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে না।


একদিন ঝকঝকে চাঁদের আলোয় সেই ছেলেটাকে
পোড়া ঘরগুলোর মাঝে  হাঁটুতে মুখ গুজে
কাঁদতে দেখেছিল তাদের একজন,যারা আগুন দিয়েছিল
কণ্ঠ গর্জে উঠেছিল,‘কোন শালা এখানে কাঁদে?’।
তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায় না
কে খোঁজে? বইয়ের ছেঁড়া পাতার খোঁজ কে রাখে?


অনেকদিন পর পাওয়া গেল তাকে খবরের কাগজে
পুলিশের অসংখ্য ডায়েরির মাঝে
যারা পুড়িয়েছিল তাদের ঘর আজ তারা আতঙ্কিত
সেই ছেলেটার বুক এখনও পোড়ে, এখনও সেখানে আগুন জ্বলে
অস্ত্রের প্রতিটি ট্রিগারের টিপে শীতল হয় তার বুকের আগুন।


খেয়ে না খেয়ে দিন গেছে, তার দিকে কে বাড়িয়েছে হাত?
দয়ামায়া সকলেরই আছে, পথের ছেলেটাকে কে করে দয়া?
আবর্জনার স্তূপে জমা হয় কয়েকটা প্রাণ!
তারা শুধু সংখ্যা মাত্র! কে দেয় তাদের দাম!
বকুল ফুলের গন্ধ,পারফিউমের গন্ধ তারা জানেনা
কখন কার জন্মদিন কেউ তার খোঁজ করে না
গ্রিল চিকেন,কাবাব তন্তুর রুটির গন্ধ শুকে তারা বড় হয়
বিফ স্লিজিংয়ের মতো ভেতরটা তাদের আগুন!


সে জানে পয়সাওয়ালা সেই শকুনদের দৃষ্টি এখন তার দিকে
তারা তাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখবে না
তবুও সে যে কয়টাকে পারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে
লাভ কি তাতে? আরও জন্ম নেবে দুই,চার,আট জ্যামিতিক হারে
যারা গণতন্ত্রের কথা বলে
কথায় কথায় দু’দশটা লাশ ফেলে তাদের আমরা মেনে নিই
যারা কলমের খোঁচায় পকেট ভরায় তাদের আমরা মেনে নিই
যারা সরকারী অফিসে হাত পেতে থাকে তাদের আমরা মেনে নিই
যারা মাঝ রাতে মাতাল হয়ে ফেরে তাদেরও আমরা মেনে নিই
কিন্তু যারা ঐসব লোকদের থেকে অস্ত্র হাতে লুট করে আনে
ছন্নছাড়া মানুষের জন্য,বঞ্চিত মানুষের জন্য
তাকে আমরা মেনে নেই না;অভিশাপ দিই!


সেই ছেলেটা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে ঘর ছেড়েছিল
আর দেখা হয়নি তাদের;বার বার মায়ের মুখটা তার মনে পড়ে
সে থাকে বিলাসিতায় হোটেলের রুমে নয়তো কারাগারে
বকুল ফুলের গন্ধ সে খুব পছন্দ করত
সে চেয়েছিল প্রিয়তমার খোপায় বকুল ফুলের মালা জড়িয়ে
এক বাহুর মধ্যে ধরে মায়ের সামনে হাসিমুখে দাঁড়াবে
নাকে এসে লাগবে বকুল ফুলের ঘ্রাণ! আহ্ !
অস্ত্র হাতে সে রক্তের নদীতে তুফান আনতে পারে
অথচ বকুল ফুলের মালা খোপায় জড়াতে পারে না।