(পূজার ছুটি পেয়ে চলে গেছে সবাই, আলস্য এবং উপার্জনের  তাগিদে থেকে গেছে অল্প কয়েকজন। মেয়েদের হোস্টেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাগল ছেলেটির প্রেমিকাও অন্য সব মেয়েদের মত ছুটির আনন্দ আর  মন খারাপের স্থানিক বিরহ নিয়ে ট্রেনে উঠেছে বেশ কিছু দিন আগেই। সেইসব দিনের কোন এক সন্ধ্যায় ছেলেটির সাদা কাগজ আর কলমের কথোপকথন।)  


তুমি ছাড়া এ নগরী বড় শূন্য মনে হয়।
জানি, তুমি আছ বহুদূরে,
আশেপাশে কোথাও পাবো না তোমায়।
আমাদের স্মৃতির প্রতিটি জায়গা
আছে নিথর হয়ে, চুপচাপ শুয়ে–বসে কাটাচ্ছে দিন ।


তোমার অভাবে আমার সামগ্রিক নারীক্ষুধা
আরো বড় হয়ে উঠেছে।
নারীকে আমি খুব ভালবাসি,
আমার দু’চোখ শুধু নারী খুঁজে ফেরে।
নারী ছাড়া আমার ভাললাগেনা কিছুই।
আকাশ, পাখি, ফুটপাত, হোটেল, ব্যস্ততা,
রাস্তার অর্ধনগ্ন পাগল,
নারী ছাড়া সবকিছুই যেন নিরর্থক ।


বৃষ্টির সঙ্গে আমার চাই নারী
আকাশের সঙ্গে আমার চাই নারী
শীতের হিমের সঙ্গে আমার চাই নারী
অসংখ্য মানুষ, ভিড়, ঠেলাঠেলি,
বাস, ট্রাম, হর্ন, শব্দ, কোলাহল,
সবকিছুর মাঝেও আমার চাই অন্তত একটি নারী।


নারী ছাড়া ভাল লাগেনা সিগারেট
নারী ছাড়া ভাল লাগেনা চা
নারী ছাড়া ভাল লাগেনা বিকেল
নারী ছাড়া ভাল লাগেনা ছোট্টশিশু
নারী ছাড়া ভাল লাগেনা রাস্তার ভিখারী
ভাল লাগেনা না কবিতা, গান,
নাটক, ছন্দ
লীগ, দল
রাজনীতি।
এমনকি সবচেয়ে বখাটে যে ছেলেগুলো,
যাদের আমি সবচেয়ে অপছন্দ করতাম,
তাদের আর অপছন্দ করতেও ভাললাগেনা ।
ভাগ্যিস আমি এখন ছাত্রী পড়াই,
নয়ত সেই রাস্তাও মনে হতো যুগযুগান্তরের,
বিরামহীন, ক্লান্ত, ঘামে ভেজা,
তীব্র অনিচ্ছার এক মানসিক যন্ত্রণা।
ছাত্রীকে দেখে আমার মাঝে একটু স্বস্তি ফিরে আসে।
ঠিক যেমন কিছু নারী ছিল বলে
আমি ডিসেম্বরের ছোট্ট আসরটি উপভোগ করেছিলাম
বিনম্র চিত্তে, সন্ধ্যে বেলার শান্ত পুকুরের মতন ।


দুপুরে ভার্সিটি গেইটে খেতে গিয়ে যখন
একটি নারীও চোখে পড়ে না,
সবকিছুই বিস্বাদ লাগে,
অথবা বিকেলে টিউশন এ যেতে,
সুরমা, মদিনা-মার্কেট, পাঠানটুলা, লন্ডনীরোড
পেড়িয়েও যখন একটি নারীও চোখে পড়ে না-
সবকিছুই ভীষণ অবাস্তব লাগে,
জরাজীর্ণ, মানিকবাবুর জেলেপাড়ার মতই জীবন্মৃত।


হঠাৎ ভুলেও যদি কোন একটি নারী এসে যায় চোখের সামনে,
এক গোপন প্রশান্তি বয়ে যায় বুক জুড়ে,
মনে হয় সমস্ত রিক্সা, সিএনজি, বাস, ট্রাক, বৈদ্যুতিক তার, কর্মব্যস্ত মানুষ, দরগা, মসজিদ
সবকিছুই সার্থক ।


মনে হয়, আরো বহুবছর টিকে থাকবে এই পৃথিবী,
অন্তত এই নগরী,
ঠিক পরক্ষনেই তোমার ঠিকানা জেনেও খুঁজি তোমাকে-
আমার একান্ত নারী ।।  


১২.০১.১৫
তপোবন, সিলেট