স্মৃতির উলে বুনে চলেছি সোয়েটার
একদিন কালের শরীরে পড়িয়ে হারিয়ে যাব।
তবে যে বা যারা আমায় বিকিয়ে দিল
তারা একদিন নিশ্চিত আফসোস করবেই করবে।
আমি ছিলাম কলকাতার কতটা বুক জুড়ে।

আমার ঘর্ঘর শব্দে
যে ছেলেটা বই থেকে মুখ তুলে দেখে নিত
দুদিকে বেণী ঝোলানো সেই মেয়েটা স্কুলে যায়।
চোখে চোখ পড়তেই মেয়ের গালে টোল
মুখ টিপে হাসে যেন শর্মিলা ঠাকুর
দেখা না দেখার ভান করে যে ছেলেটা
কেমন যেন নিজেকে ভেবে নেয়
সে বুঝি টালিগঞ্জের চোখেরমণি উত্তম কুমার।

ব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ বেলাইন যদি হই
পেটমোটা কেরানিবাবুর মুখ হয়ে যায়
ঠিক যেন পচে যাওয়া কমলালেবু।
হাত পা নাড়িয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কত কথা;
মাথা পেতে মেনে নিয়েছি সেই অবজ্ঞা।
সেই মানুষটা চিড়িয়াখানা ফ্রি তাই সপরিবারে
আমার পাদানিতে পা রেখে স্বস্তিতে বলে
ভাগ্যিস সুন্দরী ট্রাম ছিল
তাই ধনে প্রাণে এযাত্রা খুব বেঁচে গেলাম।
তা নাহলে খসে যেত কত পয়সার ঝঞ্ঝনি।

এক সময় কালিঘাট থেকে হাওড়া স্টেশনে যেতেন
ডক্টর ভট্টাচার্য তাঁর মা বাবার সাথে শৈশবে।
কাজল পরানো চোখে তাঁর লেগে থাকত,
আমায় ঘিরে এক আকাশ বিস্ময়।
আমার খুব ভালো লাগত।
হয়তো দুজনের এই ভাললাগায়
গড়ে উঠেছিল অদৃশ্য ভালবাসার একটা সেতু।
তাইতো আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে
অবিশ্রান্ত অনবরত লড়ে চলেছেন অসম এক লড়াই।

হয়তো থাকবনা আর এই শহরে
অন্য কোন শহরে দেখে যদি আমায় মনে পড়ে
তখন কেঁদোনা দুঃখ পেওনা।
যদি কখনো সত্যিকারের ভালবেসে থাকো
দস্তাবেজের ফসিলে আমায় দেখে নিও।