প্রিয় বানীব্রত বাবু-
               আমার স্কুলের বাংলা শিক্ষক। জানিনা আজ আপনি কোথায় ? কেমন আছেন? চিঠির কথা হলেই আপনার মুখ ভেসে ওঠে। পুরুফ্রেমের চশমা বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, মনের ভিতর আপনার  অবাধ আনাগোনা। এক্সরে প্লেটের মতন উন্মুক্ত করে বুঝে নিতেন মনের গোপন কথা। অন্য ক্লাস ফাঁকি দিলেও বানীবাবুর ক্লাস এক্কেবারেই নয়। কেমন করে জানি জ্ঞানের গভীরে অনায়াসে নিয়ে গিয়ে পড়ার সবটা বুঝিয়ে দিতেন। জীবন জুড়ে কৃতজ্ঞতাঁর ধূপ-সৌরভ আজো বয়ে বেড়াই। ক্লাসের কোন কোন সহপাঠী ঈর্ষাতে হয়তো জ্বলে যেত ।
              ক্লাস চলাকালীন নোটিশ এলো, বানীবাবু আপনি নিজে পাঠ করলেন –‘’ সামনে father’s day সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান । প্রত্যেক ছাত্র তাঁর বাবাকে একটা করে চিঠি লিখবে, এবং সেরা চিঠিগুলো সেই ছাত্ররা একে একে পাঠ করবে। থাকবে বিশেষ পুরস্কার।‘’ আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল, মাথা নিচু করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম । জানি এখন বানীবাবু আপনি আমার দিকে চেয়ে আছেন।  আমি সেদিকে চোখ রাখলেই হুড়মুড় করে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে আমার সব অভিমান। কারন, বাবা নিরুদ্দেশ, প্রায় আমার জন্মলগ্ন থেকে।  যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারপর আর ফেরেনি । অবশ্য কফিনে যে লাশ এসেছিল দেখান হয়েছিল মা অস্বিকার করেছিলেন বলেছিলেন – “উনি বেঁচে আছেন, একদিন ঠিকই ফিরে আসবেন ।“ তাই  মা  সাদা শাড়ি পড়েন না,  সেজন্য অনেকে অনেক কিছু বলাবলি করে । বানীবাবু আপনি আমাদের বাড়ির সবটা জানতেন।
             ক্লাশ শেষে আপনি ডেকে বলেছিলেন – তুই কিন্তু চিঠিটা লিখিস, তোর বাবা যেন ফিরে আসেন সেই স্বপ্নের আধার নিয়ে। তুই পারবি নিশ্চিত পারবি তোর ভিতরের কান্নাগুলো মুক্তোর মতন সাজিয়ে দিবি । দেখবি মিরাকেল ঘটে গেছে। সত্যি কথা বলতে উক্ত অনুষ্ঠানে সেটাই ঘটেছিল।


ইতি – আপনার অনিকেত
কৃষ্ণনগর, নদীয়া জেলা
*সেই চিঠি অন্য আর একদিন হবে।