কথা দিয়েছিলাম একদিন আমরা ফিরে আসব ;
দিন রাত্রির হাজার মাইল পেড়িয়ে আসছি
রাত ভোর সাত সমুদ্দরের ঢেউ ডিঙিয়ে
পাহাড়ের উঁচুনিচু চুড়া অতিক্রম করে আসছি
সূর্যের উদয় থেকে অস্তে ডানা ঝাপটে আসছি
নানা দিক দিগন্ত থেকে শুনছি ডানার পাখপাখালি
আমরা যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আসতেই হবে পবিত্রস্থানে ।


তখন দেখতে হবেনা হাতের ঘড়িটার দিকে
থাকবেনা সেখানে কারোর রক্তচক্ষুর নির্দেশ ;
শুধু দেখব কাকচক্ষু জলে রুপালী মাছের ঝিলিক
শরীরের যত অবসাদ সব নিমেষে হারিয়ে যাবে ।


নিত্যকালের যন্ত্রণা নেই, সময় থমকে যাবে
পড়শির বাঁকা চোখের চাহনি সেখানে থাকবে না।
থাকবে শুধু ফেলে আসা দিনের আলোর দ্যুতি
চাঁদের জোছনা শরীরে মেখে আমরাও আলোক দীপ্ত ।
বর্তমানের কুটিলতা ভেঙে দিয়ে নতুন দিন খুঁজে নেব ।
আমরা আমাদের হারানো স্মৃতির মনিমুক্তায় হব উদ্ভাসিত
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আসবই এসেছি অনেকেই, বাকিরাও এসো...


কেউতো বলবে চল ক্লাসে চল ।
ফাঁকা বেঞ্চগুলো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ।
ক্লাসরুমে চিৎকার করে বলব ... কেউ কি আছো ...
প্রতিধ্বনি শুনব একদেয়াল থেকে আর এক দেয়ালে
কেউ কি আছো ...  কেউ কি আছো ... কেউ কি আছো ...
স্মৃতির পোশাক খুলে সব্বাই হয়েছি জড়ো।
কাছে এসে কেউ কেউ ফিসফিসিয়ে চাপা স্বরে বলবে
এইতো আমরা সব্বাই এসে গেছি...


কেউ কেউ এই ইঁদুর দৌড় থেকে মুক্তি নিয়েছে ;
নিলাঞ্জন সৃজন সহিদুল ওরা আর কোনদিন আসবেনা ।
ওরা এখন পরম শান্তিতে মাটির নিচে গভীর ঘুমে;
গত বসন্তে ও ওরা রঙ মেখেছিল সারা শরীরে ;
বসন্তে পৌষ পরবে পলাশ কৃষ্ণচুড়ার বনে গিয়েছিল ।
সৃজনের গানে সেদিন আকাশ বাতাস হয়েছিল মুখরিত।
এবারে ওরা আসবেনা শুকনো পাতার মতন ঝরে গেছে ।


মনে পড়বে মনাদার দোকানে ডিম পোঁচ আর অমলেট
ধার বাকিতে চলে যেত দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছর ।
তবু মনাদা আর বউদির মুখে হাসি ফুরাতোনা ।
বলতো একদিন তোমরা নিশ্চয় সব ফিরিয়ে দেবে;
আজ এসেছে সেই দিন সব কিছু ফিরিয়ে দেবার দিন ।
আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এসেছি সবাই ফিরিয়ে দিতে ।


স্লো মোশনে ফিরে এসেছে কাঙ্খিত সেই দিন
আমরা সবাই নিশ্বাস নিচ্ছি প্রানভরে ...
শরীরের প্রতি শিরায় উপশিরায় পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন ...
আমরা পরিযায়ী পাখির মতন পালক ঝেড়ে  ফেলছি ...
আহ ... হাতে পায়ে নেই শিকল ...আহ ...মুক্তি
এমন একটা দিনের জন্য ছিলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।