বাবা অনিকেত,


            এটাই আমার প্রথম আর শেষ চিঠি ।অনেক চেষ্টা করলাম, তোমার সাথে থেকে যাব আমৃত্যু । কিন্ত পারছিনা; সাগরের ঢেউ বুক দিয়ে আগলেও দেখি তার চোরাস্রোতে আমাকে ক্রমশঃ বিসর্জনের দিকে নিয়ে চলেছে। ভিতরে ভিতরে কান্নাগুলো হিমবাহ হয়ে গেছে।আমি আর কাঁদিনা বরং হাসির মাত্রা বাড়িয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করি।তুমি অনেকটা জানো বা জাননা । আমি ছিলাম অনাথিনী বাবা মা কেমন জানতাম না । তোমার বাবা আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন বাড়ির অমতে । আমার নাম দিয়েছিলেন কমলিনী । মুক্তি মিলেছিল অনাথ আশ্রম থেকে; সংসার পেলাম বটে কিন্ত পরিবার আমাদের ত্যাগ দিলো। তখন থেকেই শপথ নিয়েছিলাম আমার এই সংসার একদিন হয়ে উঠবে সকলের যৌথপরিবার ঠিকঠাক চলছিল তাল কেটে গেল তোমার বাবা যখন হটাত মাঝগগনে অস্তাচলে চলে গেল চিরতরে । তোমাকে নিয়ে শুরু হলো কঠিন লড়াই । কখনো হারি কখনো জিতি, এইভাবে পৌঁছে দিলাম নতুন সূর্য ওঠা ভোরে। ভাবলাম দিন বুঝি সুন্দর হবে। মানুষ ভাবে এক আর বিধাতাপুরুষ লিখে যায় আর একরকম। পার হয়েও আমি যেন সেই ঘোলাজলে। আমি যেন সেই পরগাছা হয়েই রয়ে গেলাম! উঠানের সেই নিমগাছ যেমন ছিল ঠিক তেমন। যার ফল ফুল পাতায় বাকলে একদিন পুষ্ট হলাম তাকে ফ্লাট বানাতে কেটে ফেলতে হলো । তারপরেও তার রেহাই হয়নি তার সারাংশে বাড়ির আসবাবপত্র বানানো হলো । তোমাদের দোষ দেবনা আমার জন্ম যেমন আস্তাকুঁড়ে মৃত্যু হয়তো সেই আস্তাকুঁড়ে ।
            যখন এই চিঠি পাবে তখন হয়তো আমি অনেক দুরে । কি করব জানিনা । আমার যে কোথাও যাবার জায়গা নেই, একটা জায়গা ছাড়া। বাবুটা খুব ছোট আমার খুব নেওটা ও হয়তো খুঁজবে পাবে না কাঁদবে পরে ভুলে যাবে। বৌমার যত্ন নিও। আমাকে খুঁজবেনা একটা থালা বাটি নিয়ে এক কাপড়ে চলে গেলাম । ইশ্বর তোমাদের ভালো করুক মনে প্রাণে এই কামনা করি ।


ইতি – তোমার মা কমলিনী