অনেক দুরে আছি, ভীষন মনে পড়ছে
তুমি এখন কি করছো? নিশ্চয় ভাবছো আমার কথা!
আজ তুমি আমাকে পায়েস খাওয়াতে
বাগানের দুর্বা আর ঘরের ধান
আমার মাথায় তোমার দক্ষিন হাত
গন্ধরাজ লেবুর সাথে হালকা মাছের ঝোল
সাদা জুই ফুলের মত এক থালা ভাত
যা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়, সেটা তুমি জানো ।
বাবার কথা তুমি কক্ষনো বলোনি,
প্রশ্ন করলেও তুমি কোন উত্তর দিতে না
শুধু দেখতাম, চোখের কোনে বালির চিক মিকানি ।
কিন্ত আমি জানতাম,মানে বড় হয়ে জেনেছি,
তুমি হারিয়ে যাওয়া বাবার কথা ভাবতে ।
কেন যে তিনি আসবে বলে আর আসেনি
সেটা কখনো আমার কাছে প্রকাশ করোনি...।


বছরে একটা দিন ছিল তোমার একান্ত-আপন
সারাদিন তুমি পথের দিকে চেয়ে থাকতে
রাতে ছাদে একা একা পায়চারী করতে
সুন্দর সাদা থালার মত চাঁদকে দেখতেও না
এক দৃষ্টে সপ্তর্ষী মণ্ডলের দিকে চেয়ে থাকতে
তখন মনে হতো তোমাকে কোনদিন দেখিনি
তুমি যেন অন্য কেউ, অপেক্ষায় আছো অনন্তকাল ।
সেদিন রাতে লুকিয়ে দেখেছি আর এক রূপে
পায়ে আলতা কপালে সিঁদুর পরনে ঢাকায় শাড়ি
মাটির প্রদীপ জ্বেলে পুরনো বাক্সের তালা খুলে
কাগজের চিরকুট পড়ছো একমনে একধ্যানে ।
একদিন সুযোগ পেলাম চাবি হাতের মুঠোয়
বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে
চিঠিটা সাবরমতীকে লেখা কোন এক অরুন্কান্তির
এমনি এক দোল পূর্নিমায় সে নাকি ফিরে আসবে
সে কে? কে সাবরমতী? কেই বা অরুন্কান্তি ?
পরদিন সকালে তুমি সেই আমার সাধারন মা
তবে আগের দিন যা দেখেছি সেটা কি স্বপ্ন ?
স্বপ্নই যেন হ্য়............
কিন্ত প্রশ্নগুলো যে পিছু ছাড়েনা
তবে তুমি কি কুমারী মাতা কুন্তি, না সাবরমতী?
হয়তো হবে নয়তো না.....সব যেন মিথ্যে হ্য়
সত্যি এটাই তুমি আমার মা আমি তোমার সন্তান ।
দিন রাত ছুঁচ সুতোর সাথে ছিল তোমার বোঝাপড়া;
আমার ভবিষ্যত আলো করতে দেখেছি তোমার লড়াই
আঙ্গুলে রক্তফোটা দেখে ভয়ে চিত্কার করি – মা রক্ত
তুমি হাসতে হাসতে বলতে – ও কিছুনা তুমি মানুষ হও ।


আমি মানুষ হয়েছি মা, আমি এখন সফটওয়ার ইন্জিনীয়র
সাগর পার থেকে ডাক পেয়েছি,
এখানে এরা অনেক কিছু দিয়েছে
কিন্ত কেড়ে নিয়েছে আমার স্বাভাবিক সত্তাগুলি
তুমি বলে ছিলে না – তোর সুখেই আমার সুখ ।
সত্যি কি তুমি সুখী! বলনা মা একবার বল তুমি সুখী!....


ইতি...