বি এ পরিক্ষা শেষ হতে না হতেই
রক্ষণশীল বাড়ির সবাই কেমন চনমনে হয়ে গেল।
বাড়ির আনাচে কানাচে জল্পনা কল্পনা শুরু ।
''মেয়ে বড় হয়েছে, পাঁচজনে পাঁচ কথা বলবে।''
"ঠিকইতো অত সাধের রাজার মেয়ের ও বিয়ে দিতে হয়।''
তা ছেলে কি করে ? সরকারী নাকি বেসরকারী?
কোথায় থাকে? তোমাদের কি পালটি ঘর?''
"অত জানিনে, ওর বাবার কাকার বন্ধুর আপিসে কাজ করে?
কলকাতায় নিজস্ব বাড়ি; মনে হয়ে বনেদীই হবে।"
"খুব ভাল গো দিদি, দেখনা কবে থেকে চেস্টা মেয়ের জন্য,
এখনো কেউ এলোনা, আসে দেখে চলে যায় খবর দেয়না।''
তোমার মেয়ের মতন রূপে গুনে তো লক্ষ্মী সরস্বতী নয়!
আসি গো দিদি, ওদিকে সৃষ্টির কাজ পড়ে আছে।


ছবি বিশ্বাসের মতন পিছনে হাত রেখে,
একদিন জলদগম্ভীরে আমার বাবা বললেন-
সামনের রোববারের বিকেল ফাঁকা রেখো কাজ আছে;
কলকাতা থেকে মানুষজন তোমায় দেখতে আসবে।
মনে হোল তখুনি বলি - আমি কি বাঘ না ভালুক যে...
বুঝতে পেরে মলিনা দেবীর মতন আমার মা
আঁচল চোখে বললেন- মেয়েদের শ্বশুর ঘরই নিজের ঠাই।
আমার মনের ময়ুরবাহন স্বপ্নের পুরুষ তখন আসছে...
রাজবেশে অমলিন হাসি ছড়িয়ে সাদা ঘোড়ায় ছুটে আসছে...
নিমেষে চোখ বুজে রাখি, ঘোড়ার ক্ষুরধ্বনি ক্রমশ অস্পষ্ট  
চলে গেল সে ছায়া হয়ে মিলিয়ে যায় ঘন কুয়াশায়...
নির্জন পুরীতে একলা রাজকন্যা গীতবিতান উল্টে যায়।


সময় পাতা উল্টে যায় অতি দ্রুত। দেখাশোনা পাকাদেখা;
বিয়ের সানাই, বাসর, ফুলশয্যা, নতুন বাড়ি নতুন মানুষ।


একদিন বন্দিনী নায়িকা জানলায় শহরের সন্ধ্যা দেখছে।
হটাত চাঁপার গন্ধে ঘর ভরপুর, মুহূর্তে স্মৃতিতে বাড়ির কথা।
বাড়ির গাছে কি এখন ফুল ফুটেছে? সে গন্ধ এখানে কেন?
সন্ধানী চোখ গীতবিতানের পাতায় এসে থেমে যায়;
একরাশ স্বর্ণচাঁপা ফুলে পড়ার টেবিল যেন আজ কুঞ্জবন
২৪৬ পাতায় চিরকুটে লেখা- তোমার জন্য প্রিয় ফুল ।
ব্যস, মনের উঠানে একপশলা বৃষ্টি। কোকিল ডাকে, ময়ূর নাচে;
স্বপ্নের পুরুষ ময়ূরবাহন ধূসর, মনের মানুষের মুখ ভেসে ওঠে;
হাসি কান্না দুঃখে সুখে তাকে নিয়ে এখন বেশ আছি,
অর্ধশতাব্দী কোথা দিয়ে যে পেড়িয়ে গেল বুঝলামই না।