তোমার কথা মনে পড়ল। তুমি কাকভোরে ডেকে দিতে -বাবা হিমু, ঘুম থেকে ওঠ  এখনি যে বই পড়ার উপযুক্ত সময়। এখন একবার পড়লেই সবটুকু মাথায় রয়ে যাবে । প্রকৃতিতে এখন চলছে ব্রাহ্ম-মুহূর্ত’’ এই বলে জাগিয়ে দিতেন। খুব রাগ হতো । আর মনে মনে প্রচণ্ড গর্জন করতাম; তারপর নিজেই নিজেকে বলতাম -বাবা তুমি কিন্তু এমনি করেই আমার কাছে ভিলেন হয়ে যাচ্ছ । বড় হয়ে আমি এর প্রতিশোধ নেবই নেব। সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি। তুমি  আকাশের তারা হয়ে গেছ খুব তাড়াতাড়ি।  অগত্যা বাধ্য ছেলে হয়ে চাদর গায়ে জড়িয়ে বই নিয়ে বসে যেতাম, অমন সুন্দর ঘুমের রাজত্ব ছেড়ে ছুড়ে।  কি আর করি বল ।  যদিও আখেরে লাভ আমারই হয়েছে ফল  পেয়েছি সেই শিক্ষায়।
        আজ সকালবেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।  জানলা দিয়ে উত্তরায়ণের রোদ্দুর আমার পা ছুঁয়ে যেন জাগিয়ে দিল। মনে পড়ল ছোট বেলাকার কথা। আজ আমার ছেলে কিংসুকের চাকরির পরীক্ষা গীতবিতানে । অনেকদূর তাই কাল ও বলেছিল –‘’বাবা সকাল সকাল ডেকে দিও। তা নাহলে সময়মত পৌঁছাতে পারবনা।‘’ কেন জানি মনে হল, বাবা হয়তো উত্তরায়ণের রোদ্দুর হয়ে আমায় ডেকে বলল – ‘আজ আমার নাতির পরীক্ষা। ঘুম থেকে এখনি ওঠ, ওকে ডেকে দে ও তৈরি হবে সকাল সকাল। নয়তো লঙ্কাকাণ্ড ঘটবে।‘  বাবারা কি এমনি প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে আমাদের বারবার শিক্ষা দিয়ে যায়। হয়তো তাই! তোমাদের আশীর্বাদ আমাদের মাথায় থাকুক। তোমরা এমনি করেই চিরন্তনী সত্য হয়ে আমাদের সাথে থেকে যেও অনন্তকাল।