প্রেক্ষাপট: জন্মদিনে একটা কবিতা চেয়েছিলি I তোর ভালো না লাগলে আমার "কচু, হাতি,  ঘন্টা" (ধার করা) I যাই হোক  ভালো থাকিস মুখপোড়া আঠাশ !


(১)
প্রতিদিন খবরের কাগজটা মেলে ধরি চোখের সামনে
এ বছর শীতে অস্বাস্থকর বাতাসে ভারাক্রান্ত স্বাভাবিক জীবন…রাজায় রাজায় যুদ্ধ চলছে বহাল তবিয়তে...খেসারত দিচ্ছে উলুখাগড়ার দল...ফুটপাতে একটা অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়া গেছে..
ইত্যাদি, ইত্যাদি...
সর্বস্ব হজম করে দিব্যি বেঁচে আছি I
যেন জামার কলার ধরে আয়ুকে বাড়িয়ে নিচ্ছি নিজের ইচ্ছেমতো I
দাঁত মাজি I চুপচাপ বসে থাকি I ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্ধ শুনি I
অন্ধকারে গুহ্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ছুঁয়ে দেখি I
প্রগলভতা I নাকি ঠুনকো লজ্জাবোধ I


(২)
আজ একটু অন্যরকম I
মা বললে 'তোমার মঙ্গলার্থে পুজো দিয়েছি, ভালো থেকো'
'ভালো আছি' শব্ধগুলো বৈদ্যুতিক তারের নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে দরজায় আছাড় খেয়ে পড়ল I
কি জানি মা শুনতে পেলো কিনা I
তারপর তোমরাও এলে I কেক কাটা হল I
আঠাশটা মোমবাতি দপাদপ নিভে গেল I
এত, এত আনন্দ আমি কোথায় লুকাবো?


(৩)
টিনের তোরঙ্গ খুলে পুরোনো আমাকে টেনে বের করেছি আজ I
হারিয়ে যাওয়া চিঠির বান্ডিল I
সেদিন এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজেছিল কলেজের রেলিং,
'আশা রাখি কাকতাড়ুয়া জীবনটা তোর কাছে একদিন সুন্দর হয়ে উঠবে' I


(৪)
জন্মকথা, ঠাকুমার মুখে শোনা I
মাঝে মাঝে ফিরে যেতেন অসংলগ্ন সেইসব অতীতে, "তোমার মদ্যপ বাপ্ পরে থাকত ঝোপঝারে I লণ্ঠন হাতে তোমার মা প্রায়ই খুঁজে আনতো তাকে-তারপর, তারপর একদিন, গরুর গাড়ির ক্যাচ ক্যাচ, ঝিঁঝিঁর কোরাস, যখন অদ্ভুত সংগীত সৃষ্টি করেছিল চারপাশে I"২৪ ই পৌষ, ১৩৯৬ I একটা বেজে নয় মিনিট I তুমি জন্মেছিলে I নাম দিয়েছিলুম অনন্ত, বিপুল I"
যদিও কিছুই থাকে না I যদিও কয়েকশো মাইল দূরের শোকস্তব্ধ মুহূর্তগুলো একটা জমাট নিস্স্তব্ধতা, একটা ভয়, গুমরে ওঠা বাসি কান্না I
তবুও জন্মদিন আসে, তোমার জন্য, তোমাকে কোলে করে সারারাত জেগে অসহায় গেরস্ত বউ I


(৫)
বিকট আওয়াজ করে একটা প্লেন
আমাকে টুকরো টুকরো করে উড়ে গেল I
কে যেন ডাকলে-
পিছনে কাঁকিয়ে ওঠে চাপ চাপ রক্তের আর্তনাদ I
(৬)
আত্মগত ভাবনায় বাড়ি ফেরার শেষ ট্রেনে আমি I
জন্মদিন শুভ হোক I