চোখেতে চশমা আঁটা, সুগভীর পূরু কাঁচে ঢাকা, বিষন্ন দৃষ্টি।
পিঠেতে বইয়ের বোঝা, ঝুঁকে পড়ে শিরদাঁড়া অসম্ভব চাপে।
এলোমেলো চুল, ধূলিমলিন, সকালের চকচকে কালো জুতো।
আধখোলা টাই, ভাবলেশহীন মুখে মাঝে মাঝে বিরক্তির ছোঁয়া।
চলেছে ঘরের পথে, দলে দলে, ক্লান্ত প্রান, দেশের হবু নাগরিকেরা
ইস্কুল পড়ুয়ার দল।


ঘরের দুয়ার থেকে অনর্গল প্রশ্নবান আসে ধেয়ে
অধীর মায়ের মুখ হতে, “কি করলি সোনা সারাদিন স্কুলে,
বল সবকিছু” ইত্যাদি, ইত্যাদি।
বিবর্ণ মুখে, বিভিন্ন সুখাদ্যের ভার, ঠেসে ঠেসে গোঁজা।
স্বল্প বিশ্রাম শেষে, আবার যে শুরু হয় লেখাপড়া কত।
পিছিয়ে পড়বে নয়, সকলের থেকে। তাই আসে, গৃহশিক্ষকের দল
অনাহুত দূঃস্বপ্নের মতো।


পড়া, পড়া এবং আরো বেশী পড়া, সারাদিন জুড়ে।
প্রতিযোগিতার খেলা, চায় না তো কেউ, এক পা পিছোতে।
প্রতিদিন একটু একটু করে, বেড়ে চলে
অবুঝ দায়িত্বের অপরাধবোধ, শিশুমন জুড়ে।
প্রত্যাশার ছাপ, ঘূণ পোকার মতো, মনের ভিতর কাজ করে।
অসহায় শিশুমন, পায় না রাস্তা খুঁজে, করবে সে কি যে।
অব্যক্ত অবোধ্য যন্ত্রণা।

ব্যাথা জাগে মনে, কোথায় হারিয়ে গেল সেই চপলতা, শিশুমন হতে।
শৈশব, কৈশোর, অচেনা শব্দ হয়ে শব্দকোষেতেই বেঁচে রয়।
শারীরিক খেলা ধূলো, মাপা জোঁকা হয় মার্কশীটে।
হয়েছে সৃষ্টি যত, অসহায় বাবা-মা ও অকালবৃদ্ধ সব শিশুদের দল,
সারা দেশ জুড়ে। হারিয়ে ফেলেছে কবে মানবিকতার সাথে
অবাক হওয়ার বোধটুকু।


তাই বুঝি আজ, কাঁদে যে নতূন প্রান, চিৎকার করে অবশেষে
“নিয়ো নাকো কেড়ে, দাও ফিরে হারানো শৈশব”।