পাগলি বুড়ী আঁধার সাঁঝে,
লম্ফ হাতে বেড়ায় খুঁজে
উঠোন জুড়ে, আত্মভোলা
এদিক সেদিক খুঁজছে ধীরে।
আপনমনে,  বিড়বিড়িয়ে নিজের সনে,
বকছে কিসব আবোল তাবোল।
শুধাই যদি, দেখবে কেবল চক্ষু সজল,
ফিসফিসিয়ে বলবে ধীরে
খুঁজছি আমার যৌবনেরে।
চমকে বলে, আঁচল টেনে
“সুনব্যি নকি, হামার কথা?
লিখিস কেনে, জানুক লকে,
বিটি ছানার, মায়্যা লকের
দুখটা কত, জম্যে থাকে
বুকের ভিতর জীবন ভর‍্যে,
কান্দার তরে।
শিশু কালেই হল্য বিহা,
রাত দুপুরে গরুর গাড়ি,
ক্যাঁচর ক্যাঁচর আস্যেছিল
বরযাত্রী অনেক কটা,
ডাকাইত লাগে পুরুত বেটা।
ফুঁকল বিড়ি,
ঘুম ভাঙ্গায়ে বসাই দিল
বিহার পিঢ়ায় সকল মিল্যে,
বইললো কানে, হাঁ দেখ বটে,
সামনে তুয়ার মরদ কেমন
ড্যাবড্যাবায়্যে ভালছ্যে তুকে।
হল্য বিহা, সসুর ঘরে
কচি হাড়ে, সমস্ত দিন
কামিন খাটা সইতে পারে?
উয়ার পরে রাত্যের বেলা
মিনসাটা ফের ঝাপাইঁ পড়ে।
তবু ভাল, কাট্যে গেল
কয়েক বছর এমন কর‍্যে,
আল্য ঘরে বিটা বিটি
ফুলের লাখান।
ঘরটো যেন স্বর্গ বটি
তার পরেতেই লাগল্য গ্রহণ,
মরদ গেল কাজের তরে,
বিদেশ বিভূঁই অনেক দূরে,
ফিরলো না আর।
খবরটুকু আল্য শ্যাষে।
খাঁল্য তাকে মদের বিষে।
জড়াই ধর‍্যে বিটা বিটি,
জীবন কাটে, যৈবনকাল,
খারাপ লজর সকাল বিকাল
সি সবের ল্যে বাঁচত্যে গিয়ে,
খাবার ছাড়া রাতটো কাটে,
দিনটো কাটে। অপুষ্টিতে
ধর‍্যল আমার প্রানের বিটি,
অসুখ হয়্যে গেল
সদর হাসপাতালে,
গেলই চল্যে ফিরলো না
আর হামার কোলে।
বিটা হামার হল্য বড়, বাপের পারা।
সকল দিকেই দম্যে লজর ঘরটো ছাড়া।
ধর‍্যল লেশা, কর‍্যল বিহা বাঁশপাহাড়ী।
ঘরজামাই সে, থাক্যে উয়ার সসুরবাড়ি,
হাইড়্যা বেচ্যে পেটটা চালাই, একাইঁ থাকি।
গাঁয়ের লকে বুল্যে বেড়ায় ডাইনী নাকি।
খিলখিলাইয়ে হাঁসি আমি অদের কথায়।
ডাইনী বটি মানুষটা খাই রাত্যের বেলায়।
ভাতটো জুগাড় কইরতে লারি,
মানুষ খাবো?
আমি নাকি ডাইনী বুড়ী!
তাইতো খুঁজি সাঁঝের বেলা লম্ফ লিয়ে
যৈবনটা পলাইঁ গেল্য
কিছুই না তার জানান দিয়ে।
খুঁজ্যে পেল্যে চটাই দিব
টাঙ্গির ঘায়ে, হিসাব লিব এমনটা সে
কইরল্য কেনে। বাঁচব্য ইবার
লতুন কর‍্যে লিজের মতন।
ডাইনী তো লয় মানুষ হয়্যে।