ইসকুলেতে লাগতো ভাল ভারি
শিখছি কত জানছি পৃথিবীটা,
ক্লাসের ফাঁকে হল্লা ভাব ও আড়ি
সাদা কালোয় জীবন সাদামাটা।


সেই যে হামলে পড়া মহুল গাছের নিচে গড়াগড়ি যাওয়া তীব্রগন্ধি রসালো ফলের হাতছানি।চারিদিকে লম্বা লম্বা শাল গাছের বাহার, আর মাঝে মাঝে স্টাফরুম থেকে বেরিয়ে অতি গম্ভীর মাস্টারমশাইদের বাঘের মত হাতে চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাসরুমের দিকে আসা যাওয়া। সাদা জামা কালো হাফপ্যান্টে, ‘অসতো মা সদ-গময়ো’ দিয়ে দিন শুরু। মাঝে স্যারের বকুনি বা অল্প বিস্তর পড়া না পারার শাস্তি। ঠিক দুপুরে উমেশদার ঢং ঢং করে বাজানো টিফিনের ঘন্টা এনে দিত মুক্তির স্বাদ। কি ফুর্তি, কি খুশী তখন। যেন আমরা সবাই রাজা।


ছোট্ট সরল মনের ইচ্ছে ডানা
শালের পাতায় হাওয়ার কথকতা,
শুধুই ছোটা হাঁটতে যেন মানা
কুটিল কিছু, এ মন জানে না তা।


টিফিনে মায়াবী জাদুকরের মতই হাতছানি দিয়ে ডাকতো গেটের বাইরে দাঁড়ানো লাল লংকা মাখা, তেঁতুল জল দেওয়া আলু-কাবলির খালা।সাথে ছিল ঘুগনি, ছোলা ভাজা, বাদাম ভাজার পল্টন। যদিও রেস্তর অভাবে প্রায়দিনই সেই সবের হেস্তনেস্ত করা যেত না। মাঝে মধ্যে বাবার বাজারের খুচরো থেকে প্রাপ্ত (অবশ্যই না বলে) দশ বিশ পয়সা, সেই অমৃত উদরস্থ করার সুযোগ দিত যদিও।


ক্লাসের ম্যাপে রহস্যেরই বাস
ফুটকি হয়ে শহরগুলো থাকে,
সংখ্যা তত্ব বরাবরের ত্রাস
অংক শেখা? খত দিয়েছি নাকে।


ক্লাসে ছিল প্রধানত তিন-টাইপের ছেলে। অতি ভাল, অতি খারাপ আর মাঝে আমরা মাঝারী টাইপ। মধ্যবিত্ত হওয়ার ট্রেনিং বোধ হয় তখন থেকেই শুরু। ভাল ছেলেরা শুধু পড়ার আলোচনা করত আর খারাপেরা পড়া বাদ দিয়ে সব কিছু। আমি এ ব্যাপারে প্রায় খারাপের দলেই পড়তাম। পড়ার বই খুললেই পেত ঘুম অথবা চোখ খুলে রেখে শুরু হতো স্বপ্নের দেশে ভ্রমণ। সদ্য পড়া গল্পের বইয়ের চরিত্রেরা সব হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিত।


বড় হওয়া শিখিয়ে ছিল সবে
মানুষ হওয়ার পাঠও ছিল বটে,
বড়? সে তো হয়েই গেছি কবে
মানুষ হওয়ার মন ছিল না ঘটে।


ইসকুল ইসকুল... বড় ভাল ছিল সেই সময়্টা... যেন এক রূপকথা সময়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দালান গুলোর যেন নিজের নিজের আত্মা ছিল, চরিত্র ছিল। বুকের ওম দিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে বড় করে তুলত আমাদের। আমাদের শেখাত স্বপ্ন দেখতে। ভালোবাসতে শেখাত ওই লাল কাঁকুড়ে মাটি, আগুন আগুন হাওয়া আর জলের মত সরল মানুষ গুলোকে।  


নেতিয়ে যাওয়া এই জীবনের মাঝে
ক্রিস্পি ক্রিস্পি সেই সময়ের রেশ
ফেরত আসে উদাস একলা সাঁঝে,
স্মৃতির ছোঁয়ায় ভালই আছি বেশ।।