মাগো একটিবার খিল খুলে দাও
বিশ্বাস করো, আমি কারো সাথে মিশবো না।
দূরে ওই কৃষ্ণচূড়ার অন্ধকারে দাঁড়িয়ে
একবারের জন্য ...
কেউ দেখতে পাবে না আমার
ছেঁড়া জামা , তালিব মারা প্যান্ট।
তুমি কাঁদছো?
আমি তো কিছু চাইনি মা।
প্রীতম এবার পাঁচটা জামা পেয়েছে
ঋষভ মনে হয় চারটে।
রণী, ঋজু, পিয়াস সবার নতুন জামা
কিন্তু আমি তো কখনো চাইনি তোমায়।
আমি তো জানি এসব আমাদের জন্য নয় ।
মনে আছে? সেবার বিষ্টু কাকা
আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল ।
বিশ্বাস করো মা, আমার কোন দোষ ছিলনা।
চোর-পুলিশ খেলতে খেলতে
ওদের খড়ের গাদায় লুকিয়ে ছিলাম,
অন্ধকারে আমাকে ভেবেছিল,
খড়ের গাদায় আগুন দিচ্ছি ।
কিন্তু মা আমি যে তখন আগুন জ্বালাতেই শিখেনি ।
সেবারও আর পুজা দেখা হয়নি।
ব্যথা তাড়সে সেকি ভয়ানক জ্বর
আর জ্বর যখন সারলো ততদিনে পুজো শেষ। আমাদের সাথেই এমন কেন হয় মা?
এবার চাঁদা দিতে পারেনি বলে
বাবাকে ওরা কত অপমান করে গেল।
আর সেই জন্যই তো আমারও পুজো দেখা বন্ধ! ওরা মনে হয় এতক্ষণে লুকোচুরি খেলছে,
কিন্তু আমি নেই যে, তাহলে কার মোর হবে?
ওরা তো সব সময় আমাকেই মোর করে।
খেলতে গিয়ে যদি কারো কেটে যায় ?
তাহলে কে দুর্বা থেতো লাগিয়ে দেবে ?
শ্বেতার ভাই পুচকু সেও তো
ঠাকুর দেখতে আসবে।
নতুন জামা পরে যখন টলমল পায়ে
গটগট করে হাঁটবে কি সুন্দরই না দেখাবে তাকে।
কিন্তু ওর যদি হিসু পায় ?
ইস্কুলে ওর হিসু করানোর দায়িত্ব তো আমারই।
পুচকু যদি নতুন প্যান্টে হিসু করে দেয়
তাহলে তো ওর মা খুব বকবে।
ইস আমি যদি থাকতাম ,
বিজন কাকাকে প্রসাদ এনে দিতাম ।
খোঁড়া পায়ে তো মন্দিরে উঠতে পারে না।
কষ্ট করে প্রসাদ আনতে গিয়ে
হয়তো বা আমার কথাই ভাবছে ।
তুমি এখনো কাঁদছো?
আচ্ছা মা,
দিদিমণি যে বলেছেন সবার দূর্গা এক।
তাহলে আমাদের আলাদা কেন?
বলো না মা আমাদের দুর্গা কবে আসবে?
যেদিন চাঁদা দিতে না পারলে
বাবাকে কেউ অপমান করবেনা।
নতুন জামা কিনতে হবেনা,
সবাই একসাথে লুকোচুরি খেলতে পারবো।
তুমি লাল শাড়ি পড়ে
সবার সাথে অঞ্জলি দিতে পারবে।
পেট পুরে সেদিন প্রসাদ খেতে পারব ।
বলোনা মা!
অন‍্য দূর্গা কবে আসবে?