যখন আমার বয়স আঠারো,
তুমি তখন ক্লাস নাইনেতে পড়।


থাকি আমি সেই আনন্দলোকে,
প্রতিবেশী তুমি রাতে দিবালোকে।


যেতে চার্চ ইস্কুলে দু’বেণী ঝুলিয়ে,
ঝড় তুলে তুমি হৃদয় দুলিয়ে।


চার্চের মাঠে স্কার্ট পরে ড্রিল,
সাইকেলে আমি উড়ন্ত চিল।


রোজ যাই আমি থ্রি-এ বাস স্টপে,
স্কুল থেকে ফেরা তুমি লপছপে।


রাতভর লিখি চিঠি’খানা পুরো,
প্রেম নিবেদনে আমি সেই হিরো।


চেয়েছিলে তুমি চোখে চোখ সাথে,
ছোট চিরকুট পেলে তুমি হাতে।


রবীন্দ্র আর জীবনানন্দে,
আমি জাগি রাত মজে আনন্দে।


সেই ভালোলাগা মা’র চচ্চড়ি,
টিউশন ফেলে খাই ঝালমুড়ি।


অষ্টমীপূজা অঞ্জলি সেরে,
ফাঁক দিয়ে দেখি তুমি সেই ভিড়ে।


পার করে দিন দু’বছর বাকি,
আমার জীবনে সেই কালবৈশাখী।


রাস্তার মোড়ে বেকার লাইফে,
দেখলাম তুমি দাদার বাইকে।


হাত দেখালাম দেখলে’না তুমি,
বুঝলাম ভেবে হয়তো দেখনি।


রাতজেগে বসি ছোট ব্যাল্কনি,
ছটফট প্রাণ সিগারেট টানি।


হাকুপাকু করি ছুটোছুটি করি,
ফকির’বাবার পায়ে গিয়ে পড়ি।


শুধু আমি শুনি ফকিরের বুলি,
পেলেম দুইশ টাকার মাদুলি।


মাথা নেড়ে দিল ঝাড়ুদিয়ে বাড়ি,
মাদুলি দেখতে বেশ ঝকমারি।


বিশ্বাসে পড়ি মাদুলি গলাতে,
চার্চ-ইস্কুল যাই প্রেমের দোলাতে।

পড়তি বিকেলে রোদ-মাখা বেলা,
সহসা কানুদা ধরল যে গলা।


দুমাদুম ঘুসি কিল চড় লাথি,
অসহায় আমি বেদনার সাথী।


মনের দুঃখে দুই দিন পরে,
হাজিরা দিলাম বাবার দুয়ারে।


জ্ঞানী কত দেখি আশার বিভোরে,
বেরোলে যে তুমি হাসি মুখ করে।

কানুদার সাথে হাত ধরে তুমি,
ছোট করে মুখ দাঁড়িয়ে যে আমি।


মাথা নত তুমি সেই শেষ দেখা,
শীতের দুপুরে আমি বড় একা।


জানুয়ারি শেষে আড্ডায় গিয়ে,
জানলেম আমি তোমাদের বিয়ে।


ছিঁড়ে আমি নিজ গলার মাদুলি,
পাথরের ঘায়ে ভাঙ্গলাম ঠুলী।


ছোট চিরকুট গোঁজা এক’খানা,
খুলে দেখি লেখা ফকির গণনা।


“দুষ্টামি ছাড়, কর পড়াশোনা”,
বিস্মিত আমি বিফল কামনা।।