আমি প্রগতিশীল তাই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করিনা,
তবুও গিয়েছিলাম মাদার হাউস,
মাদার টেরেসাকে দেখিনি,
দেখে ছিলাম শুধু তার নতজানু হয়ে বসে থাকা মূর্তিটি,
কৃতজ্ঞতায় তাকিয়ে ছিল কার দিকে জানিনা
হয়তো ঈশ্বরের প্রতি,


কে জানতো সেই রাতেই
আমার মনে মাদারের ওই মূর্তিটি প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে,
স্বপ্নেও নয়, হটাৎ করে ভাঙ্গা ঘুমে জেগে দেখি
বাইরে দ্যুতিময়, সম্পূর্ণ আলোকপ্রাপ্ত,
যথার্থ হৃদয়বান ঠিক যেন সবুজ বৃক্ষের মতো,
ঘর খানা জুড়ে সামনে নতজানু বসা মূর্তিটি
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল,
ঘর জুড়ে শিয়ালদা বস্তির দুর্গন্ধ
ভেসে আসছে তখন তার শরীর থেকে,
দুচোখে সজল ব্যাকুলতা
নীল পাড় সাদা মলিন শাড়িটা শত ছিন্ন মনে হোল,
হটাৎ করে কোলকাতা জ্যৈষ্ঠের
অকাল ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপছে তার ব্যক্তিত্ব,


ক্রমে তিনি উষ্ণ, অধীর হয়ে উঠে তাকালেন,
ভীষণ ব্যস্ততায় তিনি তখন,
পাশের শূন্য ফুলদানীতে একগুচ্ছ নেংটো শিশুদের
স্তবকের মতো গুঁজে দিলেন,


মুখে তার  কোনো অভিযোগ নেই,  
করুণাময় চাহুনি দিয়ে কিছু বলতে চাইছিলেন,
বোধহয় বাংলার দরিদ্র যন্ত্রণার মুক্তির কথা,
বাংলার দরিদ্র লোকের জন্য ব্যাকুলতা,
কোন জনসভার মঞ্চ থেকে নয়,
আমি অনুভব করলাম
তার সেই চাহনি আর নীরবতার ভাষাকে,
সারা বিশ্ববাসী অগোচরে,
যা-কখন কাউকে বলা হয়ে ওঠেনি,
যেন এতদিন ব্যস্ততায় পূর্ণ ছিল
তার মাতৃত্বের একটি মাত্র কোল,


তিনি বলতে চাইছিলেন,
ঈশ্বর কে দেখা যায় না ...
যেমন মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশু মাকে দেখতে পায়না,
ঠিক তেমনই --
পৃথিবীতে থাকাকালীন আমরা কেউ ঈশ্বরকে দেখতে পাইনা


---------------------------------------------------------------------
২০০০ সালের মার্চ মাস, আমার বেশ মনে আছে, তারিখটা আর মনে নেই। পরিবার কে নিয়ে Missionaries of Charity, Mother House Kolkata ও তার সাথে মাদারের Orphanages দেখার সুযোগ লাভ। সেখান থেকেই এই কবিতা লেখার সূত্রপাত।