গত রবিবার আমার চীনা বন্ধু মিঃ ওয়াঙ চুং থান-এর বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল। দুএকটা এদিক ওদিকের কথার পর সে জিজ্ঞেস করল, “ কি বন্ধু, তোমার চীনা কবিতা নিয়ে লেখার কি হল?”
বললাম যে লিখেছি কবি কূ ইয়ুয়ান-কে নিয়ে একটা প্রবন্ধ টাইপের।
“তা পড়ে শোনাও একবার,” আবদার করল সে।
অতএব, শোনালাম। বাংলায় লেখা, তাকে আবার ইংরেজিতে বুঝিয়েও দিলাম। বেশ খুশি হল সে।
বলল, “আমার দেশের কবিকে নিয়ে তুমি তোমার দেশের মানুষকে শোনালে, খুব ভালো লাগলো।” তারপর উঠে গিয়ে ওর বিশাল বইয়ের আলমারি থেকে একটা বেশ পুরানো বই নিয়ে এল।
“আজ আরেকটা গল্প শুনবে নাকি?”
বললাম, “যদি কোন কবিকে নিয়ে হয়, তাহলে একটু নোটস-ও নেবো বৈ কি। আপত্তি নেই নিশ্চয়ই?”
হেসে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলো তার কোন আপত্তি নেই। সামনে রাখা কোকা কোলার গ্লাসে একটা বড় চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল ওয়াঙ চুং থান। তারপর শুরু হল ছোট্ট একটা গল্প।
লী কংজীয়া ছিলেণ দক্ষিণ ট্যাঁঙ বংশের তৃতীয় রাজা। ৯৬১ থেকে ৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ তার রাজত্বকাল।  তিনি রাজা হিসাবে খুব একটা যোগ্য ছিলেন বললে ভুল বলা হবে। তাঁর রাজত্ব কালেই সং রাজা তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করে এবং দুবছর  বন্দী থাকার পর তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, আমি রাজার গল্প বলছি কেন? এটা তো কবিতা নিয়ে আলোচনার আসর।
না, আমি কবিতা নিয়েই লিখছি। লী কংজীয়া যাকে চীনের কবিতাপ্রিয় মানুষ লী য়ূ বলে চেনেন, তিনি অযোগ্য রাজা হলেও, উৎকৃষ্ট মানের কবি ছিলেন।
তার কবিতার দুএকটা নমুনা দিলাম অনুবাদ করে।  


১) চোখের জল


কত চোখের জল
তোমার গাল আর মুখ বেয়ে দৌড়ায়,
যখন দুঃখ কাঁদায়, তখন কথা বলতে চেষ্টা কর না,
যে বাঁশির সুর চোখে জল আনে, সেটাও বাজিও না,
তা হলে দেখবে,
নিশ্চিত ভাবে তোমার হৃদয় ভেঙে যাবে।


২) কাকেরা রাতে কাঁদে


গত রাতের ঝড় বৃষ্টির মিলে মিশে একাকার,
জানলার পর্দাগুলো শরৎ গানে খসখস করে চলে।
মোমবাতিটি প্রাণত্যাগ করে, জল ঘড়িটাও এখন ক্লান্ত।
তবু আমি কিছুতেই শান্তি পেলাম না।
মানুষের কাল বন্যা পানির প্রবাহের মত,
জীবনটা যেন ঠিক একটা স্বপ্নে ভাসমান।
আমাকে আরও ঘন ঘন মাতাল হয়ে চলতে হবে,
অন্যথা আমি জীবিত থাকতে পারবো না।


লী য়ূ তার স্ত্রী ঝাঁও হূই –কে ভীষণ ভালো বাসতেন। তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়লেন, কাতর হয়ে তার সমাধি পাথরে দুই শত শব্দের একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। তার একটা অংশও অনুবাদ করলাম।


“যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে,
সময়ের সাথে তারা যেন আরও দূরে চলে যায়,
সেই সুন্দরী নারীর প্রতি আমার প্রেম একই আছে,
যেমন ছিল সেই প্রথম দিনে।
তাকে চাই কিন্তু দেখতে পাই না আমি,
আমার হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যায়,
গ্রীষ্ম শীতে আমি বিদ্ধস্ত ,
এই পীড়া কি কোনদিন যাবে?”


জানি না আপনাদের ভালো লাগলো কিনা। সবাই হয়তো পড়বেনও না। কিন্তু যে গুটি কয়েক মানুষ আমার কবিতা ও লেখা নিয়মিত পড়েন, তারা নিশ্চয়ই এটাও পড়বেন। বিদেশী এক কবিকে নিয়ে আমার লেখা কিছু কথা পড়তে আপনাদের হয়তো খুব খারাপ লাগবে না।