আমি নিঃশব্দে চলে যাব,
যেমন নিঃশব্দে এসেছিলাম একদিন;
পশ্চিম আকাশের মেঘেদের
নিঃশব্দে বিদায় জানিয়ে।


নদীর ধারের গাছের সারি
সূর্যের শেষ আলোয় যেন নতুন কনে
শান্ত জলে রঙিন প্রতিবিম্ব
আমার হৃদয়ে উথাল পাতাল করে।


নরম মৃত্তিকায় নতুন তৃণের মূল
শীতল বাতাসে আলস ভাবে মাথা নাড়ে;
আমিও জলের আগাছা হতে চাই
ক্যাম নদীর শান্ত নীল জলে।


গাছের আড়ালে ছোট্ট পুকুরটা
শরতের জল ধরে রাখতে অক্ষম, কিন্তু একটা রামধনু
ওই গাছের পিছন দিয়েই ছুঁয়েছে আকাশ,
ঠিক যেন আমার স্বপ্নের রঙে রঙিন।


একটা স্বপ্নের খোঁজ? নৌকায় করে ভেসে যাই, বহুদূর,
যেখানে সবুজ ঘাস আরও সবুজ,
তারাদের আলোয় আলোকিত আমার তরী,
ঢেউয়ের তালে গান গেয়ে ওঠে মাঝ দরিয়ায়।


আমি আজ চিৎকার করে গান গাইতে পারব না,
নিস্তব্ধতাই আমার বিদায় সঙ্গীত;
ঝিঁঝিঁ পোকারাও আজ ভীষণ রকম চুপ,
ক্যেমব্রিজের এই বিকেলও আমার জন্য বধির।


আমি নিঃশব্দে চলে যাচ্ছি,
যেমন এসেছিলাম একদিন;
নিঃশব্দেই বিদায় জানাই তোমায়,
আজ, একটা মেঘের টুকরোও আমার পকেটে নেই।  


(৬ নভেম্বর ১৯২৮)


উপরের কবিতাটি চীন দেশের বিখ্যাত কবি জু ঝিমো-র রচনা। ১৮৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি হেনিং শহরে ওনার জন্ম। উনি তিয়াঞ্জিন ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯২১ সালে উনি ক্যেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়তে যান। সেই সময় তিনি শেলি, কিটস ও বিভিন্ন ফ্রেঞ্চ কবির কবিতা পড়েন ও চীনা ভাষায় সেই সব কবিতা অনুবাদ করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন চীনে যান, তখন জু ঝিমো দোভাষীর কাজ করেন। পরবর্তী জীবনে উনি বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩১ সালের ১৯ নভেম্বর বেজিং যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় ওনার মৃত্যু হয়। মডার্ন চীনা সাহিত্যে জু ঝিমো এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। ওনার লেখায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার ছাপ দেখা যায়। এই বিষয়ে আলোচনা সভায় আমার একটা লেখা আছে। কারুর মনে কৌতূহল জাগলে দেখে নিতে পারেন।