জেলের ভেতর এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়;
আমি বসে বেই দাও পড়ছি
ফাঁসির অপেক্ষায়।


একটা ব্রাজিলীয় চাঁদ, প্রিয় বন্ধু,
সামনের প্রহরীর মুখের
বাঁ দিক থেকে।
একটা ছুরি কেটে দিচ্ছে আমার দেশটাকে,
দুভাগে। রক্তের ফিনকি।
তাহলে পর্বত আর সমুদ্র কি?
হাঙর মাছ অলস ভাবে ডুব দেয় জলে,
উঠে আসে, তারপর,
ঠিক আমাদের ন্যাড়া মাথার মতো,
একটা স্কাল আর দুটো বুলেটের গহ্বর।
... আশাহীন একটা প্যারাসুট।
... রক্তহীন মস্তিষ্ক।
সো হোয়াট?
সাদা আর লাল, ডাক্তার আর ভগবান,
দুটো গ্লাবস,
মুছিয়ে দেয় চোখের জল,
অথবা, চোখের দল।


চাঁদ,
তোমার চোখ ক্ষত বিক্ষত করে গেছে।
জেলটা যেন পরশপাথর,
তোমার ভ্রু আর হাড়ের কাছে।


ও অন্ধ দাদা, শুনছ?
তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে,
তোমার স্বাধীনতা।
তবুও তুমিই আমাদের পথপ্রদর্শক,
স্বাধীনতার রাস্তায়।
স্বাধীনতা, অনেকটা সেই বেশ্যার মতো,
সকাল হতেই ফিরে গেছে।
রেখে গেছে কিছু ঘামের গন্ধ।
তোমার নাক খুব তীক্ষ্ণ,
সবার থেকে ভালো।
অনেকটা, পুলিশের কুকুরের মতো।


ও অন্ধ দাদা,
যদি তোমার হাতেও হাতকড়া পড়ে,
তাহলে কি তুমি, কুকুরের মতো
গন্ধ শুঁকে, এগিয়ে যেতে পারবে?
সেই বরফের উদ্দেশ্যে?



উপরের কবিতাটি চীন দেশের বিখ্যাত কবি লিয়াও য়ু-র রচনা।
লিয়াও য়ু ওরফে লাও ওয়েই, ১৯৫৮ সালে চীন দেশের সিচুয়ান প্রভিন্সে জন্ম গ্রহণ করেন। কবি ছাড়াও উনি লেখক ও সঙ্গীতকার হিসাবে বিখ্যাত। চিনের কমিউনিজমের বিরোধিতা করার জন্য ১৯৯০ সালে ওনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চীন সরকারের সম্বন্ধে চিনের সাধারন মানুষের সাক্ষাতকার নিয়ে লিয়াও য়ু একটি বই প্রকাশ করেন এবং প্রাকশের এক সপ্তাহের মধ্যে বইটি ব্যান করা হয়। ওনার লেখা কাব্যগ্রন্থ আর উপন্যাস ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, পোলিশ ও রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদিত।
১৯৮৯ সালে ওনার লেখা ‘হলুদ শহর’ আর ‘মূর্তি’ নামক দুটো কবিতা প্রকাশ পায় একটা বেসরকারি পত্রিকায়। কবিতা দুটো কমিউনিস্ট বিরোধী হওয়ার ফলে উনি সরকারের কু নজরে পড়ে যান।
১৯৮৯ সালে তিয়ানান্মেন স্কয়ারের ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ করে উনি ‘ম্যাসাকার’ নামে একটি কবিতা রচনা করেন। কোথায় প্রকাশ করতে না পেরে উনি একটা অডিও টেপ বানিয়ে সেটা বিলি করেন। এই কারনে ১৯৯০ সালে ওনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে থাকা কালীন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কারনে উনি দুবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ওনার স্ত্রী ওনাকে ছেড়ে চলে যান আর অন্য সাহিত্যিকরাও ওনার থেকে দুরত্ব বজায় রাখেন।
বহু চেষ্টার পর ২০১০ সালে উনি জার্মানিতে গিয়ে বসবাস ও সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তাছাড়া উনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করেন ও বাঁশি বাজান। বর্তমানে উনি জার্মানিতেই বসবাস করছেন।
২০০৩ সালে উনি ‘Human Rights Watch Hellman-Hammett Grant’ পুরস্কার পান। ২০০৭ সালে Independent Chinese PEN Center ওনাকে ‘Freedom to Write Award’ পুরষ্কার প্রদান করে। এছাড়াও উনি বিভিন্ন সময় বিভিন পুরষ্কার পেয়েছেন।
ওনার কিছু বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘For a Song and a Hundred Songs: A Poet’s Journey Through a Chinese Prison’ (২০১৩), ‘The Fall of the Holy Temple’ (১৯৯৮), ‘The Corpse Walker’ (২০০২)।