শীতের মাঝামাঝি
প্রকৃতির এক উদাসী বিষন্ন চেহারা
সর্বাঙ্গে ধূসর পান্ডুরতার আবেশ
গাছে গাছে পাতা ঝরার ডাক।


রোজ যেমন সকাল হয় আজও
তেমনি সকাল হয়েছে শীতের স্বতন্ত্র সাজে।


বাইরে কুয়াশার ঘন চাদর
জানালা খুলে দিতেই মুঠো মুঠো
হিমেল হাওয়া ঘরে ঢুকলো....
লেপের আরাম ছেড়ে উঠে পড়লাম ।
রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ
বেরিয়ে পড়লাম প্রাতঃভ্রমনে------।
গলির মোড়েই একটি গাছ আমলকির
শীতের হাওয়ার পরশ তার ডালে ডালে .....!
ঐ পথ দিয়েই যাচ্ছিলুম.........
মোড়ের বাঁক পেরিয়ে দেখতে পেলুম ......ভীড়!
না, কোন অভ্যর্থনার ভীড় নয়
রক্তমাংসে দলাপাকানো একটি
পয়ত্রিশ-উদ্ধ নিষ্প্রাণ দেহ,নিরস্র নির্বিকার ।
মাথার তলে রক্তের ধারা...!


শীতের হাওয়ায় আকাশে সূর্য উঁকি মারল অথচ
একটি জীবন অসময়ে চিরতরে স্তব্ধ
হয়ে আছে এই রাজপথে ।


....কখন যে আনমনা হয়ে যাই আর
মনে মনে কত কথার মালা গেথে চলি
একটু আগে যে ছিল এক প্রাণবন্ত যুবক
ছিল কোন পিতার আদরের পুত্র অথবা
সন্তানের জনক এক অন্তরঙ্গ পিতা,
দায়িত্ব পরায়ণ ভাতৃ .অথবা প্রিয় স্বামী ।
        @@@@@@@@@@@@@
        
একটু পরেই পুলিশের ভ্যানে চড়ে
সেই নিস্প্রান দেহ চলে যাবে পোষ্টমর্টেমের জন্য
আর শনাক্তকরণ না হওয়া অবধি পড়ে রবে মর্গে ।


সনাক্তকরণের জন্য হয়তো যাবেন পিতা
কিন্তু ,কষ্ট হবেনা চিনতে.....
গত পয়ত্রিশ বছর যাকে অন্তরঙ্গতার কত
মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন এক সুস্থির
ভবিষ্যতের জীবন পাবার আশায়...
কতবার পিতৃর আদরের হাত হয়ত আসস্ত
করেছিল আতুর ভালবাসায়।

সেই নিস্প্রান দেহ আনা হবে বাড়িতে...নিথর
হয়ে থাকা জীবন-সঙ্গিনী খুঁজে ফিরবে কত
আবেগ,উচ্ছ্বাস আর অশ্রু বিষাদ স্মৃতি।
মা, কান্নায়,আবেগে আদর করবেন
ক্ষতবিক্ষত অন্তরে আর বিদায় জানাবেন
নিস্তব্ধ গাঢ় নিদ্রায় স্নেহের পুত্রকে
তার অনন্ত যাত্রাপথে।
মাতৃর স্নিগ্ধ নিবিড় স্পর্শ আর অবারিত
  ভালবাসা জেগে রবে সৃষ্টির অনন্ত প্রবাহে।
  
  স্নেহের ভাতৃ হয়তো বিক্ষিপ্ত  ভাবে খুঁজে
  ফিরবে ঘাতককে,ভবিষ্যতে তৈরি হলেও
  হতে পারে অন্য কোন নিষ্ঠুরতার জন্যে।
  
  শশ্মানে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা
  লেলিহান শিখায়, আর স্বজন হারানোর
  বেদনায় উঠবে হাহাকার,বুকচাপা কান্নায়
  অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো হবে
  জীবনের চক্রতীর্থে কত না
  অভিজ্ঞতার বর্ণবৈভবে।
  
  আমরা শতাব্দীর লজ্জাহীণ অভিশাপ নিয়ে
  হয়তো নিরন্তর পালন করছি নিজেদের
  অজান্তে কতনা মৃত্যুর কালো স্রোত।
তাই, একটি সবুজ প্রানের অকাল মৃত্যুতে ছুঁয়ে
  যায় হৃদয় বিদির্ন করা চিতার অনির্বাণ অগ্নিশিখা ।
  
  হয়তো আমরা বেঁচে আছি প্রানের
  "অস্তিত্বের অধিকারে এক ক্ষয়হীণ আশায়
  এক মৃত্যুহীণ মর্য্যাদার" বিগলিত
নির্ঝর ধারায়....ততক্ষণ ! যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ ।