নুলো ভিখেরীর বড় ছেলে রোস্তমের বাবা
গায়ের রঙ কালো এক হারা গরনের, শক্ত দুটি চরণের  
সাদা মনের এমন মানুষ সহজে মিলে না।
শত কস্টেও অট্টহাসিতে ফেটে পরা মুখ
নিস্বার্থ ভালোবাসার সাগরসম বিশাল বুক  
সন্দেহ অনেক লক্ষপতিরও আছে কি না ।

বাঘের থাবায় এক হাত আর এক পা হারালে,
ভিক্ষের ঝুলি কাধে ঝুলে  নুলোর
সেই থেকে নুলো দিনে ভিক্ষে করে, রাতের বেলা সুর ধরে
সোহরাব রোস্তম, সোনাভানের পুথি পড়ে।  
নুলো ভিক্ষে তো আর সাধে করে না
জমি জিরাতের মধ্যে আছে শুধু ভিটে খানা
সেটুকু্রও বন্ধকনামা ডাক্তার বাবুর হাতে
হাত পায়ের ক্ষত সাড়াতে,ডাক্তার বাবুর পাতে
গেলো সব সম্পত্তি জমি জিরাত।  
রোস্তমের বাবার চুকে গেল স্কুলে যাওয়ার পাট
বই পত্তর ছেড়ে লাঙ্গল নিল ঘাড়ে
আহারে!
কত সখ ছিল ছেলে ম্যাট্রিক পাশ দিবে,
কলেজে যাবে স্কুলের মাস্টার হবে
সে সব স্বপ্ন স্বাধ কোথায় হারিয়েছে
এখন তো ছেড়া বালিশের নিচের মাটিখানাও খোয়াতে বসেছে।
বাপ দাদার ভিটে মাটি,টাকার দেনায় বন্ধকী!
মনে হলেই শিরদাঁড়া তরাক করে খাড়া হয় নুলোর
কবে যে দলিল খানা ফেরত পাবে, সে ভাবনায়
দিনের বেলা ভিক্ষে করে
রাতের বেলা গরু ছাগলের রশি পাকায়।
রোস্তমের বাবাও রাতদিন খাটে, টাকা জমায়  
মনের মাঝে এক পণ কঠিন
ভিটে বন্ধকীর দেনা শোধের শেষদিনটা কবে আসবে
বাবার ভিক্ষের ঝুলিটা তিনখাড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখবে
কবে সেই দিনটা আসবে?


রোস্তমও কি আর কম যায়
বাপ দাদার বুকের ব্যাথায়
সেও ব্যাথিত,লেখাপড়ায় কোন বল পায় না
ম্যাট্রিক পাশ দিয়ে  সে আর কলেজে যায় না
মাঠে ঘাটে কাজ করে আর হাসি মুখে গান ধরে জারি সারি
“কোন বা দিন ফেরত পাবো দাদুর ভিটা মাটি বসতবাড়ি।“  
গ্রামের সবচেয়ে বর্ষিয়ান প্রায় অন্ধ বুড়ি মা বলে
রোস্তমের মত এত সৎ চরিত্রবান ভালো ছেলে
লাখেও একটা মিলে কিনা সন্দেহ।
হাজার লাখ টাকা, হাতে দিলেও
একটা পয়সাও এদিক সেদিক  করে না।
গরিবের ঘরে এমন মানিক সোনা!
এ সংসারে
ক জনাই বা জন্ম দিতে পারে?


রোস্তমের ছেলে হেলে দুলে স্কুলে যায়,
নুলো ভিখেরী তাকায়
আর ভাবে
এইবার বুঝি এ ঘরের এক ছেলে কলেজের চৌকাঠ পেরুবে
হবে কোন এক বিরাট বড় ডাক্তার
হৃদয়বান মানুষ মেজর ব্যারিস্টার
ঝলকে উঠে অশতিপর মুখ
উথলে উঠে গর্বে ভরা  বুক
তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে,দূর আকাশের বলছে যেন কেহ
এমন সোনার ছেলে কোটিতেও একটা মিলবে কি না সন্দেহ।