অকস্মাৎ একটি দূরাগত অথচ অতীব নিকটস্থ
মিছিলের ঝাঁঝাল গন্ধে আমার ঘুম ভেঙে গেল--
দেখলাম মিছিলের অগ্রভাগে দীঘল শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত গালিভার'স ট্রাভেলাকৃতির একজন লোক
লিলিপুটিয়াম আকৃতির আমাকে
হাতের তালুতে উঠিয়ে
অদূরের সবুজ অথচ মানুষের কঙ্কালখচিত
পাহাড়টির দিকে এগুতে থাকলেন--
কিছুক্ষণ পরেই আমি--- আমাদেরকে আবিষ্কার করলাম ঠিক পাহাড়ের চূড়ায়----
নিচে ঘুটঘুটে অন্ধোকার----
যেদিক থেকে একটা সলিলীয় সলিলীয় শীতল আবহ উঠে এসে আমার নাকেমুখে ঠেকতে লাগলো...
বুড়ো গালিভার আলতো করে আমাকে ঢেলে দিলেন সে অন্ধোকারের দিকে---


যতই নিচের দিকে নামতে থাকলাম ততই
একটি অসহনীয় আলোর ফোয়ারা ফুটতে লাগলো আমার দুচোখে----
এদিকে আমি ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়লাম
মাকড়শার জালের মত--- বাতাসের গতির মত
সমুদ্রের বিস্তৃতির মত--
ক্রমে ঘন থেকে আরও ঘন হতে থাকলাম
আর ছড়াতে থাকলাম ভয়ার্ত অথচ
শীতাভ আলোর ভঙ্গীমায়---
মনে হলো কয়েক যুগ ধরে এভাবে আমি পতিত হচ্ছিতো
হচ্ছিই--- কোনো অতল গহব্বরের দিকে----
এরপর একদিন অদৃশ্য কারো করুণ ডাকে
কিংবা অচিন্তনীয় কারো উষ্ণস্পর্শে সমুদ্রের বিস্তৃতি নিয়ে আমি লাফিয়ে পড়লাম মহাশূন্যের চেয়েও বিস্তৃত এক অদ্ভুত আলোর হলকায়---


নিমিষেই গেঁথে গেলাম --- সুচাগ্র পেরেকের ন্যায়-----
এরপর কেউ একজন বৃদ্ধাঙুলির একরোখা চাপে আমাকে ধাবাতে লাগলো ক্রমাগত নিচে---
আ- র- ওওও----
নি
চে---
এভাবে---- ঠিক এভাবেই-- হয়তো
কতহাজার আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেছে জানা নেই---
এরপর আরেকদিন--- যেদিন আলোর অন্তরাল ভেদ করে আমি উত্থিত হলাম মহামরুর সীমানা বরাবর---
দেখলাম---
লাল- অথচ লাল নয়-- সাদা অথচ সাদা নয়-- নীল অথচ নীল নয়--- এমন একদল তীক্ষ্ণক্ষুরসম্বলিত আগুনে ঘোড়া আমার অর্ধগলিত কলিজার মাঝখানটায় টগবগ টগবগ ছুটছে---
অদূরেই
আরেকদল ক্ষুধার্ত শকুন ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে
লাল-শাদা রক্তের খোলসমাখা আমার দুটিচোখ--
আমার কণ্ঠনালী ভেদ করে বের হতে
চাইলো আকাশফাঁড়া চিৎকার---
কিন্তু একটি কোমল অথচ কাঁটার মত রোমশ হাত কয়েকলক্ষ টন ওজন নিয়ে অক্টোপাসের মত পেঁচিয়ে ধরলো আমার কণ্ঠ কিংবা তাবৎ শরীর---
আমার কাঙ্ক্ষিত চিৎকারটিকে না আমি  বের করতে পারলাম না পারলাম গিলতে --


দূর থেকে কেউ একজন তিরের শলার মত
দৌড়ে এসে জোঁকখোলার মত করে
এক জটকায় টেনে খুলে ফেললো সে দীর্ঘ-ভারী
প্রেতকায় হাতটি----
একটি সুস্পষ্ট নারীকণ্ঠের হুকুমে
আমি  চোখ খুললাম-
আর
নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটি ধবধবে
শাদা বিছানায়-- সটান-- ঠিক মাঝখানটায়--


মায়ের ছায়া-কায়া থেকে বেরুনোর পর
অর্থাৎ
দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময়ধরে নিয়মিতই
আমার ঘুম--- বিশেষ করে খাওয়ায় চরম অনিয়ম---- রক্তচাপ নিয়মিতই ১০০/৭০
গতকালই রক্তের চাপ নেমে আসলো নব্বই আর ষাটে- হিতাকাঙ্ক্ষীরা সাজেস্ট করলেন
কার্যকর------ অনেক প্রতিকার----
কিন্তু কে-কার! কে আমার-- আমিতো আমার
মতই বরাবর---
দশবছর আগেকার
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতই গিলে নিলাম
চার-চারটে ট্রাঙ্কুলাইজার---
রাতে রক্ত হিমকরা ঘুম--- সকালে কাজের
চাপ-- দানাপানি না নিয়েই ছুটলাম ঢাকা
থেকে দূরে - অথচ দূরে নয়---এমনস্থানে
ঘামেজলে গলদঘর্ম
কাজ শেষ----
অনেক কষ্টে বাসে চাপলাম---
বুঝলাম রক্তের চাপ ক্রমাগত আরও নামছে---
বাসের সিটেই এলিয়ে দিলাম নিজেকে-
এরপর আর কিছুই মনে নেই---- অথচ মনে আছে---
এখনও রক্তের চাপ নব্বই/ষাট বা আরও
কম---
আজ অবশ্য বাঁচার জন্য অ্যা বি সি ডি অনেক কিছুই খেলাম
কিন্তু স্টমাক অপরিচিতদের মেনে নিতে
পারছে কই!
ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই-- পানির সাথে সখ্যতা-
অথচ তুমুল বিরোধ---
বেঁচে থাকলে কালও-------