চাইলেই কবিতা লিখা যায় না কিংবা কোন সৃষ্টিশীল কাজ করা যায় না, এই পংক্তিটি আমার একটি কবিতার অংশ বিশেষ। কবিতাটি লিখার একটি যুক্তিযুক্ত কারণ অবশ্য রয়েছে । তীর এসে যখন কোন মানবের শরীর স্পর্ষ করে এতে করে তার শরীরের স্পন্দন মনের কাছে সাহায্যের জন্য বিনীত আবেদন জানায় তখন মন তাকে সমবেদনা জানাতে বাধ্য হয় । তেমনি আমার মনের ভিতরের লুকানো বিবেককে বাধা দিয়ে রাখতে পারলাম না, কারণ এখনকার প্রেক্ষাপট । শিল্প সাহিত্য একটি মৌলিক কর্মকাণ্ড  একে বেশি ঘষা-মাজা করতে গেলে এর আসল যে সৌন্দর্য তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আসঙ্কা থাকে । তবে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করার জন্য মানবের মনের ভিতরের বিবেক একটি বড় ভূমিকা পালন করে । কিন্তু যুগকে দোহাই দিয়ে এবং লোক দেখানো কর্মকাণ্ড দিয়ে আর যাইহোক শিল্প হয়না । কলমের মর্যদা কালি, এখন যদি কলমে কালিই না থাকে তাহলে এটি খোলস ব্যতীত আর কিবা হতে পারে । কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেন তাঁর একটি কলামে বলেছিলেন, লিখা-লিখিতে অবশ্যই ধ্রুবদী সাহিত্য পড়তে হবে আর এটি ব্যতীত সৃজনশীল কর্মকাণ্ড কোনদিন সম্ভবপর নয় । এর প্রেক্ষিতে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেছিলেন, কোন সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করার জন্য ধ্রুবদী সাহিত্য পড়ার দরকার নেই । তিন এর পক্ষে আরো পক্ষপাতিত্য করে বলেছিলেন, লালন কোন ধ্রুবদী সাহিত্য পড়েননি, তাই বলেকি লালন তার সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড করে যাননি । এখন এখানে কথা এসে যায় লালন কি করে তার সৃষ্টিশীল কাজগুলো করে গেলেন । এখানে তাত্ত্বিক বিষয় হল এই যে, লালন তার আত্মার (মনের মধ্যে যে বিবেক লুকানো রয়েছে) সাধন করতে সম্ভবপর হয়েছিলেন । পড়াশুনা করে জ্ঞানী হওয়া যায় কিন্তু উৎকর্ষ সাধন সেটি নিজস্বতার শামিল । আমার এক কবি বন্ধু তার সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড নিয়ে অনবরত সাধনা প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে, তার প্রথম উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সাথে মানবের সম্পর্ক নিবির করা । তার প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয় । লিখালিখির জগতে আমি যেমন উদ্দেশ্য ছাড়া বা নিজের অজান্তে প্রবেশ করেছি তেমনি বন্ধুটিও একই উদ্দেশ্যে গমণ করেছে । বাংলা একাডেমির একটি উদ্দেশ্যবহ কার্যাবলীর প্রথম প্রয়াস বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা সৃষ্টিশীল কর্মীদের উঠিয়ে আনা । এই প্রয়াস মহৎ এতে কারো দ্বীমত থাকা শোভনীয় নয়,কিন্তু কার্যত যাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে বাংলা একাডেমি তারা কতোটা মননশীল এবং তার বিবেককে কতোটা জাগ্রত করতে পেরেছে এটা প্রশ্নবিদ্ধ । কেননা আমি প্রথমেই বলেছি বই পড়ে জ্ঞানী হওয়া যায় কিন্তু কারো দ্বারা মননশীলতা অর্জন করা যায় না । আমার বন্ধুটি অনেকটা হতাশার সুরেই বলেছিল, সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড কি আর করবো তাদের অবস্থান নির্ণয়ে আমি সন্ধিহান ! তার এই কথাটি বলার যুক্তিযুক্ত কারণ আছে । আজ থেকে একশত বছর আগে যারা শিল্পের সাধনায় ব্রত ছিল তাদের লক্ষ্যে ছিল মানব উন্নয়ন ও  সুশৃঙ্খলভাবে গঠিত সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং এর যথার্থ ব্যবহািক কার্য । আমার মনে হয় কোন সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড করার জন্য নিজ স্বার্থ বাদ দিতে হবে । মনের গভীরের যে মানব সত্তা তাকে সুন্দর করে গঠন করতে পারলেই নতুন করে সুন্দর সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড মানুষের সর্ব বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারবে ।