সাত সকালে গগনতলে
আজি মেঘেরা জমায়েছে খেলা।
নীল গগনে আষাঢ় -শ্রাবণে
ঘন সঘনের মেলা।
শ্যাম বীথিকার শ্যামল ছবি
হেরিলে জুড়ায় প্রাণ।
অঝর ধারায় বারি ঝরে
নদেয় এলরে আজ বান।
এমন শ্যামল কোমল ছবি ছখানি
এঁকেছে  দুর গাঁয়ের এক ছেলে।
থইথই করা নতুন পানিতে
মাছ ধরে গাঙে জেলে।
নব বধু মুখে মধু
রুপ করে ঝলমল।
আষাঢ়ের সাথে মিলায়ে বুঝি
নামায় আজি রুপের ঢল।
গগন তার সঘন লয়ে
করিছে খেলা আজ।
দামিনী ডাকে চিত্ত চমকে
থেমে থেমে পড়ে বাজ।
ঘরের কোণে বরকণে
করিয়া পাড় মধুনিশি।
সাত সকালে দুজন মিলে
ঝরায় মুখে মধুর হাসি।
রাস্তার ধারে সারে সারে
হিজল,জামরুল ফুল।
অজানা আশার বাণীতে বুঝি
ভাঙে-গড়ে নদীর দুকূল।
কলমিলতার কুসুম খানিরে
করিয়া কানের দুল।
গাঁয়ের মেয়ে আপনারে রাঙায়ে
হয়েছে আজি মশগুল।
দেঁউরিতে আজ তুলিছে সাজ
কোমল হাতে নকশিকাঁথা।
নকশিকাঁথার কথা লয়ে
লিখছে কবি অমর গাঁথা।
গোয়ালঘরে কাজলা গরু
পয়লা বাছুর লয়ে আজ।
পয়লা গরুর ময়লা বাছুর
খুশিতে আজ জুড়েছে নাজ।
দামিনী ডাকিল গগন ভেদিয়া
নামিল ঢল আজি ভুবন ব্যাপিয়া।
নীরবে দাঁড়ায়ে তরু বীথিকা
ভেজাচুলে হেঁটে চলে শ্যাম বালিকা।
দলবেঁধে হেলেদুলে চলে হাঁসের দল
নামিছে অঝর ধারায় বর্ষার ঢল।
আষাঢ়ে গগনে শুধু ঝরে হায় পানি
নিশিদিন প্রতিদিন ডাকে দামিনী।
খাল-বিল বর্ষায় উঠিল  ভরে
বারি ঝরে চারিধারে জেলে মাছ ধরে।
ছাতা হাতে সোনা মিয়া শশুর বাড়ি যায়
পতিকে দেখে বধু মরে লজ্জায়।
নব ঘন বর্ষায় একা থাকি আমি
এতোদিন পরে কেন এলে গো স্বামী?
শিখী পাখাটিরে আজ বানায়ে মসি
লিখিছে কবিতা, কবি দেউরিতে বসি।
ভাবনায় বর্ষা  করিছে বুঝি খেলা
ঘরের কোণে এক্ষণে কচিকাঁচার মেলা।
কিচিরমিচির ডাকে ঘরে চড়ুই পাখির ছানা
মা পাখির মতো সে মেলিতে চায় ডানা।
ক্ষণেক্ষণে রবি জ্বলে আকাশের গায়
বিচিত্র রুপ দেখি নব ঘন বর্ষায়।
দেওয়ানির দেউরি ভরে গেছে লোকে
হুঁকো আর পান খায় গল্পের ফাঁকে।
বর্ষায় মাঠখানি হয়েছে হায় সাদা
রাস্তায় ভরে গেছে কালো রংয়ের কাঁদা।
শুণ্য মোর পরানখানি গিয়েছে ভরি
আমার আঙিনায় যখন ভীরল তব তরী।
তুমি এলে ফিরে হায় নব ঘন বর্ষায়
জাগিল পুলক মম মনের নব বসুধায়।
নয়নের নীর বুঝি পুলকে ঝরে
কতদিন পরে প্রিয় এলে হায় ফিরে।
জাফরানি শাড়ী পরে এল আজ রানী
জুড়াইল প্রাণ মোর শুনে মধুর বাণী।
ও মায়াবতী মোর মন হারিনী
তারে ছাড়া কাটেনি দিবস যামিনী।
বর্ষায় মন চায় ভিজিবার দুজনে
কত সাজ মনে আজ মধুর এক্ষণে।
নয়নের নীর বুঝি হয়েছে সারা
কাছে পেয়ে কত পরে মন দিশেহারা।
মায়াবী বদনে অপরুপ শোভা
হৃদয়ের রাণী মোর নয় ক্ষণপ্রভা।
ও মোর উষার আকাশ আমি তাতে রবি
শিল্পীর তুলিতে সে শ্যামলিমা ছবি।
কাজল নয়নে সয়নে স্বপনে
আঁকিতে দাও ছবি নিশিদিন গোপনে।
বর্ষায় তরির মাঝে  যায় নতুন বউ
রুপ তার যেন হায় ডালিম ফুলের মউ।
পলে পলে পুলকে আরশি লয়ে রানী
সাত সকালে আজি তার দেখে মুখখানি।
গুড়ুম গুড়ুম ডাকে মেঘ বাড়ছে হাওয়ার বেগ।
এরই মাঝে গান ধরেছে বাউল করিম শেখ।
ছন্দে ছন্দে মনের আনন্দে গাইছে বাউল গান
সেই গানেতে প্রাণ জুড়াতে ঝরায় বারি রঙিলা আসমান।



১০ আষাঢ় ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
গাজীনগর,পাথারিয়া,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ।