আমি বাংলার আকাশে নব ধুমকেতু
আঁধারে বাঁধিতে আসিয়াছি অমর অগ্নিসেতু।
আমার আকুল নয়নে অনল প্রবাহ বহে
অত্যাচারীর খড়গ হেরি পরাণে নাহি সহে।
আমি উল্কার বেগে চলি সমরে
খোলা সমশের বাঁধা মম কোমরে।
আমি ভয় ডরহীন উন্মাদ মম প্রাণ
আমি পাষাণ বুকে হাসতে হাসতে চালাতে পারি বাণ।
আমি খরস্রোতা পদ্মা,যমুনার ধারা
আমি আপনার তরে হতে পারি উন্মাদ, পাগলপারা।
আমি পাহাড় হেঁটে হতে পারি পার
আমি দেখাতে চাই আপনার হেতু শাণিত ছুরির ধার।
আমি অমর, অক্ষয় আমি বাসুকি
আমি নিবিড় যামিনীর দামিনী আমি চোখ রাঙায়ে পলে পলে যাই ধমকি।
আমি ভাই নিবিড় নিশায় দিশাহারা পথিকের পথের দিশারি
আমি দরিয়া মাঝে পাল তুলে চলা তরীর কাণ্ডারি।
আমি বিশ্বালয়ে অভয়ে চেতনার কেতন উড়াই
আমি আপনার তালে নভোতলে
নিশিদিন নেচে যাই।
আমি নভোনীলে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো পাখি
আমি অপরুপা ষোড়শীর কাজল কালো আঁখি।
আমি বিন্দু থেকে সিন্ধু গড়ি আপনার আপন মনে
আমি কখনও কানানল,কালবৈশাখী নিখিল এ ভুবনে।
আমি বিজন বনে আপনার মনে বাজাই প্রণয় বাঁশি
নিখিল ভুবনে মৃদু পবনে শুনি প্রিয়ার হাসি।
আমি পতিহারা পল্লীবালার অতীত প্রীতির স্মৃতি
আমি অত্যাচারিত,পীড়তের লাগি লড়ে যাই দিবা রাতি।
আমি জ্বলন্ত বহ্নি ফিনকি
আমি আপনার প্রলয় শিখায় দমে দমে চমকি।
আমি দূর্বাদলে টলমল ঝলমল শিশির
আমি আর্তনাদ, আহাজারি গৃহহারা পথবাসির।
আমি সদ্য ফোটা পদ্ম গাঁয়ের পুকুর জলে
ষোড়শী আমার পড়শি তারে হেরি নানান ছলে।
আমি বিশ্বমাঝে নিঃস্বজনের হাসি
আমি বেণু হাতে ধেণু চড়ানো রাখাল ছেলের প্রিয়ার হেতু স্বপ্ন রাশি রাশি।
আমি অতল সায়রে হাল ধরে তুলিয়াছি তরীর মস্ত মাতুল
নিত্য মোর চিত্ত চঞ্চল আমি বঞ্চিতের তরে বেজায় বাতুল।
আমি রাত্রি নিশীথে তরুণের সাথে দঙ্গল বেঁধে চলি
তরুণ ওরা অরুণ সম সূত স্বপ্ন গড়িতে বাঁধার দেয়াল পায়ে দলিতে বলি।
আমি রণ ভেরি বাজায়ে যাই সমর সম্মুখে
আমি উন্মাদ ঘোচায়ে যাই সব বাঁধ দাঁড়াই সদা রুখে।
আমি হিংস্র হায়েনা, আমি দাবানল, আমি কালাপানি
আমি উদয় অস্ত অসুর বুকে বিষের বিষাণ হানি।
আমি ভাই সপ্তসুরের রাগিনী
আমি মধুর সুরে ডেকে যাই আয় রে বাঘা বাঘিনী।  
আমি ধরার বুকে দুঃখ -সুখে শান্তির ধ্বজাধারী,
আমি অবনী পরে অসার অসুরের
চিরদিন দর্পহারী।
আমি কুসম কাননে মায়াবী আননে প্রিয়ার লাজুক দৃষ্টি
আমি চাতকের তরে কতকাল পরে আকুল আকাঙ্খার বৃষ্টি।
আমি বাহার, আমি নাহার
আমি কালাকাল আমি কালাপাহাড়।
আমি কালবেলা, আমি কালকূট
আমি অন্দর থেকে কন্দর করি সব হরিলূট।
আমি অনম্বর, আমি অনশ্বর
আমি আপনার তরে করি করতলগত নিখিল বিশ্বচরাচর
আমি অনশন,
আমি মানিনা অসার, অকাল, প্রহসন।
আমি বাংলার আকাশে নব ধুমকেতু,
আঁধারে বাঁধি আমি অমর অগ্নিসেতু।
আমি খরস্রোতা পদ্মা, আমি কালগঙ্গা
আমি গড়তে নাহি জানি,কেবল জানি ভাঙ্গা।
আমি আদমি,আমি কালনেমি
আমি আপনারে ছাড়া কারে নাহি নমি।
আমি নিত্য চিত্ত রে নব রুপে
আমি উড়াই বিজয় কেতন পুলকে ডঙ্কা বাজাই।
আমি বিজন পথে চলা উদাস পথিকর।
আমি উল্কা,আমি অগ্নিগহ্বর,
আমি নব ধুমকেতু কাঁপায়ে যাই সব থরথর।



রচনাকাল :১৫ আশ্বিন ১৪২৩ বঙাব্দ
দিরাই,সুনামগঞ্জ।
সকাল:১১:০০ ঘটিকা।