এ কবিতা সত্য ঘটনার উপরে রচিত । একমাত্র আদরের মেয়ে স্বেচ্ছায় দূরে চলে গেলে , মা বাবার কি অবস্থা হয় , তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । এবার কবিতা পড়ুন ।



বহুকাল পূর্বে  দেয়া নেয়ার এক পালা পর্বের সূচনা হয়েছিল  ।
নীলকণ্ঠ ফুলের নীলিমার সাথে, চোখ মন জুড়ে গিয়ে তাতে
প্রাণে মায়ার প্লাবন নেমেছিল । অঝরে .....
চোখ থেকে নেমে আসা ভালবাসার দৃষ্টি হৃদয়ে..
জড়বৎ হলেও তবু  প্রানবন্ত করতে পারে মৃন্ময়ে ।
নীলিমা মনে, স্নেহমাখা আদরের ঘর বানিয়েছিল ।
সেখানে ছিলনা কামনাসিক্ত কোন প্রবাহ,
যা মানবের মনে আনে তিলে তিলে প্রদাহ ।
সেদিন দূর গগনের নীলিমা ডেকেছিল আমায় ,
তার উদার স্বত্বটুকু ,ফুলে ধরা দিয়েছিল যথায় ।
কোমল অন্তরের গহীনে নিয়েছিল ঠাঁই, ঝর্ণা ধারায় ;
সে চোখে তন্দ্রায় জড়িয়ে প্রশান্তির কোলে ঘুম পাড়ায় ।


বুঝিনি এ করুণাধারা একদিন ঠেলে দেবে কোনে,
ফেনিয়ে উঠবে ধারা, লবনাক্ত হবে করুণাবর্ষনে ।
আবরণী ফেলে চোখ ও হৃদয়ের দূরত্ব বাড়াবে ।
মাটি কুড়ে বেরোবে গরল, মোহ ক্রন্দনে ভাঙবে ।
আমি খুঁজে বেড়াব তাকে হাতড়িয়ে বারংবার,
তবু আসবে না সে ফিরে, পথ অচেনা অন্ধকার ।


একদিন সুশীতল প্রাতে  নীলকণ্ঠ ফুলের নীলিমা
মন কেড়েছিল,
ঠাঁই নিয়েছিল অন্তরের অন্তরে , মন বনে ,
গহীন কাননে  সে
আপনমনে বেড়েছিল ...
উদলা গগনের নীলাবাসে নীল নদের সীমানায় বহুকাল ধরে ।
জানিনা, যাবে কিনা সে আজও মরনানন্ত 'পরে ।
চেয়েছিলাম শুধু নীলাভ মধুরিমা যেন এ জগতের...
সৃষ্টির লালিত্য আমার নাড়িযোগে বহে যায় ...
ও তার গুণগান করি একমনে বসে এ ধরায় ।
যেদিকে তাকায় যেন শান্তির সবুজ দ্বীপ এই কথা বলে;
যাবে নাতো আমায় ছেড়ে পরবাসে, যাবে নাতো  ভুলে ।
রতি-কাম এসে যেন সংলগ্ন মোক্ষম মুহূর্তে ..
আশীর্বাদ দিয়ে যায় দুজনারে ,এসে মর্ত্যে ।
পরীর সন্ধান নিয়ে ফুল কলি আসে যেন ধরনীর বুকে..
রাখব না ত' চোখের আড়াল করে ,রাখব অনেক সুখে ।
আমরা দুজন মিলে অখণ্ড বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির গাইব গান
লীলাখেলা উপভোগ করে যাব জীবনের ধূসর রঙে অন্তপ্রাণ  ।
এক মুঠো অশেষের ঋণ নিয়ে স্বচ্ছতার ঘর হবে নিরবধি ।
হেসে খেলে পাড় হব পার,জীবন-জল তরঙ্গের বিশাল বারিধি ।
তাই উর্দ্ধে দুহাত তুলে চেয়েছিলাম ছোট্ট উপহার,
যে এসে প্রাণে জড়িয়ে কোলে পিঠে করবে বিহার ।


এ ছিল 92' সালের এক রূপালী দিনের গভীর আবেগী
হৃদয়ের প্রার্থনা  ।
নব বর বধূর ছিল মনে মনে ছিল এই একমাত্র কামনা ।
চাঁদের চন্দ্রালোকে তখনও বুড়িমা জেগেছিলে সাথে..
কত আহ্লাদের কথায় মেতেছিল নিশাপথ যেতে যেতে  ।
মুখোপ'রে একরাশ জ্যোৎস্না ফেলে দিয়ে বলেছিল,
আসবে বাবা আসবে, তোমার ঘরে ,
অপরাজিতা আসবে,  আমার বরে ।


সে একবছর ছিল অসীম অনন্তের গননা ,
কি করে বোঝাই সময়ের উৎকণ্ঠার বর্ননা !
শেষে কোনক্রমে অতিক্রান্ত হল বছর,
নবজাত সুকণ্যা নিয়ে এল নূতন খবর ।
দিগন্ত ভাসিয়ে দিয়ে নেমে আসে পরী,
আমাদের আশা বোঝাই করে, এসেছিল তরী ।
কাঁচা হলুদের রঙ মেখে অবতীর্ণ হলো ,
নীলকন্ঠ ফুলের নীলাভ শিশুর নীলাঞ্জনায়  জুরালো ।
অসীমের আনন্দ ছিল নাগালের সীমানায় ,
তুমি দয়া দরবেশ, এসেছ মোদের আঙিনায় ।
নীলাঞ্জনার খুশিতে সমুদ্রের উচ্ছাসের ঢেউ ;
আছড়ে পড়ে ছিল মনের উপকূলে, ভেজে নি কেউ ।
সৈকতের বালিকনা গুলো চিকণ-স্বর্ণ মনে হয়েছিলো ,
বাড়ির লতিকায় নীলকণ্ঠ ফুল একদৃষ্টে তাকিয়েছিল ।
তার নীলিমা মেয়ের চোখে ফুটে উঠেছিল ।
জীবন তরঙ্গিণী মৃদু-মৃদু বাতাসে দুলছিল ।


কিন্তু সে দোলার তার ছিঁড়ে গেছে বাইশটি বসন্তের পর,
জীবন সাথী খুঁজে নিল নিজে, বহুদিন পর আসল খবর ।
পিতা মাতার বুক ফেটে চৌচির, কেঁদে কেঁদে গলা জড়ায় ,
দিবারাত্র কাটে নির্ঘুমে, কন্যা আসেনা ফিরে, আজ বড় অসহায় ।
নীলকণ্ঠ ফুলের নীলিমা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,
নীলকন্ঠ গাছ উপড়ে ফেলেছি, হৃদয় থেকে নীল চিরবিদায় নিয়েছে ।


বাবুল আচার্যী  14/06/2016