এই জায়গাটা সবুজের আঁচলে ঢাকা, নীরব ও শান্ত !
কমলাকান্তের অশান্ত মনটাকে করে উদার ও প্রশান্ত ।
এখানে প্রতিধ্বনি প্রতিবাদ করে না ;
এখানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসে না ।
গাছের আবডালের ছায়ায় একটি পাখি দেখে চোখ বুজে _
বসে আছে শান্তির নিকুঞ্জ খুঁজে ।
পাতায় পাতায় আন্দোলনে বোঝা যায়,
এখানে বইছে মৃদু মেদুর হাওয়া।
মাটিতে লুটোপুটি খায় ওদের খেলার ছাওয়া ।
পাখিটা বসে আছে শান্ত দীঘির জলের মতো,
মাঝে মাঝে ঢেউয়ের জল ওর ডানা ছুঁয়ে  যায় ।
শান্তির কান্তিতে কমলাকান্তের চোখ দুটো আজ পাখির মতো ।
ওর চোখে দেখে আজ সবুজ বনানী র বিপ্লব !
আমলকী, জামরুল, আম্রমুকুলে ভরা পত্রপল্লব।
মাঝেমধ্যে ঘাস ফরিং উড়ে যায়, ওর কাছ ঘেঁষে ।
লম্ফ ঝম্প দিয়ে, খেলতে খেলতে, হেসে হেসে ।
কি উচ্ছল প্রাণবন্ত ওদের জীবন !
এ খেলার খেলায় মেতে থাকে  আমরণ ।
সবুজ মিয়ামী ঘাসের সাথে কি প্রগাঢ় সখ্যতা ;
ঘাস ঘাসের আলিঙ্গনে ঝড় ওঠে মৈত্রীর বারতা ।


কমলাকান্তের মন প্রাণ উড়ে যায় কোন অলীক উদ্ভাবনে;
যেখানে সে দেখে _
বাতাসের হাল্কা ঢেউয়ে কত আভিজাত্য শব্দরা উড়ে বেড়ায় !
ওরা কথা বলতে চায় , ধরা দিতে চায় কারো মনে,
কারো বা স্বপনে, চিন্ময়ী আনন্দের বপনে।
শব্দের ও মৃত্যু ঘটে, শতাব্দীর গায়ে _
তাই আশ্রয় চায় কাব্যরসে র জলাশয়ে।
এখানে আসার পর ওদের কম্পন অনুভব করা যায়;
মিশে থাকে সবুজের পল্লীতে, পত্রপল্লবে, কুসুমে, হিমেল হাওয়ায়।
বাবুই পাখির খরকুটো ঘরে,বাতাসের দোলনায় ।
বৃষ্টির জলের সাথে ওরা ভেসে যেতে চায় না ,
থেকে যেতে চায় মানুষের মনে হয়ে নির্ঝরা ;
করে যেতে চায় সাহিত্যের জমিতে কর্ষণ উর্বরা।
কল্পনার আলপনায় যখন ওরা অঙ্কিত হতে চায়না,
তিতলির মত ফুলে ফুলে মধু আহরণে যায় ;
মধু খায়, বনে বনে শান্ত নীড়ে ঘুরে বেড়ায় ।
নিকুঞ্জ বনে রাধা কৃষ্ণের মত লীলাখেলা করে ;
কানের কাছে এসে গুণ গুণ করে হাল্কা হাওয়ায়।
ঝর্ণার কলতানে সুরে ঝঙ্কার তোলে, রাগ ভৈরবীর গান গায়
ক্ষুন্ন হয়ে শহর তল্লী ছেড়ে, শব্দরা এখানে ঘর করে _
উষার উষ্ণতায় সজীব হয়ে ওঠে সবুজের সাথে ।
বনগাঁর পল্লীতে, বাউলের মনকাড়া সুরধুনীতে।
এখানে ওদের আছে অস্তিত্ব ,আছে বিশ্বাস;
তাই বায়ু ভরে নেয় নিশ্বাস, ধীরে ধীরে বহে প্রশ্বাস ।
ওরা ধরা দিতে চায় অপলকে র পলকে ,
ধ্যানগম্ভীর লেখনীর ঝলকে, চাঁপা ফুলের কনকে;
এখানে শব্দের মৃত্যু হয় না !
এখানে নেই, দূর দূরান্তে লোকের বসবাস ।
নেই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কলকল উচ্ছাস;
এখানে সাগরের উতরোল ঢেউ ভাটার জলে_
সৈকতে তার পদচিহ্ন রেখে যায় না ।
এখানে বড় বড় বৃক্ষ পত্রের নরম ছায়ায়;
শব্দরা ঘুমায় মখমলী বিছানায় ।
এক আবেশীয় ঠাণ্ডায় মাতিয়ে রাখে ;
কি মসৃণ নমনীয় মাটির আবেদন ।
কমলাকান্ত ঘুম ভেঙে দেখে ওর গায়ে নেই আচ্ছাদন।


বাবুল আচার্যী  29/08/2019