শুধু শহরের নামটাই ছিল যথেষ্ট..
আমার বুকে তোলপাড় করার জন্য l
কোন একসময় শহরটা আমার কাছে ছিল_
অনন্ত আশা ভালবাসার এক বিপুল কাব্যরস সম্ভাব্য স্রোত।
শিলা রাশি রাশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারিদিকে সমস্ত চর জুড়ে ।
তার মাঝ পথ দিয়ে বইছে পুণ্য জলধারা ।
সেই স্রোতের ধারায় ছিল কারো পরশ ,কণ্ঠস্বরের কুলুকুলু ধ্বনি,
করতালির মত স্রোতের ঝপাট ঝপাট শব্দ ।
মৃদুমন্দ বায়ুর শীতল পরশে পত্র- দল - সমূহ খুশিতে_
যেন পেখম খুলে দুলছে ।
এ সব প্রশস্তি শহরের নামের সাথে
যেন তুমিই জুড়ে দিয়েছিলে
আর শহরটা লুকিয়ে ছিল
যেন তোমার আঁচলে ,সৌন্দর্যে , সৌরভে ও গৌরবে।
আর মেতে উঠেছে একদল মনে-প্রাণে তারি
উত্থানের জয়গানে ।
মন বারবার ফিরে তাকায় আর টেনে নিয়ে চলে যায়_
আমাকে জীবনের উজানে র  ঢেউয়ে ,যৌবনের সন্ধিক্ষণে ।
সময়ের হাত ধরে দেখা, আমার পিছু পানে_
কারো  পিছু টানে , ভালোবাসার কিছু গানে_
রাগ বিরাগের সুরে - বেসুরে ।
আজো কি এক অমোঘ আকর্ষণ ...
অনুভব করি অন্তরের গভীরে  ।


এখন 2018 সালের অন্তিম চরণ ।
অস্তাচলে সূর্যকে দেখে মনে হয়
দিনের কি করুণ পরিণতি!
বসে আছি মধ্যাহ্নে, কুহেলির চাদরে চারপাশ ঢেকে গেছে ,
উদার মরমী বাতাস শহরটার প্রাচীরে  ধাক্কা খেয়ে_
আমার মন ভিজিয়ে দিয়ে গেছে ।
সবুজ মিয়ামী ঘাসের মত তার আবেশীয় আবেদন ।
মনে হলো , এই মর্ম স্পর্শকাতর আবেগী বাতাস_
আমার বহু বছরের চেনা ও জানা ।


সংখ্যাতত্ব জীবনের সুখ- দুঃখ  ব্যাথার আধিকারিক বক্তা।
কয়েক সংখ্যার ওলোট পালটেই জীবনের_
পটভূমি র ও পরিবর্তন হয়ে যায় ।
দিবার আলোকে যে স্থান ঝকঝকে মনে হয়_
রাতের অন্ধকারে তাহা কোথায় হারিয়ে যায়!
সে কেহ বলতে পারে না ।
মনে পড়ে যায়, সপ্তরঙ্গী রামধনুর একেকটি রঙ ।
নীল সবুজ দিনগুলোর কথা ,
চোখ, মন ও হৃদয়ের হেমন্তের কথা ,
স্বপন বপনের কথা, তার অভ্যুত্থান থেকে পরিণতির কথা !


ট্রেনে করে যাচ্ছি তোমার শহরে ।
নরম কোমল স্পর্শ অনুভব করি যখনি পা রাখি
এই শহরের মাটিতে .......তোমার ভাটিতে ।
চঞ্চল হয় হৃদয়ের সংশ্লিষ্ট সমস্ত চেম্বার ,
অসংখ্য বুলবুলি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়
কে ছিলে তুমি, মনের মর্মভূমী ভালোবাসার উর্বর ভূমি,
থাকো এই শহরের মাটিতে !
মনে পড়ে যায়,... প্রথম সূর্য্যোদয়ের দেখা !
খেলা করে মনেরি সব রঙ্গ- রেখা,
মনের আয়নায় জীবনের দরবারে ।
সমুদ্রে উঠছে ঝড়, বুকে উত্তাল ঢেউ_  
তারি মাঝে আনন্দ বিহার ।
তোমার ভালোবাসা ছিলো......
কচি ডাল পাতার মত সবুজ জীবন্ত_
আকাশের মত এত উদার ও অনন্ত ;
খরস্রোতা তটিনীর মত উচ্ছল তরঙ্গ ..
এসব সুখানুভূতির সুরভি কতো
হৃদয় কথা বলে নিজের মনের মতো
নিয়ে যায় সজ্ঞানে অশরীরী মনকে
দূরে কোন উত্তর সাগরের পারে,
সবুজ বাগিচায়, নরম  বিছানায় ;
যেখানে সতত ফুরফুরে হাওয়া বয়,
বিষাদ ভরা সিন্ধু নিমজ্জিত হয় ।
বসে বসে অজানাতে মন কত কথা বলে;
শহরের গতির ছন্দে ছন্দে , বাতাসের মৃদু মন্দে ;
সে এক মনোরম অনুভূতি, শিহরণে জাগ্রিতি ।
ভালোবাসা ! তুমি কার সাথে না জড়িয়ে_  
পথ-ঘাট, যান- বাহন, সবুজ ,হলুদ ঝড়া পাতা, সবই
শহরের হৈ চৈ, ..তার ভাষা বোধ আচার বিচার l
এ সবই ছিল প্রাণের সখা ।


সময় পেরিয়ে গেছে, পুরোনো নৌকো টা ঘাটে পড়ে আছে ।
শহরের মাঝ পথ দিয়ে বইছে এখনও সেই বরাক নদী ।
যে শিলার ওপরে দুজনে হাত ধরে পাশাপাশি বসেছিলাম
সে শিলাটা খণ্ড খণ্ড  হয়ে নদীর তীরে এলোমেলো আছে পড়ে  ।
শিলার প্রতিটি খণ্ড সময়ের আখ্যান ব্যাখ্যা করছে ।
পাশেই আরো একটি বড় শিলা পড়ে আছে ।
সে শিলায় আজো সে এসে বসে অন্য পথিকের সাথে ।
পুরোনো পথ ও পথিক দুটোই আছে
শুধু পথিকের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে ।
হয়তো সময় ইতিহাস হয়ে থাকতে চায়
আমিও তাই এখন শুধু ইতিহাস !
তাই আমার ইতিহাস আমিই লিখে যাই ।


বাবুল আচার্যী    23/12/2018