একজন বীরের গল্প বলতে চাই
শুনবেন আপনারা, সময় আছে আপনাদের?
জানি শুনবেন না, শোনার সে সময় আপনাদের কোথায়?
আর কেনই বা শুনবেন?
তবুও বলছি-
মতি মাস্টার, পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার
সামান্য বেতনে সুখের সংসার ছিল যার,
হ্যা সেই মতি মাস্টারের কথা বলছি।
যে মতি মাস্টার রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি-
জীবনের ভয় ডর ফেলে ছুটে যেত
নেক্সট অপারেশনের চিঠি নিয়ে
সজ্জিত যোদ্ধার কাছে।
যে যোদ্ধার চোখে জীবন মানেই যুদ্ধ নয়ত মৃত্যু,
মতির একটা চিঠিই হয়ত এনে দিত যাদের মুক্তির স্বাদ।
সেই মতি মাস্টারকে ধরিয়ে দিয়েছিল
একদল হায়েনা, যারা মায়ের কোলে চড়ে
মায়ের বুকেই বসিয়েছিল ছুড়ি
সেই দালালদের তিক্ত কথার বাণে
ছিন্নভিন্ন হয়েছিল মতির হৃদয়
তিন দিন তিন রাত যাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল
কৃষ্ণচুড়ার ডালে,
সেদিন সে কৃষ্ণচূড়াও এতটুকু সহানুভূতি দেখায় নি তাকে,
এমনকি বেঁধে রাখা সে রশিও না!
সমস্ত শরীর বেয়ে ঝড়ে পড়েছিল তাজা রক্ত,
চোখের সামনে অশ্রুসিক্ত স্ত্রী, কান্নায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কন্ঠ,
এতেও এতটুকু মায়া দেখায় নি তাকে কেউ!
এমন কি দু’বছরের সেই সন্তানটিকেও কেউ করুণা করেনি
একফোটা পানিও দিতে দেয় নি মুখে।
ঐ দালালদের শত যন্ত্রণা আর আঘাতেও
যার কন্ঠ চিরে বের করতে পারে নি
নেক্সট অপারেশনের ইনফরমেশন।
কালের সাক্ষী হয়ে আছে জলঢাকার সেই স্কুল সেই বেদী
শুধু সেই মতি মাস্টার নেই,
সেদিন অকুতোভয়ী তাজা প্রাণ ঝড়ে গিয়েছিল প্রচন্ড আঘাতে!
আজ বাংলার বুকে এমন মতি মাস্টার খুব দরকার
শত সহস্র আঘাতেও যে বাংলা মায়ের
সম্ভ্রম ভুলন্ঠিত হতে দেবে না;
লাঞ্চিত হতে দেবে না কোন বোনকে।
পুড়তে দেবে না ঘর এমনকি সোনার সংসার।
একটু তাকিয়ে দেখুন চারপাশে
মতি মাস্টার কি জেগে নেই?
আছে, হাজারো মতি মাস্টার আজো জেগে আছে
শুধু তাদের মাঝে প্রাণের আবেগ নেই।
হয়ত কোন একদিন আবার ফিরে আসবে মতি মাস্টার
আবার রাতের আঁধারে ছুটে যাবে ডাকহরকরা বেশে
আবার সে জাগিয়ে যাবে অচেতন মানুষ গুলোকে
জয় বাংলা বলে...............।