(৩)
আমিতো আটকে পড়েছি খাঁচায়, ছটফট করে রাত,
অচিন শহর ঘুমিয়ে পড়েছে!
কয়েকটা শামুক ঝিমিয়ে হাঁটছে প্রাত্যাহিক মিছিলে,
অচিন শহর তন্দ্রাচ্ছন্ন, ঘুমিয়ে পড়েছে নিজস্ব নিয়মে!
তার বুকে নৈঃশব্দের বিস্ফোরণের মতো সুরম্য ভবনেরা,
একের পর এক গলে গলে গড়িয়ে পড়ছে গালিচার উপর,
উপচে পড়েছে পানপাত্র,
কোমল পানীয়ের প্রথম ফেনার মতো স্রোতে,
ডুবে গেলো বেশ কিছু নর্ডিক জাহাজ!
তবুও কিছুই আমি পারছিনা ছুঁতে আজ!
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর প্রাপ্য সেলের মতো আস্টেপৃস্টে
ঘিরে ফেলছে দেয়াল,
প্রাত্যাহিক রুটিনের ভারে সর্বস্বান্ত স্কুল পালানো যাযাবর
ছেলেটার মতোন পালাতে গিয়েও পুনরায় আসি ফিরে!
এখানে এখন দশদিকে ঘেরা ছাদ! এখানে এখন
লুকানো শ্বাপদের তর্জন গর্জন!
ভারী সীসার মতো অবরূদ্ধ বাতাস,
বিস্ফোরিত গ্যাসের সিলিন্ডারের মতো প্রাণঘাতী আঘাতে,
ঘিরে ধরে তোমাকে আমাকে!
সমস্ত মহান সভ্যতা মৃত এবং মৃত স্ববিরোধী সময়,
আটকে আছে মাফলারে ঢাকা অস্পষ্ট মাথায়!


(৪)
সচল লিফট হুট করে থেমে গেলে মাঝপথে
প্রতিটি মিনিট রাবারের মতো টেনে টেনে অনন্ত লম্বা হয়,
সে এক শ্বাসরুদ্ধকর সময়! বিস্মৃত ভীতি পুনর্জন্ম নেয়!
সেই সময়ের মতো আজকাল
লেকের ময়লা জলে এক পা ভিজিয়ে বসে থাকে
নাগরিক বিকাল! ওখানে তোমার ছায়া বসে থাকে
শুধু অনুপস্থিত তুমি পুরোটা সময়!
অসহায় গর্জনে বাতাসের সাথে কথা বলে কুকুরের পাল,
আমার দিকে সরাসরি এগিয়ে আসছে দেয়াল!
অনেকটা বৃহস্পতির বুকে কয়েকশ বছর ধরে জমা
অভিশপ্ত সাইক্লোনের মতো
দুম করে চলে এসে চেপে ধরে নাক মুখ গলা!
কিছুতেই ছাড়েনা, প্রাণপণে দেই বাঁধা!
সব নিরর্থক! তবুও সে অমর! সে গোধুলির বর্ণান্ধ আঁধার,
মৃতের নিঃসংগতার মতো দেয়ালে কিছু দৃষ্টিহীন চোখ,
সবদিক থেকে চেপে ধরে কুয়ার ভিতর,
বলে- ‘কথা বলো! কথা বলো!’
অথবা জ্বলে গিয়ে নিঃস্ব হও! কিবা আসে যায় কার!  
শরীরের স্নায়ুতে জমেছে বিষ, চামড়া উঠানো রাস্তায় বিষ,
মহাপ্রলয়ের সমান বিষম প্রাচীর,
আমাকে করে নিলো অবরুদ্ধ! জানি ওইপারে আছো তুমি!
দেয়াল তো করে নেবে গ্রাস পুরোটা আমাকে,
আর কতো সংকুচিত হবো আমি?
বিলুপ্ত মসলিনের মতো ক্রমবর্ধমান চাপে আরো ছোট হই,
আর কতো সংকুচিত হবো বলো!
আমারো তো আছে নিজস্ব নূন্যতম আণবিক ভর!
যাদুগ্রস্ত পুতুলের মতো নাড়াই হাত ও পা, করি ছটফট,
অনন্ত শূন্যের বাগানে বসে প্রাণ খুলে হেসে দিলো,
অলৌকিক যাদুকর!


(৫)
তারপরও আসছে উড়ে শূন্য থেকে,
আসছে ভেসে ভেসে লাল লাল পপি ফুল, নাকি লাল ইট?
একই লাগে সব!
দেয়ালেরা ভরের বাতাস,
ঘিরে নিচ্ছে সমস্ত আমিত্বকে, ঘিরে নিচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত
ধূমকেতু,
বায়বীয় হতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে হলাম মারণ বাতাস,
বিছানায় মাকড়ের মতো নেমে আসে নির্ঘুম ভয়!
পাঁচটি আদিম দেয়াল দখল নিবে নভোমন্ডল ও আজ,
ঘিরে আছে বিকেলের অবশেষে,
মাখনের মতো তৈলাক্ত শোক, একটা অতৃপ্তির সিন্দুক
হুট করে খুলে গেলে ডানা, কেউ কেউ হুহু করে কাঁদে,
আমিতো বন্দী চারিদিকে!
নিঃস্তব্ধতার পতঙ্গেরা হলুদ আলোয় বাড়াচ্ছে ঢেউ,
ভাবি দিব লাফ ফুটপাথ পোড়ানো জোছনার দিনে,
নীচে তো শূন্য সব!
মাঝপথে পুরে গেলে বিমানের ইঞ্জিন,
কজনই বা লাফ দিয়ে নীচে যেতে পারে?
অবরুদ্ধ দেয়ালের ইট পিগমি পদ্মের মতো দোদুল্যমান,
রডগুলো চলনবিলের কম্পমান হাওয়া খুঁটে খাওয়া
কাকতাড়ুয়ার মতো দন্ডায়মান,
এই বালু আর বিটুমিনে পৃথিবীর যুবতী বুকের গন্ধ,
নকশাময় মৃত হাতির দাঁতের মতো অক্ষরে তবুও তো
জন্ম নেয় ভয়,
যে পাখিটা উড়ে গেলো, ঝরে গেলো নির্ঝর হাওয়ায়,
যে পাখিটা উড়ে গেলো বিষাক্ত ফল নিয়ে ঠোঁটে,
স্বর্গোদ্যান ছুঁতে,
তার পালকের সমাধি কি খুঁজে পায় কেউ?