মেয়েটি হাঁটছে সোজা,চলছে শহর তার পাশে,
মেয়েটি ফুটপাতে হাটছে মায়াময় তালে!
একবুক যানজট বাজে আক্রান্ত রোগীর ঢঙে,
হাড় বের করা এই শহরের কষ্টের নিঃশ্বাসে।  
মেট্রো রেলের দাঁত ভাঙ্গা পিলারের ফাঁকে,  
তুলতুলে লাল কেডস উড়াচ্ছে বেহিসাবে ধুলা,
মেয়েটির হাতে লাল নীল ফুলময় ছাতা সোজা,  
টানটান ছায়ায় ঢেকেছে ছেলেটার মাথা!
রঙিন ছায়া দেয়া বনস্পতির মতো সামলায়,
ছেলেটাকে এই ভরদুপুরের ঝাঁজে!
মেয়েটির হাতে রাখা প্রিয় আদুরে ছাতাটা,
দুলছে বাতাসে মেয়েলী মনের মতো খেয়ালে।
দুজনে হাঁটছে দিবানিদ্রার আয়েশী মেজাজে,
ছেলেটার মুখ পাথরের মতো ভাবলেশহীন,
মেয়েটার ঠোঁটে হাসি ছুঁয়ে আছে এককোণ!
মিউজিয়ামের কোন দুর্লভ পোর্ট্রেট,
হঠাত মুক্তি পেলে হাটবে যেমন খেয়ালে,
তেমনি হাঁটছে তারা খুব দুর্বোধ্য ভঙ্গিতে।
পার হলো দুজন শপলা চত্বর, ওভারব্রিজ আর,
পার্কের মোড়!
গোলচত্বরের কেউই জানেনা কি খেলে গোপনে,
বদ্ধ ড্রয়ারে রাখা তাদের মনের ভিতর!
  
নীরব রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার গাছ বসেছে পাহারায়,
পোস্টারে লালে লাল রাস্তার দেওয়াল।
একজোড়া শালিক বসে আছে, ভিজে একসাড়া,
দেওয়ালে কালিতে আঁকা কাস্তের জোড়া।
ভেঙ্গেই গিয়েছে তারা ব্যর্থ বিপ্লবে!
ছেলে আর মেয়েটি হাঁটছেই ফুটপাতে,
মেঘেরা মেতেছে তাই হালকা বৃষ্টিতে!
বাঁচাতে পানির আঁচ মেয়েটির হাতে ছাতা,
পাখা মেলে ঢেকেছে ছেলেটির মাইনাস চশমাটা,
আদুরে হাতের মতো!


ছাত্রাবাসের ধারে সিগারেটের দোকানে,
জনতা সামলে চলা চাওয়ালা মালেক,
জীবনে এরকম দেখেছে অনেক!
কতোজন হেটে যায় বেশরম এই রাস্তায়,
দেখে দেখে নাকি চোখ তার এখন গিয়েছে পেকে,
তবুও সে চোখদুটো পারেনা সামলাতে।
চোখের পর্দা খুলে ছড়ায় অভদ্র হাসি বিরতিবিহীন,
তাদের দিকে! একটানা মেয়েটার দিকে!
ভাবে এ কেমন জামানা এলো এ বুড়ো বয়সে,
মেয়েরাও ধরে ছাতা অক্কর্মা ছেলেদের মাথাতে!
মেয়েটা শক্ত করে উড়ায় ছাতাটা,
না তাকিয়ে কোনদিকে ভাবলেশহীন,
পার হয়ে আসে বিশ্রী হাসির চায়ের আড্ডাটা!


ফুটপাথ ঘেঁষে পেশির টানে ছুটে রিকশার চাকা,
ঘাম চুয়ে ভিজে পিচের রাস্তাটা।
খুব জোরে বেল দেয় মোটামুটি অকারণে,
এলে কাছাকাছি! উড়ে যায় ফড়িঙেরা বুকভরা ভয়ে।
ছেলেটি পাশেই তার, ইচ্ছা করেই এড়াতে শিখেছে,  
রিকশয়ালার বারবার ফিরে দেখা, পানখাওয়া হাসি!
মেয়েটি নির্বিকার! পাথরের মতো হাঁটে,
নড়েনা এতেও তার চোখের পলক।
মনটাকে সম্ভবত স্থির রাখে জায়গামতো,
কঠিন অভ্যাসে!
শুধু দু একটা কৃষ্ণচূড়া ঝরা বাতাসের টানে,
নেমে আসে তাদের ছাতাটার আশেপাশে!


জীবন্ত কেঁচোর মতো একটা মিছিল এলো মাটি ফুড়ে,
গড়িয়ে রাস্তায় নামলো তারা স্লোগানের ঝড়ে-
রক্তের বন্যায় ভাসাবে অন্যায়!
কতগুলো মুখ, উষ্কখুষ্ক চুল, ছেঁড়া জিন্স-
ময়লা শার্ট ছিঁড়ে পাহাড়ের মত ভুঁড়ি সামনে বেড়িয়ে,
আদর্শ রাষ্ট্র জন্ম নেবে তাদের হাতেই!
এই ভেবে দাঁত চেপে হচ্ছিলো পার ধুলা ছড়িয়ে,
নিশ্বাসে চাপ লেগে রাজপথ করে হাঁসফাঁস।
অবচেতনে জমা ক্ষোভ নাকি হায়েনার চোখ,
কি জানি কি খেলে গেলো মিছিলের মাঝে,
স্লোগানের মুখস্থ বাণী ভুলে অকস্মাৎ,
জনা পঞ্চাশেক লোক তাকালো সেদিকে সোজা।
চোখের সামনেই এক অন্যায়ের সংজ্ঞা তাজা।
বলে তারা বিড়বিড়- “এ কেমন অনাচার!”,
“মধ্যদুপুরে কেন ছেলে মেয়ে হাঁটে একসাথে?”,
“ফুলের দোকানে বাড়ছেই কেন প্রেমিকের ভীড়?”
শক্ত মুষ্ঠিতে তারা কন্ঠ বাড়ায়- “শেষ হোক অন্যায়।“
“শেষ হয়ে যাক এই দেশে প্রেমিকের কাল!”
“চাই নতুন সকাল!”  
মেয়েটি শুনেছে সবই, তবু নির্বিকার হাঁটে কিছুক্ষণ,
তারপর বদলায় তার হাঁটার রেখাকে বিনা নোটিশে!
ছাতাটা সরিয়ে ফেলে এক লহমার ঝটকায়,
দৃড় বাঘিনীর মতো হাতে নিয়ে ছেলেটির হাত,
আড়াআড়ি পার হয়ে যায় মিছিলের সম্মুখ ভাগ!
থমকায় জনস্রোত, থেমে যায় রোদ!
ঝরা পলাশেরা বলে- তবু প্রেম জয়ী হোক!