আজো মৃত ঘোড়াগুলি কি ভীষণ ভাবে জীবিত!
মরে যাওয়া চাঁদটির আলো তাদেরকে ছুঁয়ে দিল,
কটু গন্ধের ড্রেন রাত্রি ছায়ায় আজো ঠিক বয়ে যায়,
ছিঁড়ে যাওয়া নদীদের নিয়ে পাঁজরের খাপের ভিতর!
মৃত ঘোড়াগুলি আজো বেঁচে থাকে তার জলের ছায়ায়,
কি অদ্ভুত ভাবে বেঁচে যায় তারা!
তাদের অশ্রুত শব্দের খুরে পল্লবিত বৃক্ষদের শব,
প্রাচীন বিদ্রোহে মৃত হয়ে জীবিতর স্বপ্ন দেখে তবু,
অভব্য নিয়তি মানেনা কখনো তারা; অর্বাচীণ বটে!


সেই মৃত ঘোড়াগুলি আজো টেনে চলে ক্ষয়িষ্ণু ফিটন,
ছাদটাও ঝরে গেছে বালুঝড়ে ফসিল পাহাড়ে-
বৃত্তাকার চাকাগুলো একটানা হাসে পাগলের মতোন!
তাই দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসে খুব নাগরিক আলো!
এখনো রাস্তায় মৃত ঘোড়াগুলি খোলা লাগামেই বসে থাকে,
সারি সারি কফিনের মতো! জিনগুলো আজো অব্যবহৃত!
নক্ষত্রমন্ডল থেকে ভেসে আসা আলো বাঁচায়না তাদের আর,
তবু তারা বেঁচে যায়! কি অদ্ভুত ভাবে তারা আজো জীবিত!


মৃত ঘোড়াগুলি যদি বেঁচে যায় সুনসান অন্ধকারে,
খুব একা ফাঁকা মাঠে, পৈশাচিক ভয় শূন্যতাকে করে জয়!
রিক্তের হাহাকার এ শহরের সমাবেশে আনলে কষ্টের ঝড়,
পিচের রাস্তায় পাথরের মন ঠনঠন করে বেজে উঠে-
মৃত ঘোড়াদের খুরের আঘাতে! তখন আগুনের নীলে-  
আমি জেগে থাকি তোমার অপেক্ষায়, প্রেমিকা আমার!
ভাবি অশ্বারোহী হব গভীর রাতের!
মৃত ঘোড়াদের পিঠে চেপে, রাতটাকে খানখান কেটে দিব,
অশ্রুলীনা! শুধু তোমার আশায়!


কালের আলোয় মৃত ঘোড়াগুলি আজো কি ভয়ানক ভাবে-
জীবিত!
নিয়ে অস্থিচর্মসার দেহ, ভেঙ্গে পড়া পায়ের খুঁটিতে ঘুণ!
পুরাতন পিলারের মতো দেহগুলি খসে খসে পড়ে নিমিষেই,
তবু তারা বেঁচে থাকে মরে যাওয়া ঘাস খেয়ে, আগুনছায়ায়!
শক্ত ফসিলের ঘাস আহ্লাদ করে চাবায় প্রায়ই!
চোখের কুটিরে হারানো রত্নের মতো চুপ করে ডুবে থাকে-
পুরাকালে মরে যাওয়া গ্রহদের দানে চোখ গুলো আজো উজ্জ্বল!
তাই নিয়ে বেঁচে থাকে তারা মৃত্যুর বহুকাল পর!
মাঝে মাঝে চোখগুলি জ্বলে উঠে মিটিমিটি হারানো অন্ধকারে,
তাই দেখে আশা নিয়ে আমরাও বলি, প্রিয় তুমি তো আমার!
যদিও সে কথা পৃথিবীর পাতায় আপাত সত্য নয়,
তবু তার অস্বীকার তোমার আমার কাছে পরম অন্যায়!
তাই মৃত ঘোড়াগুলি হঠাত জীবিত হলে মহানগরীর রাস্তায়,
আমি বলে বসি- “ভালোবাসি তোমায়”


সারি ধরে সাজানো গাছের কৃত্তিম বাজারে,
হয়তো বাঁচতেই চায় প্রকৃত কিছু গাছ জীবিতের মতো!
জন্ম হলেও তার নাগরিক ভাগাড়ে, আশা রাখে অরণ্য বিলাসে!
ঠিক পাশাপাশি আস্তাবলে অস্তাচলে মৃত ঘোড়াগুলি থাকে,
অস্থিচর্মসার, চামড়ায় হাড়!
সবকিছু মেনে নিয়ে দাঁড়ায় হঠাত! বলে বাঁচব আবার!
আমিও তেমনি তোমার হাতের গভীরে রেখে হাত,
সরিয়ে রাশি রাশি সামাজিক জঞ্জাল, বলবো তবুও ভালোবাসি!


তবু মৃত ঘোড়াগুলি বেঁচে যাবে, যেমন বেঁচেছে বহুদিন আগে,
ফিনীশীয়, গ্রীস, রোম অথবা আরো কোন দুর্গম কালে!
আবার তাদের সদম্ভ গর্ব ভাঙ্গবে সময়ের ঘুমন্ত অস্তিত্ব,
পৃথিবীর গভীরতম রাতে একমাত্র শব্দ রূপে তাদের খুরের ধ্বনি-
শোনা যাবে, কান পাতলেই!
তেমন সময় আসবে বলেই, ঘোড়াগুলি বাঁচতে চায় আজ- আবার!
তাদের দেখে আমরাও বলি “তোমাকেই ভালোবেসে যাব বারবার”


মৃত ঘোড়াগুলি কি ভীষণ ভাবে জীবিত!
তাদের গাড়ি গুলি গিয়েছে ভেঙ্গে; খসে পড়েছে দরোজার পাল্লা-
প্রতিটি পর্দা খসে গলে যায়!
ফিটন গাড়ির ছাদ বৃষ্টির জল হয়ে খসে গলে পড়ে,
আমাদের মতো যাত্রীর মাথায়, ভিজে যায় এলোমেলো চুল!
ভয়ে নেমে যায় অন্যভস্ত সবাই, কি ভুতুড়ে ব্যাপার!
শুধু তুমি আমি বসে থাকি মৃদু হেসে হাতে রেখে হাত,
তবু মৃত ঘোড়াগুলি বাঁচতে চায় আবার!