(১)
একটি সোনালী হরিণী লেজার রশ্মির মতো,
তীব্র গতিশীল! পাক খেতে খেতে-
দুম করে ঢুকে গেলো ওই গলিপথে।
ওইটাকে চাইই চাই! সকালের নাস্তা সঞ্চিত-
করে নিয়ে যকৃতে,
টানা লাটিমের মতো বনবন করে ঘুরছি তো!
কোথায় হরিণী? কোথায় কস্তুরী?
এতো অনিঃশেষ পথ গলি থেকে গলি-
উঠোন ছাড়িয়ে আবার উঠোন! জড়িয়ে আছে-
সব পিপড়ের আস্তানার মতোন জটিল ধাঁধাতে!
মোড়ে মোড়ে পাহারায় সশস্ত্র দ্বারপাল,
কোলে অটোমেটিক রাইফেল,
সামলাচ্ছে সিস্টেম! ওরা আসলে নিরীহ!
সবাই বন্দী ফাঁদে, তুমি-আমি, রাজা-রাণি এবং-
গোলাম! অবুঝ শিশুরা এখনো কিছুটা মানুষ,  
দশবার হেসে, তারা নবার ভ্যংচালো!
এখানে যায়না থামা,
নিষিদ্ধ বিশ্রাম; শোন সামনে সোনালী হরিণী-
ছিলোনা কখনো!
এখন জীবন মানে কুকুরের কনিষ্ঠ সন্তানের,
মতো অকারণে দৌড়ানো,
যতোই চাইবে তুমি দৃষ্টিবিভ্রমে সরে যাবে,
কাঙ্ক্ষিত শাল দুধ!


(২)
আমি কি যত্নে টাইপ করা এক পরিচয় পত্র?
নাকি ঢাউস ফাইলে পরতে পরতে জমা,
কেরানীর আয়ব্যায়ের হিসাব;
শামুকের শরীরে শিল্পিত মহৎ আমলাতন্ত্র!  
প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে, কখন যে বুঝিনা,
একটা পরিচয় পত্র বনে যাই,
একটা শক্ত ফাইলে ডুবে যাই! বুঝেই উঠিনা!
ফাইলেরা পাহাড়ের মতো উঁচু হচ্ছেই,
নীচে কোন টেকটোনিক প্লেট গুঁতো দিলো,
প্রচন্ড ভারে সবাই যাচ্ছে অনেক গভীরে,
আমার মতোই সবাই যাচ্ছে ডুবে ধীরে ধীরে!
সামনের মেদওয়ালা বস; কোমড় দুলিয়ে হাঁটা-
নারী, জাতিপুঞ্জের প্রশাসক,
সবাই হয়ে আছে ডিজিটাল ডকুমেন্ট!
সাক্ষ্য দিচ্ছে ছেঁড়া জন্মসনদ, সচল পাসপোর্ট!  
কখন যে অরণ্য বিলুপ্ত হয়ে দেয়ালচিত্র হলো,
পাখিদের ডাক এলার্ম হয়ে ঢুকলো সেলফোনে!
চাঁদনি রাত এখন স্রেফ ডেস্কটপের ব্যাকগ্রাউন্ড,
টেরই তো পাইনি!
আমরাও তো চলন্ত ডকুমেণ্ট, হাঁটা থামালেই,
দেখাচ্ছে ভয় আমেরিকান ফক্সহাউন্ড!


(৩)
একটা ছোট্ট দিনে কতোবার নেই রূপান্তর,
মানুষের বানানো নিয়মে পোষায়না খরচ,
শুড়ওয়ালা তেলাপোকার মতো উঁকি দেই,
সন্তর্পণে পাশের ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে!
ভুলে উন্মুক্ত হলে মোমের মতো মসৃণ কাঁধ,
সুডৌল হাত! দেখি নাকি চুপিসারে?  
মানুষের মতো নয় পতঙ্গের মতো আড়চোখে,
খেয়াল রাখি পাশের টেবিলে,
সব কিছু, উন্মুক্ত চুল, চোখ, আরো মাপজোক,
ঘাপটি মেরে দেখে নেই! কতবার ভুলে যাই-
আমিও তো ছিলাম মানুষ!
আদিম শরীরে শুধু জমে আছে ক্ষুধা আর লোভ,
একটা বাফেট পেলে খেয়ে নিব সকলের ভাগ,
ক্ষুধা ছাড়া কিছু নেই; বাকী সব উচ্ছন্নে যাক!  
অন্ধকারে গর্তে ঢুকে নিষিদ্ধ কল্পনাতে গোসল,
তবু দিনের শেষে চলে যায় সব!
প্রেম নেই, মায়া নেই! সবাই হিসাবী স্বার্থপর!
আমিতো ক্রমশ যাচ্ছি ডুবে অন্ধ সুড়ঙ্গের ভিতর,
আলো নেই; বাসী ছত্রাকের গন্ধ স্যাঁতস্যাঁতে,
পতঙ্গের মতো মরে যেতে যেতে তবু মনে হয়,
জন্মকালে আমিও তো ছিলাম মানুষ!